জামাত-শিবির দূরে গিয়া মর!
দিকভ্রান্ত ফটিক ভাই আগষ্টের ২২ তারিখে তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী নিশির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। আরও কয়েকজন ব্লগারের সাথে সাথে এই নগন্য হেক্টর এরও সৌভাগ্য (পড়ুন দূর্ভাগ্য) হয়েছিল বরযাত্রীতে যাবার। তাই পোষ্টের শুরুতেই নতুন দম্পতির জন্য শুভকামনা রইল।
শুরুর আগেঃ শুরুটা দুই বছর আগে। দিকভ্রান্ত পথিক ভাই ফেসবুকে পরিচিত হন নিশি ভাবীর (আমাদের ভাবী, ফটিকের না) সাথে।
পরিচয় থেকেই পরিনয়। শেষ পরিনতি বিয়ে।
ঘটকঃ লাভ ম্যারেজ হলেও প্রথাগত ভাবে ঘটক তো লাগবেই। শেষ মেষ অপু তানভীর ভাইকে ঘটকের দায়িত্ব দেয়া হয়। যদিও ব্লগবাসী ভেবেই রেখেছিল কদিন পর হয়ত পোষ্ট আসবে, ""দিকভ্রান্ত ফটিকের হবু বউয়ের সাথে আমার হতে হতে না হওয়া প্রেমের গল্প।
"
কারন আমাদের অপু ভাই তো এমনই। মরার পর ব্লগিংয়ের সুযোগ থাকলে ব্লগে যে অপু ভাই আর জাহান্নামের মহিলা গার্ডের টসটসে প্রেমের গল্প পাওয়া যেত এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। যাই হোক অপু ভাই ইদানিং বটবৃক্ষের ছায়ায় এসেছেন, তাই ফটিক বেচে গেছে।
দাওয়াতঃ দাওয়াত দিতে ফটিক কিপ্টামি করে নাই। তার আত্মীয় স্বজন ছাড়াও ব্লগের অনেককেই দাওয়াত দিয়েছিলেন।
মডু শরৎ ভাইকে দাওয়াত দিলেও তিনি সব সময় অন্যমনস্ক থাকেন বিধায় বরযাত্রীতে যাবার তারিখ ভুলে গিয়েছিলেন। তবে ব্লগের অনেকেই সানন্দে রাজী হয়ে গেল। তামীম ইবনে আমানকে ইনভাইট করলেও সে আসেনি, নতুন ট্যাক্সি কিনে ট্যাক্সি ড্রাইভার হয়ে গেছে। বলাবাহুল্য ট্যাক্সিটাকেও রিপেইন্ট করে কমলা রং করে নিয়েছে।
আমি প্রথমে যেতে চাইনি, কারন আমার মত হ্যান্চাম পোলা বিয়ে বাড়ীতে গেলে আমার রুপের আগুনে সবকিছু ঝলসে যাবে।
তবে ফটিক ভাই যখন প্রমিস করলেন অপি আক্তারও সাথে যাবে, তখন আমি না গিয়ে কি পারি?
বরযাত্রীঃ ফটিক ভাই বিয়ে করছেন চট্টগ্রামে। তাই ভোরের দিকেই রওয়ানা হয়ে গেলাম। একটা বাস, দুইটা মাইক্রোবাস, একটা প্রাইভেট কার আর কতগুলা মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম। বলা বাহুল্য আমরা সকল ব্লগারই একটা বাস দখল করে যাচ্ছি। শুধু মুশাসি ভাই বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন।
কদিন আগে তিনি হেব্বি বাইক চালানো শিখেছেন। এত্ত রিকোয়েষ্ট করার পরও তিনি বাসে আসলেন না। লতা হারবাল মডেল নিপুন আপু আর পারসোনা ষ্টার মিরাজ আপু পাশাপাশি বসেছেন, যদিও মেঘ রৌদ্দুর আপু কোথায় বসবেন ঠিক করতে পারছেন না, শেষ মেষ তিনি বাসের ছাদে গিয়ে বসলেন। রিমন রনবীর যেতে চায়নি, তবে তাকে চট্টগ্রামের মুলিবাশের বাগান দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাথে নেয়া হয়েছে।
আমার জন্য খারাপ খবরঃ অপি আক্তারের জন্যই আমি যাচ্ছি, কিন্তু অপি আসে নাই।
শুধু অপি না আন্ডার টুয়েন্টি কোন সিঙ্গেল মেয়েই আসে নাই। আরজু পনি আর তাসাবি নুভা আপু সবাইকে মেসেজ দিয়েছেন যে "প্রিন্স হেক্টরও যাচ্ছে", ফলাফল ফুলের বাগান ফুলশূন্য।
সিটবেল্টঃ বাসে আমার পাশে বসেছেন বিখ্যাত কবি পরিবেশ বন্ধু। আমি অনীনদিতা আপুর পাশে বসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু রহস্যময়ী কন্যা সে জায়গা আগেই দখল করে নিয়েছে।
গাড়ী চলছেঃ আমি একটু ঘুমকাতুর।
তাই বাস চলতে শুরু করার সাথেই ঘুমে চোখ ভারী হয়ে এল। একটু ঘুম ঘুম ভাব এসে গেছে, এমন সময় পাশে বসা পরিবেশ বন্ধু আমাকে ডেকে উঠালেন।
♦ হেক্টু, ঘর্ষনের সাথে মিলিয়ে একটা শব্দ বলত, কবিতার জন্য অন্তমিল খুব জরুরী।
♦ ঘর্ষনের সাথে কি মিলবে..... হুম পেয়েছি ধ**
♦ থামো থামো। আমার মনে হয় পেয়েছি... বর্ষন হলে কেমন হয়?
♦ ভালৈ তো, খ্রাপ্না।
আমি আবার ঘুমাতে চেষ্টা করছি। আর কবি তার নতুন কবিতা আউরে যাচ্ছেন...
"চলছি পথে, যাচ্ছে গাড়ী
চাকায় রাস্তায় ঘর্ষন,
অলির বিয়েতে আকাশ খুশি
ঝড়েছে শ্রাবনের বর্ষন"
মডু সাবধান.... মডু সাবধান.....
একটু পর আবার ঘুম ভাঙল, তবে কবির জন্য না, অলির জন্য। প্রাইভেট কার দাড় করিয়ে পিপি করতে নেমেছে। ইটস ন্যাচারাল.. বিয়ের টেনশনে মানুষের কত কিছুই না হয়; আর অলিতো খালি পিপি করছে। স্বাভাবিক।
আবার ঘুমাতে যাব এমন সময় পরিবেশ বন্ধু আবার টেনে তুললেন..
♣ লাক এর সাথে মিলিয়ে একটা শব্দ বলতো, কবিতার জন্য অন্তমিল খুব জরুরী।
♣ মাথায় তো কিছু আসছে না.. পেয়েছি ফা..
♣থামো থামো। তুমি খুবই অচলীল। আমিই পেয়েছি...
"অলির সাথে নিশির বিয়ে
দুজনকেই গুড লাক
তোমাদের বিয়েতে পরিবেশ খুশি
খুশি পাখির ঝাক। "
মডু সাবধান.... মডু সাবধান.....
----------------------------------------------------------------------
এবার ঘুম ভাঙল।
নাহ.. কোন অঘটন না.. সরাসরি বিয়েবাড়ি চলে এসেছি। বেশ লম্বা ঘুমই দিয়েছি। আসলে আমার কাছ থেকে কবিতার শব্দ ধার করা আর ড্যানিয়েল ওয়েবারের কাছ থেকে মঞ্চ অভিনয় আশা করা সমান কথা, এটা বুঝতে পেরে তিনি আর আমাকে ঘাটাননি।
আমি দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম.. অলির পাশে থাকতে হবে.. অলির শ্যালিকাদের পটাতে হবে
আমাকে দেখে গাড়ীর ভেতর থেকেই অলি ডাক দিল, "ঐ হেক্টু..."
◘ কি হইছে অলি ভাই?
◘ রুমাল আছে?
◘ কেন?
◘ আমি রুমাল আনতে ভুলে গেছি.. মুখে রুমাল দিতে হবে তো...
◘ ধুর মিয়া, সেই দিন কি আর আছে? দিন বদলাইছে না?
◘ আরে ভাই বুঝস না কিল্লাই, দাড়ি কাটতে গিয়া গাল কাইটা গেছে
◘ রুমাল নাই.. তয় টিস্যু আছে... এই নেন..
◘ ইয়াক! এইটা তো টয়লেট টিস্যু.. ফেসিয়াল টিস্যু নাই?
◘ এইটাই আছে.. এইটা তো ভাল.. বিদেশী টিস্যু.. আমার ফুপা লন্ডন থেইকা আনছে
◘ সাদা হইলেও না হয় এ্যাডজাষ্ট করা যাইতো.. কিন্তু এইটাতো গোলাপী টিস্যু
এমন অবস্থায় অলি কে বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন হিমু নিয়েল ভাই। তাকে হলুদ রংয়ের একটা রুমাল দিলেন।
(আমার মুন খ্রাপ হয়ে গেল.. গুলাবী টিস্যু নেয়া যায় না কিন্তু হলুদ রুমাল নেয়া যায়??)
গেট এর ঝামেলা টামেলা শেষ করে আম্রা ষ্টেজে উঠে পড়লাম। আমি অলির পাশে.. খাওন-দাওন খাইতে এক ধাপ এগিয়ে।
এমন সময় নিশির মামা এসে পরিবেশ গরম করে দিলেন..
♠ এই বিয়া হৈবো না... তোরা সব ব্লগ দিয়া ইন্টারনেট চালাস.. তোরা নাস্তিক.. তোদের লগে আমার ভাগ্নি নাশপাতি বানুর বিয়া দিমু না..
♠ পরিবেশ বন্ধু এক গাল হেসে বললেন,
"জনাব আপনি করছেন ভুল
আপনি মিয়া মহা আবুল
নাশপাতি ইস্যু রাখেন হাতে
বিয়ে হচ্ছে নিশির সাথে"
মডু সাবধান... মডু সাবধান.....
♠ রাখেন মিয়া... নিশির নামই নাশপাতি বানু। আর আমার লগে চুদুরবুদুর করবেন না, এইটা কিন্তু চট্টগ্রাম.. আর আমি হেফাজতে ইসলামীর নেতা।
/*আসলে নিশির ভাল নাম নাশপাতি বানু.. এই নাম নিশির(পড়ুন নাশপাতি) দাদী রেখেছিলেন।
আসলে পুরোন জমানার মানুষ তো, ডিজ্যুস জমানায় চলতে হলে নাম বদলে নিতে হয়। */
এই পর্যায়ে হিমু ভাই লাফিয়ে উঠলেন, "তুই ছাগু! তোর ভাগ্নির লাগে আমার ভাইরে বিয়া দিমু না"
আমরা ভগ্ন হৃদয়ে ভুখা পেটে বাসে করে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এক কিলোমিটার এগোনোর পরই দেখি রাস্তায় গাছ ফেলে ব্লক করা। আর এলাকার মানুষ লাঠিসোটা হাতে দাড়িয়ে আছে।
/*আসলে হিমু ভাই ঐভাবে বলায় কনেবাড়ির সবাই অপমানিত হয়েছেন।
আর কোন পরিবারই চায়না তাদের মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাক। তাই শেষ মেষ কনের মামাকে বকাঝকা করে বরযাত্রী ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ দেয়া হয়। */
কনের মামা যেহেতু হেফাজতে ইসলামীর নেতা, তাই তিনি মসজিদের মাইক থেকে ঘোষনা দিলেন, "প্রিয় গ্রামবাসী, আমাদের এলাকার অপমান হতে দেবেন না, সবাই বরযাত্রী আটকান। এইমাত্র বাবুনগরীকে চাদে দেখা গেছে, তিনি গায়েবী ইশারায় বরযাত্রী আটকাতে বলছেন। ইসলাম রক্ষায় এগিয়ে আসুন"
শেষ মেষ বিয়ে ভালমতই সম্পন্ন হল।
এর পরের পর্বঃ দিকভ্রান্ত পথিকের বাসর রাত....
(ব্যান না খেলে) চলবে.....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।