আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

The Return - 2003

mail.aronno@gmail.com

জীবনে প্রথমবার ছবি বিষয়ে লিখি ইগোস্লাভিয়ান ছবি ”স্কাপলজাসি পেরজা” নিয়ে। এরপর আর সেভাবে ছবি দেখা হয়ে উঠেনি, কিন্তু ডাউনলোড করা থামাইনি। প্রায় পাঁচশত ছবি ডাউনলোড করার পর দেখলাম খুব কম ছবি আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করতে পেরেছে, আর যেগুলো পেরেছে সেগুলো নিয়ে লেখার একটা চাপা উত্তেজনা কিছুতেই দমাতে পারিনি। একটা ভাল ছবি আমার কাছে একটা কালোত্তীর্ণ দলিল, যেটা যেকোন কালে মানুষকে খুব সহজেই পারে আকর্ষিত করতে। শেষ যে দুটো ছবিটা দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছি তার একটা হল জন ফোর্ডের ”হাই গ্রীন ওয়াজ মাই ভ্যালী”, অপরটা রবার্টো বেনিগনির ”লাইফ ইজ বিউটিফুল”।

কিন্তু ছবি দু’টো নিয়ে লিখব লিখব করেও আর লেখা হয়ে ওঠেনি, অথচ আজকে যে ছবিটার জন্য পুনরায় বাধ্য হলাম লিখতে সে ছবিটা হল ”দি রিটার্ন”। ক’দিন আগে আমার এক পরিচিত বড় ভাই আমাকে কিছু ছবির লিষ্ট দিয়ে বলল ছবিগুলো ডাউনলোড করতে, মানে উনার চাই। এদিকে আমার আরেকবন্ধু ধরিয়ে দিয়েছে প্রায় শ’দুয়েক ছবির একটা লিষ্ট। সবগুলো মিলিয়ে প্রায় আড়াইশত ছবি, কখন ডাউনলোড করি, আর কিভাবেই বা করি। বেশ বিরক্ত হয়ে মনে মনে যখন ঠিক করলাম, না, আর ছবি ডাউনলোড নয়, ঢের হয়েছে, ঠিক তখুনি পরশু রাতে ল্যাপটপের চৌদ্দ ইঞ্চি স্ক্রীনে রাত প্রায় একটা পর্যন্ত স্তব্ধ হয়ে যা দেখলাম তা ছিল ”দি রিটার্ন”।

খুব কম ছবিই যেন এভাবে আরম্ভ হয়, অন্তত আমার দেখা ছবিগুলোর মধ্যে তেমন কোন ছবির নাম আপাতত মনে করতে পারছিনা। ছবিটার শুরুটা অনেকটাই যেন কাফকার গল্পের মত, এমনভাবে শুরু যে পাঠক প্রথমে ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে যায়, তারপর ধীরে ধীরে ঢুকতে বাধ্য হয় গভীর থেকে গভীরে। রাশিয়ানদের আমি বরাবর ঈর্ষা করি, আর ছবিটা দেখা শেষ হবার পর সেটা এখনও রয়েছে দেখে স্বস্তি পেলাম। ২০০৩-এ মুক্তি পাওয়া ’আন্দ্রেই জিভাজিন্টসেভ’ এর নিদের্শনায় তৈরী ১০৫ মিনিটের এই রাশিয়ান ছবিটি ছবিপ্রেমি মাত্রকেই নিশ্চিতভাবে বসিয়ে রাখবে স্ক্রীনের সামনে। দু’জন কাছাকাছি বয়সের বালকের মানসিকতাকে সেলুলয়েডে যে এভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় তা ছবিটা না দেখলে বোঝা যাবেনা।

ছবিটার শুরু এভাবে, কাছাকাছি বয়সের দু’ভাই দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাড়ি এসে মায়ের কাছে জানতে পারে যে তাদের বাবা এসেছে। ব্যাপারটা জানার পর তারা এতটা তাজ্জব হয় যে প্রায় বিশ্বাস করতে পারেনা। ১২ বছর যে বাবার কোন খবর নেই হঠাৎ এতবছর পর আকস্মিকভাবে তার উপস্থিত হওয়ার ঘটনা বড় ভাইয়ের মনে তেমন একটা প্রতিক্রিয়া তৈরী না করলেও ছোট ভাইয়ের মনে যে মানসিক প্রতিক্রিয়া, সন্দেহ, তা থেকে সৃষ্ট নানাবিধ প্রশ্ন এবং আত্নদ্বন্দ্বের যে সেলুলয়েড চিত্রায়ণ তাতে ছবিটা এখনও আই.এম.ডি.বি রেটিং-এ ৮.১ ধরে আছে, যা কিনা আমার কাছে কোনরুপ সংশয় ছাড়াই ১০ এবং তা দশের মধ্যেই। একটা কেমন জানি ঘোর ও রহস্য তৈরী করে ছবিটা। কাহিনী বিন্যাসটাও যেনবা সেভাবেই করা, বিশেষ করে ১২ বছর পরে ফিরে আসা একজন পিতার তার সন্তানদের সাথে কৃত আচরণ দর্শকের মনে অবশ্যম্ভাবীরুপে প্রশ্ন তৈরী করে আর দর্শক সেটা জানার জন্য বাধ্য হয় ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।

১২ বছর পর নিজ সন্তানের কাছে ফিরে আসা পিতা নিশ্চয় চাইবে তাদের সন্তানের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিতে, এত বছরে তৈরী হওয়া বিশাল দূরত্বটা কমিয়ে আনতে। অথচ সম্পূর্ণ উল্টো চরিত্রের এই পিতাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতেই দর্শক উদগ্রীব হয় এবং নিজের অজান্তেই এগিয়ে যেতে থাকে সামনের দিকে। পুরো ছবি দেখতে দেখতে আমার এতটুকু ক্লান্তি আসেনি বরং অনেকদিন পর চিত্রনাট্য, নির্দেশনা, অভিনয় সব মিলিয়ে একটা সেন্ট পার্সেন্ট ভাল ছবি দেখার মুগ্ধতায় বসে থাকতে থাকতে যখন শেষ ১৫ মিনিটে উপস্থিত হলাম, তখন আর কোন কিছু ভাবার বিন্দুমাত্র অবকাশ ছিলনা। ছবিটার শেষ ১৫ মিনিটে কি হয়েছে আমি তা বলতে চাইছিনা, তবে যারা দেখবেন তারা বহুদিন পর্যন্ত এই ছবিটার শেষটা ভুলতে পারবেনা। পুরো ছবিটার মোড় যে এমন অভাবনীয় আকস্মিকতায় ঘুরে যাবে সেটা বুঝে ওঠার আগেই পরিচালক এরপর একের পর এক যেসব দৃশ্যর অবতারণা করেছেন শেষ ১৫ মিনিটে, তাতে দর্শক মাত্রই এমন একটা বোধের মধ্যে ঢুকে যাবে যে যেখানে শব্দ নেই কোন, শুধু স্থির হয়ে থাকা জল আর জল।

বার্গম্যানের ছবিগুলোর অধিকাংশেই দেখেছি জলের উপস্থিতি। দেখেছি তারকোভস্কির ছবিতেও। উনার ছবিতেতো জল এবং তার শব্দ একটা বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। এছাড়া রাশিয়ান অন্যান্য ছবিতেও সেই একি ব্যাপার। তবে এই ছবিটাতে জলকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে আমার বার বার মনে হয়েছে পৃথিবীর সব ছবিই এভাবে জলের কাছে তৈরী করা উচিত।

আর ক্যামেরার কাজ যদি কেউ নিখুঁতভাবে লক্ষ্য করেন, তবে দেখবেন কত দক্ষতার সাথে একটা সামান্য দৃশ্যকেও চিত্রায়ন করা হয়েছে। এসবই আমার ব্যক্তিগত পছন্দ ও মতামত। আপনারা যারা ছবিটি সম্পর্কে তথ্য চান তারা এখানে পাবেন আর যারা টরেন্ট ডাউনলোড করতে চান, তারা পাবেন এখানে । ভাল থাকুন, ভাল লিখুন আর ভাল ভাল ছবি দেখুন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।