আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!
গতকাল অফিস থেকে বের হলাম সন্ধ্যা৭:৩০ টা নাগাদ। কাজ তেমন ছিলো না, দু'তিনটা ডিপার্টমেন্টের রিকোয়ারমেন্ট, একটা প্রেজেন্টেশন বানানো, বসের কিছু আইডিয়া এইখানে ইনক্লুড, এক কলিগের একটা পুরা প্রোপোজালে হেল্প, আর নিজের হাতে পেন্ডিং দুটো প্রেজেন্টেশন রিভিশন। যাই হোউক, কাজ নাই তো খই ভাজো টাইপ অবস্হা নিয়া শুভ্রকে ফুন দিলাম।
: কি করো?
: আর কইয়ো না, এমএস প্রোজেক্টে সিডিউলিং করলাম।
আজকা আমার দম ফেলানোর সময় নাই।
: তা চেয়ারে বইসা কি ফেলাইলা? (ভালগার ইঙ্গিত দিলাম)
: তুমি বাইর হইবা কখন?
: অখন।
: চলনা একসাথে যাই!
: লও যাই।
এইটা বইলা বাইর হইলাম। কোম্পানীর গাড়ীতে চড়নের জন্য টিকিট কাটার প্রয়োজন, আমি কাটছিও, কোম্পানী অলরেডী টাকাও কাইটা ফেলছে, কিন্তু নিজের ব্যাস্ততা আর অফিস এ্যসিস্ট্যান্ট এর জরুরী দৌড়ানির কারণে টিকিট অখনো আনি নাই, আমার গাড়িতে চড়াও হবে না।
অম্লান বদনে রিক্সা নিলাম, গেলাম গুলশান ১। দুপুরের লান্ঞ্চের সময় আমি লান্ঞ্চ করছি নাকি চেয়ারে বইসা ডুগডুগি বাজাইছি মনে করতে না পাইরা মালন্ঞ্চতে ঢুইকা একটা চিকেন ফ্রাইতে কামুড় দিয়া ফ্রেন্ঞ্চ ফ্রাইএর প্যাকেট হাতে নিয়া হাটা ধরলাম তিতুমীর কলেজের দিকে। জীম যেহেতু করি না তাই ৩-৪ মাইল হাটা এখন ব্যাপার না। হাটতে হাটতে শুভ্ররে আবার ফুন।
: ঐ মিয়া তুমি কৈ?
: আমি তো কেবল সিটিসেল অফিসের সামনে।
তুমি কৈ?
: কেবল তুমি চিটিংসেলে! আর আমি তো তিতুমীর কলেজের সামনে দাড়াইয়া ব্রাক ইউনির পাখী গুনতাছি।
: এত তাড়াতাড়ি আইলা কেমনে?
: পদব্রজে।
এই বইলা ফুনটা কাইটা ডাইনে চাইয়া দেখলাম আমি আসলে গুলশান ১ এর টিএন্ডটি অফিসের সামনে। যাই হোউক, শুভ্র দৌড়ের উপর থাকুক, আমি হাটতে হাটতে ফ্রেন্ঞ্চ ফ্রাই খাই।
তিতুমীরের সামনে একুশের কাউন্টারে যাইতেই দেখি শুভ্র হাসতাছে আমারে দেইখা।
: মিয়া চাপাবাজী ভালই পারো। আমি তো দৌড় দিলাম তুমি আইসা পড়ছো দেইখা।
: আরে না, আইছি তো মেলা আগেই। একটু ওদিক ঘুরতেছিলাম পাখীর খোজে!
এমুন সময় দেখি ৫' ৩" ইন্ঞ্চির মডেল ফিগারের নীলা শর্ট কামিস পড়া ফরসা একটা মাইয়া, দেইখা মনে হইলো বলিউডের আইটেম সং এর নায়িকা, শুভ্র দিলো খুচা। আমি কইলাম," কন্ট্রোল।
কোন গাড়ীতে উঠে ঐটা দেখ!"
দেখলাম বেঙ্গলের টিকিট কাটলো। সে কাটার সাথে সাথে শুভ্র একুশের টিকিট ফেরত দিয়া বেঙ্গলের দুইটা কাটলো। উঠলাম এক ভীড়ের বাসে, বসলাম ঐ মাইয়ার পাশের সীটে মহাখালীতে আইতেই। শুভ্রর দেখি চোখ পড়ে না। শুভ্র খালি কিছুক্ষন পর আফসোস কইরা কয়," রনি, কবে সুইডেন যামু?"
উল্লেখ্য শুভ্র অলরেডী সুইডেনের জন্য এ্যাপ্লাই করে ফেলেছে ভিএফএস এ।
ভালো একটা ইউনিতে চান্স পেয়েছে।
আমি কইলাম," কন্ট্রোল। "
মাইয়া দেখি মিরপুর ২ নম্বরের স্টেডিয়ামের ঐখানে নামলো। শুভ্র আফসোস করলো," এই মাইয়াটারে তিন চারদিন আগে বেঙ্গলে দেখলাম একটা মেরুন ড্রেস পইড়া হাতে একটা বড় কাটার ঘড়ি। কানে আজকার মতো সারাক্ষণ মোবাইল ধইরা আছিলো।
ওরে দেখতে সেইরকম লাগছিলো। একটু ব্যাবস্হা কইরা দাও না!"
: আমার নিজেরই কপাল ফাটা, আমারে এইটা নিয়া বইলা লাভ নাই।
যাই হোউক, শুভ্র মিরপুর ১ এ নাইমা গেলো। যদিও গাড়িটার কথা ছিলো দিয়াবাড়ী, কিন্তু শেষ ট্রিপ হওয়ায় এটা যাবে বেড়ীবাধের ডিপোতে। আমি ভাবলাম ওখানেই নামি।
হঠাৎ পকেটে হাত দিতেই বুকটা ধুক করে উঠলো। পকেটের মোবাইলটা নাই। আমার মাথা চক্কর দিলো। গাড়ী চলন্ত অবস্হায় খোজা শুরু করলাম মোবাইলটা নীচে পড়লো কিনা। মাথাটাই নস্ট, কারন এই মোবাইলে অনেকগুলো এসএমএস আর বিভিন্ন মানুষের নম্বর।
নম্বর আর এসএমএস গুলো আমার কর্পোরেট কানেকশনের জন্য খুবই মূল্যবান।
যখন পেলাম না তখন গাড়ী রাস্তার মাঝখানে থামাতে বললাম। ড্রাইভার চেইতা ফায়ার। বললো," ঐ মিয়া, যেইখানেই চাইবেন সেইখানেই থামামু নাকি?"
: কথা কম ক, আমার মোবাইল সেট হারাইছি। তাড়াতাড়ি গাড়ি থামা।
আমার উচ্ছস্বরের ঝাড়ি শোনে সে জায়গায় গাড়ি থামালো। আমি নামার সময় বললাম," শোন, মোবাইল যদি পাস আমার ডিপোতে রাইখা দিবি। "
ড্রাইভার আমার দিকে শ্যেন দৃস্টিতে চেয়ে ছিলো। আমি নামতেই গাড়ী হেচকা টান, হেলপারটা আমার চেহারার দিকে চেয়ে চেনার চেস্টা করলো আমি কোনো চেনা মুখ নাকি।
মাথানস্ট নিয়ে বেড়ি বাধ দিয়ে হাটতে লাগলাম রাস্তার মাঝপথেই।
এটা নিয়ে আমার ৮ টা সেট হারালো গত ৫ বছরে।
শিট ম্যান!
এলাকায় আসলাম। সেলিমের দোকানে রিক্সা থেকে নেমে ওর ফোনটা নিয়ে প্রথমে ভাবলাম ১২১১৫ এ ফোন দিয়ে আমার এমপ্লয়ী আইডি বলে সীমটা আগে লক করি। পরে কি মনে করে আমি আমার সীমেই কল করলাম। প্রথম বার বন্দ্ধ, দ্বিতীয়বার রিং হলো কিন্তু ধরলো না,তবে তৃতীয় বার ধরলো।
: হ্যালো ভাই কে বলছেন?
: কেডা?
: ভাই, আপনি যেই সেট টা দিয়ে কথা বলছেন সেটা আমার সেট। কাইন্ডলি আপনি কোথায় আছেন আমাকে বলেন, আমার সেট টা খুবই দরকার।
: কি কইলেন শুনি নাই।
: (আকুতির স্বরে এইবার) ভাইজান, এই সেট টা আমার, বাসে ভুল করে আমার পকেট থেকে পড়ে গেছে। আমার এই সেট টা দরকার।
আপনি কোথায় আছেন?
: আমি বেঙ্গলের ডিপোতে আছি। আপনার সেট আমার কাছে। আইসা নিয়া যান।
: আমি এখনই আসতেছি।
: আপনি কখন আসবেন? আমি অখন বাড়ী যামু।
: এই ১৫ মিনিটের মধ্যে। ভাই আপনার নাম?
: আমি রশিদ, আমি বেঙ্গলের ড্রাইভার। আপনি দ্রুত আসেন।
তখন রাস্তায় বৃস্টি পড়ছিলো বড় বড় ফোটায়। আমি দৌড়ে একটা রিক্সায় উঠেই," চলো।
" রিক্সার আলা কিছু না শুনেই চললো। ডিপোতে গেলাম পিঠে লেপটপ নিয়েই। পেলাম হ্যান্ডসেট। হেলপার কানে কানে বলে দিলো,"বসরে খুশী কইরা দিয়েন। " আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম," ঐটা নিয়া চিন্তা কইরো না।
" যাকে বাসে ঝাড়ি দিয়ে নেমেছিলাম তাকেই পড়ে ৫০০ টা টাকা দিয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এগিয়ে দিলাম। উনার বাসা সাভার!
রাতে বাসায় আসলাম ১১ টায়।
কতই না অদ্ভুত তাই না?
আরেকটা খবর পেলাম আমার আরেক বদ কলিগ একটু আগে জানালো ওর নাকি অস্ট্রেলিয়ার প্রিভিসা হয়ে গেছে। এখন গেলো টিউশন ফিস জমা দিতে। আমাদের ইউনিটের এখন দুই মাত্র জলিফুল পোা।
আগামী দুই মাসে আরো দুই জন অস্ট্রেলিয়ার পথে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।