আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাত দেয়ার মুরোদ নাই , কিল দেয়ার গোসাই

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

আমাদের দেশটা কখনও প্রযুক্তিবান্ধব ছিল না। আমরা সব সময়ই প্রযুক্তিকে অবৈধ করে রাখতে পছন্দ করি। নতুন প্রযুক্তি তো বটেই পুরোনো প্রযুক্তিও আটকে রাখি আইনের চোরাবালিতে। দীর্ঘদিন আমাদেরকে বিটিভি নামক সাহেব বিবি গোলামের বাক্স গিলতে হয়েছে। তারপর একুশে টেলিভিশন এসে সেই অর্গল ভেঙ্গেছে।

আমরা সত্যিকার অর্থে জনগণের টেলিভিশন কী রকম হতে পারে সেটা দেখেছিলাম। অল্প দিনেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সেই টিভিটি। একুশে টিভির কাছে তখনকার বিটিভি মনে হত ম্যাড়ম্যাড়ে ও জরাজীর্ণ। একুশে টিভির নিউজ দেখত না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। এমনকি বিটিভি পরবর্তীতে একুশে টিভিকে নকল করে তাদের নিউজ প্রেজেন্টেশন বদলে ফেলে।

একুশে টিভির ধাক্কায় তাদের অনুষ্ঠানেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। এখন দেশে ১৩টি চ্যানেল। বিভিটির দর্শক আছে কি না আমার সন্দেহ। আমি নিজে গত কয়েক বছরে খেলা ছাড়া বিটিভি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। দেশে একমাত্র টেরেস্ট্রিয়াল সুবিধা আছে বিটিভির।

বিটিভির নিজস্ব অর্থায়নে এই সুবিধা তৈরি হয়েছে। গত আওয়ামী সরকারের সময় বিটিভির এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সুবিধা পেয়েছিল একুশে টিভি। পরে বিএনপি সরকার এলে আমরা জানতে পারি, অবৈধভাবে একুশে টিভিকে এই সুবিধা দেয়া হয়েছিল। তবে তাদের লাইসেন্স জটিলতার সুযোগ নিয়ে বিএনপি একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়। আইনী লড়াই শেষে একুশে টিভি বর্তমানে সম্প্রচারে।

কিন্তু তাদের টেরেস্ট্রিয়াল সম্প্রচার সুবিধা আর ফিরে পায় নি। বিটিভির টেরেস্ট্রিয়াল সুবিধা তাদের নিজের। সেটা অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন কি না এটা তাদের একান্ত ব্যাপার। তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু গতকাল বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য টেরিস্ট্রিয়াল টেলিভিশন টেলিভিশন সম্প্রচার সুবিধা সংরক্ষণ বিল ২০০৯ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।

এই বিলে আছে, কোন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল নিজস্ব অর্থায়নে টেরেস্ট্রিয়াল সুবিধা নিতে পারবেন না, এই প্রযুক্তি কেবল বিটিভি জন্য সংরক্ষিত থাকবে। মনে হয় টেরিস্ট্রিয়াল প্রযুক্তি বিটিভির লোকজন আবিষ্কার করেছে, তাদের প্যাটেন্ট করা, তারা অন্যকে না দিলে কোন উপায় নাই। যন্ত্রপাতি তাদের নিজের হতে পারে, কিন্তু খোদ প্রযুক্তি কি তাদের নিজের নাকি ? আজিব এক দেশে থাকি আমরা । স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের বেসরকারী টেলিভিশনের সম্প্রচার সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। যে কোন টিভি দর্শক ডিস সংযোগ নিয়ে বেসরকারী টিভি দেখতে পারছেন।

সুদূর আমেরিকা, বিট্রেন, মধ্যপ্রাচ্যের দর্শকারা এসব টিভি দেখতে পারছেন। অথচ এসব অনুষ্ঠান দেখতে পারছেন না আমাদের গাঁয়ের মানুয, ঘরের পাশের মানুষ । যে সব এলাকায় ডিস ব্যবসা নাই সে সব এলাকার দর্শকরা এখনও বিটিভির বস্তাপচা অনুষ্ঠান দেখেন। তাদের কোন উপায় নাই। বেসরকারী টিভিগুলো যদি মনে করে টেরেস্টিয়াল সুবিধা সৃষ্টি করলে তাদের ব্যবসার জন্য সুবিধা হবে, তবে তারা সেটা করতে পারে।

কিন্তু কেউ বিনিয়োগ করার সামর্থ্য রাখলেও টেরেস্টিয়াল সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন না - এই রকম আইন অন্যায্য। তথ্য প্রবাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে এমন যে কোন আইনই কালা-কানুন। একদিকে তথ্য অধিকার আইন পাশ হবে এবং অন্য দিকে তথ্য প্রবাহ আটকানোর আইন হবে সেটা চরম স্ববিরোধিতা। আরেকটি কথা, যে আওয়ামী লীগ বিটিভির টেরেস্ট্রিয়াল সুবিধা বেসরকারী টিভিকে দিয়েছিল, সেই আওয়ামী লীগই এখন কোন টিভি এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না বলছে। এটাও চরম স্ববিরোধিতা।

আরেকটা কথা স্মরণ করিয়ে দেই, ১৯৯০ সালের তিন জোটের রূপরেখায় বিটিভি ও রেডিওকে স্বায়ত্ত্বশাসন দেয়ার কথা ছিল। সেই স্বায়ত্ত্বশাসনের কথা সবাই ভুলে গেছে - আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই । গত সরকারেরর সময় আওয়ামী লীগ বলেছিল বিটিভিকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হবে। তাও শেষ পর্যন্ত করা হয় নি। সাহেব বিবি গোলামের এই চ্যানেলটির জন্য প্রযুক্তি আটকানোর কুবুদ্ধি কেন হল সেটাই বুঝতে পারলাম না।

প্রযুক্তি আটকে রাখার যে কোন আইন কালা কানুন - এই কথাটা সরকার বাহাদুরে থাকা লোকজন যত দ্রুত বুঝবেন, ততই দেশের জন্য মঙ্গল। নইলে কেবল মুখে মুখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে শ্লোগান দিয়া লাভ নাই। খবর এখানে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।