The most beautiful thing is to see a person smiling And even more beautiful is, knowing that you are the reason behind it!!!
সম্প্রতি পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ইসলাম আতংক ছড়িয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়েছে। আর ইসলাম আতংক ছড়িয়ে দিতে পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলোই মূল ভূমিকা পালন করছে। পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমের বৈচিত্র ও আধিক্য, প্রচারণাকে আরও গতিময় করেছে। এ কারণে মুসলিম বিশ্বের গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো, পাশ্চাত্যের অপপ্রচারের জবাব দেয়ার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বা ও.আই.সি-র অঙ্গ সংগঠন 'আইসেসকো'র উদ্যোগে সম্প্রতি তিউনিশিয়ায় 'ইসলাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভুমিকা' শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেমিনারটি গত ৫ই মে শুরু হয়ে তা ৭ই মে শেষ হয়। প্রাশ্চাত্যে ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান তৎপরতার মোকাবেলায় মুসলিম বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর ভুমিকা কি হওয়া উচিত, সে সব বিষয়েই সেমিনারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
পাশ্চাত্যে বিশেষ করে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম আতংক সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের মিডিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ইসলাম বিরোধী অনেকগুলো চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তা বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয়েছে। এর সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে ফিৎনা চলচ্চিত্র।
এই চলচ্চিত্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ইসলাম ও পবিত্র কোরআনকে অবমাননা করা হয়েছে। এছাড়া, পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো প্রতিনিয়ত কৌশলে মুসলমানদেরকে সহিংসতাকামী, পশ্চাৎপদ ও বখাটে হিসেবে তুলে ধরছে। ফিলিস্তিন,আফগানিস্তান ও ইরাকের ঘটনাবলী সম্পর্কিত খবরাখবর ও প্রতিবেদনগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে শুনলেই আমরা দেখতে পাই, পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো কিভাবে সত্যকে বিকৃত করছে। তারা ঘুরিয়ে-পেচিয়ে সবকিছুর জন্য ইসলাম ও মুসলমানদের দায়ী হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। শুধু রেডিও, টেলিভিশনই নয় পাশ্চাত্যের সংবাদপত্রগুলোও একই কাজ করছে।
ইসলাম আতংক সৃষ্টির জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ ও কার্টুন প্রকাশ করছে। উদাহরণ হিসেবে ডেনমার্কের পত্রিকায় বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সা: )-র ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। রাসুল ও ইসলাম অবমাননাকর ঐসব কার্টুন পরে ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশের পত্রিকায় পুন:প্রকাশ করা হয়।
পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো যখন ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচারণা যুদ্ধ শুরু করেছে, তখন মুসলমানদেরও উচিত ইসলামের প্রকৃত চেহারা তুলে ধরতে সচেষ্ট হওয়া। তিউনিশিয়ায় ইসলাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্ব শীর্ষক সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা, একত্ববাদের ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে তৎপরতা রুখতে মুসলিম বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর সক্ষমতা বিচার বিশ্লেষণ করা হয়।
মুসলমানরা এখন এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, ইসলাম বিরোধী তৎপরতা অকার্যকর করতে হলে আমাদেরও গণমাধ্যমের সাহায্য নিতে হবে। মুসলমানরা বিভিন্নভাবে মিডিয়াকে ব্যবহার করতে পারে। যেমন রাসুল (সা: )-র জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যেতে পারে। ইসলাম যে শান্তির ধর্ম এবং রাসুল যে শান্তির দূত ছিলেন,তা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। এছাড়া, রাসুলের আদর্শ চরিত্র নিয়ে ছবি হতে পারে।
গণমাধ্যমে মানব জাতির সমস্যা সমাধানে ইসলামের সক্ষমতা সম্পর্কে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সাক্ষাৎকার ও বিশ্লেষণ প্রচার করা হলে তা অপপ্রচার রুখতে কার্যকরি ভুমিকা রাখবে। এছাড়া বিশ্লেষণধর্মী ও প্রামাণিক বই ও প্রবন্ধ প্রকাশ করা যেতে, যা শত্রুদের সৃষ্ট সন্দেহ ও আতংক দুর করতে সহায়ক হবে। এটা ঠিক যে ক্ষুদ্র পরিসরে এসব কাজ হচ্ছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। পাশ্চাত্যের ব্যাপক প্রচারণার তুলনায় তা অতি সামান্য। কাজেই মুসলিম বিশ্বকে এক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি তৎপর হতে হবে।
বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের গণ মাধ্যমগুলোর সবচেয়ে প্রধান সমস্যা হচ্ছে, নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। অন্যদিকে, পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো নিজেরা সমন্বয় ও যোগাযোগের ভিত্তিতে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে ইউরোপের পত্রপত্রিকায় রাসুল (সা: )-র ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। ডেনমার্কের একটি দৈনিকে কার্টুনগুলো প্রকাশের পরই পাশ্চাত্যের অন্যান্য পত্রিকাতেও একযোগে ঐসব কার্টুন প্রকাশিত হয়। ইসলাম বিরোধী কোন বিষয় হলেই তারা বিভিন্ন অজুহাতে তা সব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলিম বিশ্বের গণ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সে ধরনের কোন যোগাযোগ ও সমন্বয় নেই বললেই চলে। এ কারণেই তিউনিশিয়ায় সেমিনার শেষে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মুসলিম বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া, ইসলাম বিরোধী তৎপরতা মোকাবেলায় একটি ইসলামী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর আরেকটি সমস্যা হলো, তারা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য পরিবেশনকে নিজেদের দায়িত্ব বলে মনে করে না এবং তাদের ইসলাম ধর্মের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করার সৎ সাহসের অভাব রয়েছে। গণমাধ্যমগুলোর দর্শক, শ্রোতা ও পাঠকরা মুসলমান হবার পরও এসব গণমাধ্যম থেকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি খুব একটা প্রচার হয় না।
ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অভাব থেকেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। গণমাধ্যমের দর্শক,শ্রোতা ও পাঠকরা কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে বেশি বেশি জানতে চায় এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি প্রচার করা হলে গণমাধ্যমগুলোর জনপ্রিয়তাও অনেক বৃদ্ধি পেত। তিউনিসিয়ায় অনুষ্ঠিত মুসলিম বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর দায়িত্ব শীর্ষক সেমিনারে গণমাধ্যমগুলোকে ইসলামী মুল্যবোধ রক্ষায় ভুমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। অবশ্য একথাও ঠিক যে, ইসলামী সংস্কৃতি ও মুল্যবোধ সঠিক ভাবে তুলে ধরার জন্য এ বিষয়ে গভীর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে জ্ঞানী, চিন্তাশীল ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আলেম ও চিন্তাবিদদের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে।
কারণ আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে, ইসলামের পক্ষে কথা বলতে যেয়ে তা যেন হিতে বিপরীত না হয়। এমনটি হলে, তা পাশ্চাত্যের ইসলাম বিরোধী প্রচারণার চেয়েও ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবে।
তিউনিশিয়ায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে অংশ গ্রহণকারীরা, বাক-স্বাধীনতার সীমা পরিসীমা সম্পর্কে ধর্মীয় নেতা ও চিন্তাবিদদের বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি টিভি চ্যানেল খোলার আহ্বান জানিয়েছেন। বাক-স্বাধীনতার অর্থ যে ধর্ম অবমাননা নয়, তা তুলে ধরা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ পাশ্চাত্যের মিডিয়া এটা তুলে ধরার চেষ্টা করছে যে, বাক-স্বাধীনতার আলোকে তারা যা ইচ্ছে তাই প্রচার ও প্রকাশ করতে পারে।
এই শ্লোগান তুলে তারা মানবতার মুক্তির দুত নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধে নানা মনগড়া বক্তব্য প্রচার করছে এবং কোটি কোটি মানুষের অনুভুতিতে আঘাত করছে। সেমিনারে, ইসলাম বিদ্বেষী তৎপরতা মোকাবেলায় মুসলিম দেশগুলোতে বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজনের কথাও বলা হয়েছে। বক্তারা, মুসলিম দেশগুলোর বিশ্ব বিদ্যালয়ের পাঠ্য পুস্তকে ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের তৎপরতা ও তা মোকাবেলার উপায় সম্পর্কিত তথ্য সংযোজনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের প্রচারণা অকার্যকর করতে হলে মুসলিম দেশগুলোর মিডিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদিও মুসলিম বিশ্বের মিডিয়ার সংখ্যা কম এবং নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কিন্তু তারপরও পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করা হলে,পাশ্চাত্যের অপপ্রচার অনেকাংশে রুখে দেয়া সম্ভব হবে।
কারণ মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যকে বিজয়ী করা অনেক সহজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।