যারা জুতো সেলাই করে তাদেরকে মুচি আর যারা কাপড় সেলাই করে তাদেরকে দর্জি বলা হয় কেন - এই প্রশ্নটি যখন উত্থাপন করি তখন আমার বয়স পনেরো বছর। পিতার ধমক পেয়ে থেমে যাই। কারণ সে সময় একজন দর্জি আমার শার্টের মাপ নিচ্ছিলেন। মেপে মেপে কাপড় বানাতে হয় কিংবা বলতে হয় কথাবার্তাও , এমন ব্যাকরণ সে সময় থেকেই আমার খুব অপ্রিয় হয়ে উঠে। সেই অপ্রিয় তালিকা
আরো দীর্ঘ হয়, যখন এক স্বৈরশাসকের দালালরা রাতের আঁধারে দখল করে নেয় আমাদের প্রতিবেশী মুচিদের ঘরবাড়ি।
স্বৈরাচারী শাসকেরা জুতো সেলাই করতে জানেনা বলেই মুচিদের প্রতি তাদের এতো ঈর্ষা
ছিল ? প্রশ্নটি সে সময়ই ডায়েরির পাতায় টুকে রাখি।
সেলাই বিষয়ে একটা আগ্রহ আবারো প্রবল হয় যখন আমার বয়স চল্লিশ বছর। শার্টের বোতাম লাগাতে গিয়ে সুঁই-সূতো খেলা খেলতে খেলতে দেখি - সূতোর প্রস্থানদৃশ্য আমার আদেশ মানছে না। তখন আমার ধারণা আরো সুদৃঢ় হয়, দক্ষ নির্দেশক না হলে সেলাই কাজ রপ্ত করা যায় না।
সেলাই সম্বন্ধ নিয়ে আরেকটা দুর্বলতা আছে আমার।
দেব বাড়ির শিবা’দি ‘মনে রেখো’ সেলাই করা যে রুমালটি আমাকে দিয়েছিল তা যত্ন করে রেখেছিলাম অনেক বছর। নদীতে ফেলে দিয়েছিলাম বিয়ে করার একমাস পর। কারণ গৃহিনী বলেছিলেন, ওসব স্মৃতি আর মনে রাখতে নেই ! সবুজ সুতোয় লেখা সাদা রুমাল ! একটি জবাফুলও আঁকা ছিল তাতে। লাল- আমার রক্তের রঙ। রঙ মিশাতে কে না ভালোবাসে ! তবে সবাই পারে না।
যারা পারে তাদেরকে মুচি অথবা দর্জি কিছুই বলি না আমি। বর্ণের
বিশেষণে লিখিত ধারাপাতে রঙ দিয়েই লিখে রাখি উত্তাল সমুদ্রের অন্য এক নাম - সেলাই কারিগর।
ছবি - মাইকেল এনফিনোজিনভ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।