আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন বছরেও নাসরীন হকের মৃত্যুরহস্য আমাদের জানা হলো না!!

আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই।

তিন বছরেও নাসরীন হকের মৃত্যুরহস্য আমাদের জানা হলো না!! সকালবেলা হঠাৎ করেই নাসরীন হক মারাত্মকভাবে আহত বলে খবর দিলেন শাহ আলম ভাই। সন্ধ্যার পর খবর আসে যে নাসরীন হক আর নেই। দিনটি ছিল ২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল। নিছক দুর্ঘটনাই ছিল আমাদের জানা নেই।

ঘটনাটা রহস্যাবৃতই থেকে গেলো । মামলা হলো, তদন্ত চলছে। পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিতও হয়। কিন্তু সেই প্রতিবেনে সন্তুষ্ট নয়পরিবারজন। আবেদন করা হয় আবার তদন্তের।

অধিক তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। সেই তদন্ত এখনো চলছে...। সেই তদন্ত আলোর মূখ দেখবে কী? অন্তত আমার জানা নেই। নাসরীন পারভিন হক ভাবী একশন এইড বাংলাদেশের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ছিলেন। আমৃত্যু কাজ করেছেন মানুষের জন্য, নারীমুক্তির জন্য যারা কাজ করে তাদেরকে সহযোগিতা করেছেন।

কাজ করেছেন নারীর অধিকার আদায়ের পক্ষে। বলেছেন দেশের স্বার্থের পক্ষে। জাতীয়স্বার্থ রক্ষার নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন। নাসরীন হকের মৃত্যুর মতোই যেন গতিহীন হয়ে পড়েছে তদন্ত ও মামলা সংক্রান্ত কার্যক্রম। নাসরীন হকের রহস্যজনক দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রশ্ন তখনই তৈরি হয়েছিল।

পরবর্তীতে তদন্তের ধরন দেখে প্রশ্ন আরও বেড়েছে। রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। দায়সারাভাবে ড্রাইভারের ওপর দোষ চাপিয়ে তদন্ত শেষ করার চেষ্টা চলছে বারবার। পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের কাছে কয়েকবার আবেদন করেছেন মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং সুবিচারের আশায়। মামলা দায়েরঃ ২০০৬ সালের ৩রা মে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয় এবং ঘটনার ১৫ দিন পর ৯ মে, ২০০৬ মামলা (নং ১৬) দায়ের করা হয়।

নাসরীন হকের স্বামী নূরুল ইসলাম ভূইয়া ছোটন ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। থানায় ৩০৪ (খ) ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়। মামলা দায়ের করার সাত দিনের মাথায় মামলা ডিবি থেকে স্থানান্তরিত হয়ে চলে আসে সিআইডিতে। মামলা কেন ডিবি থেকে সিআইডিতে এলো তার কারণ এখনো জানা যায় নি। ময়নাতদন্তঃ ২০০৬ সালের ২ মে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে নাসরীন হকের পরিবারের সদস্যরা দেখা করেন এবং এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে সরকারি সহায়তা চান।

প্রতিমন্ত্রী তাদের কাছে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন এবং লাশ উত্তোলন ও ময়নাতদন্তের ওপর জোর দেন। তার সামনেই পারিবারিকভাবে এ বিষয়ে অনাপত্তি জানানো হয়। পরিবারের অভিযোগ, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও তৎকালীন সিআইডি প্রধান খোদা বক্স চৌধুরী নানা অজুহাত তুলে লাশ উত্তোলন করতে ৫৬ দিন বিলম্ব করেন। অবশেষে মা জাহেদা খানমের ২০০৬ সালের ১ জুন এবং ১১ জুন দুবার লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯ জুন লাশ উত্তোলন এবং ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও লাশ উত্তোলনে বিলম্ব করা হলো কেন? বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার তথ্যানুসন্ধান এবং হাইকোর্টের রিট বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা তথ্যানুসন্ধানঃ নাসরীন হকের মৃত্যু নিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা তথ্যানুসন্ধান করে এবং তাদের প্রাপ্ত নানা তথ্য সংবাদ মাধ্যমে আসতে থাকে।

২০০৬ সালের ২৫ মে জনৈক আইনজীবী তাদের এরূপ তথ্যানুসন্ধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত সংস্থাটিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। এরপর তাদের তথ্যানুসন্ধান বন্ধ হয়ে যায়। এ সংস্থাটি পূর্বেও বহু ঘটনার বিষয়ে এমন তথ্যানুসন্ধান করেছে কিন্তু কখনো তাদেরকে এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হয়নি। তাদের তথ্যানুসন্ধানের ফলে কারও স্বার্থ রক্ষা বা ক্ষুণ হয়েছে কিনা, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

দি অবজারভার পত্রিকার রিপোর্টঃ ২০০৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর লন্ডন থেকে প্রকাশিত The Observer পত্রিকায় নাসরীন হকের মৃত্যু নিয়ে The mystery death, a town in uproar and a $ 1 bn UK mines deal' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে এশিয়া এনার্জির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি এবং নাসরীন হকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। নাসরীন হকের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকার যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ডিএফআইডির তৎকালীন প্রধান ডেভিড উডকে বরখাস্ত করে কিন্তু আমাদের সরকার বিষয়টি সম্পর্কে ততটা গুরুত্ব দেয়নি। আমরা শুনিনি যে, তদন্তের জন্য কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তা বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছে। ' অধিকতর তদন্তের নির্দেশঃ ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলার সার্বিক দায়িত্বে নতুন নিয়োজিত কর্মকর্তা এএসপি নওশের আলীর সঙ্গে দেখা করেন শিরীন হক।

তাকে মামলার তদন্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। পরবর্তীতে নওশের আলী তাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ না দেখে খুব শিগগিরই চার্জশিট দেয়া সম্ভব হবে না বলে জানান। তখন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরমান আলীও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি টিভির সংবাদে তিনি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে মর্মে সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে শুনতে পান। সঙ্গে সঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ফোন দিলে তিনি তাকে বলেন, তার সঙ্গে দেখা হওয়ার দুদিন পরেই তাকে দ্রুত চার্জশিট দেয়ার জন্য বলা হয় চার্জশিটে গাড়িচালক জাকির হোসেনকে দোষী সাব্যস্ত করে ৩০৪ (এ) ধারায় মামলা দাখিল করা হয়।

চার্জশিট দেয়া প্রসঙ্গে শিরীন হক বলেন, 'আমরা সেই সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম এ মতিনের সাক্ষাৎ পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। তিনি সময়ও দিয়েছিলেন ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করার আগেই চার্জশিট দিয়ে দেয়া হয়। পরে তার সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলেন, আপনারা চার্জশিট দেয়ার আগে দেখা করলে আমি হয়ত আরও ভালোভাবে করার জন্য বলতে পারতাম কিন্তু এখন তো আর তা সম্ভব নয়। এমন ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তাও তদন্ত করা দরকার।

' এ ঘটনার পরিবারের পক্ষ থেকে মা জাহেদা খানম ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর দায়রা জজ ২০ এপ্রিল মামলাটি অতিরিক্ত তদন্তসাপেক্ষে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন। গাড়ি বিশেষজ্ঞের মতামতঃ মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দ মোমিন হোসেনের কাছে ২৯ মার্চ, ২০০৯ একটি চিঠি (স্মারক নং-সিআই/ঢাকা মেট্রো/পিডি/১৯-০৬/৫৬৯) পাঠানো হয় সিআইডি অফিস থেকে। সেখানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মোঃ সেলিম কায়সার, ইনচার্জ অটোমোবাইল শপ, ডিএইআরএস অফিস এবং মোঃ শহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক, বিআরটিএ (সরকারি যানবাহন মেরামত শাখা)-এর মতামত উল্লিখিত হয়। বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ২(গ) অংশে বলা হয়, 'ভিকটিম কর্তৃক ড্রাইভারের দৃষ্টিআকর্ষণ করা সত্ত্বেও গাড়িটি বিকট শব্দ সৃষ্টি এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন হওয়ার কারণ, গাড়িটি পূর্ব থেকেই ইঞ্জিন চালু/স্টার্ট অবস্থায় ড্রাইভিং মুডে ছিল এবং একসিলারেটর দ্রুত ও অধিক চাপ প্রয়োগ করায় গাড়িটি বিকট শব্দ সৃষ্টি ও দ্রুত গতি অর্জন করে।

রিপোর্টের ২ (ঘ) অংশে বলা হয়, মেনগেট বরাবর অর্থাৎ সোজা অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও গাড়িটি দ্রুত গতিতে তির্যকভাবে অগ্রসর হওয়ার কারণ : স্টিয়ারিং টার্ন করা। ' রিপোর্টের ২ (ঙ) অংশে বলা হয়, 'সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় যে, গাড়িটির সামনের বাম্পার ও ক্রস মেম্বারের ডান দিকে দুমড়ে গেছে, যা দ্রুত গতিতে কোনো পিলার কিংবা দেয়ালের কোনায় আঘাত পেলে হতে পারে। ' বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রেক্ষিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দ মোমিন হোসেন অভিযুক্ত একমাত্র আসামি মোঃ জাকির হোসেনের জামিন আদেশ বাতিল করে ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করেন ২৬ এপ্রিল, ২০০৯। তদন্ত কার্যক্রম এবং পরিবারের দাবিঃ বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়কালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ মামলা নতুন করে তদন্ত হচ্ছে। জানা গেছে ভয়াবহ সব তথ্য।

আজীবন মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া মানুষ নাসরীন হকের মামলাটি কী সরকার একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখতে পারেন না? নাসরীন হকের পরিবার কিন্তু ড্রাইভার বা বিশেষ কারও শাস্তি চান না। তারা প্রকৃত ঘটনাটা জানতে চান। সেটা জানতে চাওয়ার অধিকার নাসরীন হকের পরিবারের আছে। নাসরীন হকের সহকর্মী, বন্ধু শুভানুধ্যায়ীদের আছে। আইন অনুযায়ীই আছে।

নাসরীন হকের বড় বোন শিরীন হক বলেন, 'তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও নাসরীন হত্যা মামলা একটা পর্যায়ে এসে যেন থেমে আছে। আবার কিছু কিছু বিষয় আমরা তদন্তকারী দলকে বার বার বললেও তারা আমলে নিচ্ছে না। আমাদের একটাই দাবি, তারা যে রিপোর্টই দিক, তা যেন ঘটনার গভীরতা খতিয়ে দেখার পর দেয়া হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়ম মেনে সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। ' তিনি আরও বলেন, 'আমরা এ ঘটনার সঙ্গে হিযবুত তাহ্রীর এবং বিদেশি কিছু প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্ত করার জন্য তদন্তকারী কর্মকতা এবং ঊর্ধ্বতন মহলকে বার বার বলে আসছি।

আমরা সত্য জানতে চাই, মামলার সুবিচার চাই। '

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।