এক
সেলুনের দড়জায় কাল ছায়া পড়ায় সব গুলো চোঁখ দড়জায় আটকে গেল। সুঠোম শরীরের এক যুবক দড়জায় দাড়িয়ে। পড়নে কাউবয়ের পোশাক। নিচু করে ঝোলানো গান বেল্ট দেখেই বোঝা যায়, দক্ষ বন্দুকবাজ। আলোর উল্টোদিকে মুখ থাকায় চেহাড়া দেখা যাচ্ছে না।
মাথার হ্যাটও সামনের দিকে ঝুকানো। চেহাড়ার অর্ধেকের বেশি ঢাকা পরে আছে। কোন কারনে আগন্তুক তার চেহাড়া লুকিয়ে রাখতে চাইছে। ফাঁকা একটা টেবিল দেখে এক বোতল রাম এর অর্ডার দিয়ে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে গেল যুবক। সেলুনের মালিক লুইস হুগো নিজেই বারটেন্ডার।
সেলুন খুব একটা চলে না বলে মাইনে দিয়ে লোক রাখার ক্ষমতা নেই। আগন্তুককে তার মোটেও পছন্দ হল না। ছোট শহর 'লা পেচিনো'। তারপরও একের পর এক ঝামেলা লেগে আছে। শেরিফ একটা অকর্মার ধারি।
শহরের ঝামেলা গুলোর দিকে তার কোন মন নেই। অদিকাংশ সময়েই মদ খেয়ে মাতাল হয়ে অফিসে বসে ঝিমায়। তার ডেপুটি দুজন আরো এক কাঠি সরেস। সেলুনে এসে বিনে পয়সায় মদ তো খায়ই, তার উপর যাবার সময় দু এক বোতল নিয়ে বের হয়। এমন শহরে বন্দুকধারী আগন্তুক মানেই ঝামেলা।
তাড়াতাড়ি ঝামেলা বিদায় করার জন্য একটা বোতল আর গ্লাস নিয়ে হাজির হলো আগন্তুকের টেবিলে। বোতল আর গ্লাস টেবিলে রেখে ফেরার সময় আশেপাশের টেবিলে আগন্তুক কে নিয়ে নানা মন্তব্য শুনতে পেল।
অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে আগন্তুক। গলা ভেজানো জরুরী। বোতল হাতে পেতেই দেরী সইল না।
ছিপি খুলেই সরাসরি বোতল থেকে ঢেলে দিল গলায়। পথের ক্লান্তি নিমেষেই দুর হয়ে গেল অনেক খানি। স্পস্ট বুঝতে পারছে, তার আগমন কেউ ভাল চোখে দেখছে না। একটা কজে এসেছে সে। কাজটা শেষ করেই চলে যাবে।
কোন ঝামেলা চায় না সে। অথচ ঝামেলা মনে হয় পিছু ছাড়বে না। পাশের টেবিলের ষান্ডা মার্কা লোকটি বেশ কিছু সময় তাকে অপমান জনক কথা বলছে। টেবিলে বসতেই বলেছে, "পিস্তল চালাতে জান? নাকি অলংকার হিসেবে ব্যাবহার করছ?" ঝামেলা চায় না বলে নীরবে সব সহ্য করল সে। অথচ পশ্চিমে এর চেয়ে অনেক কম অপমান কর কথার জন্যও খুনোখুনি হয়ে যায়।
আগন্তুক কোন জবাব দিচ্ছে না দেখে, খুশিতে দাঁত বেড়িয়ে পড়ল ষান্ডার। "ব্যাটা একটা কাপুরূষ। মেয়ে মানুষের ও অধম। " বলে টেবিরে থাবা মারল সে। মুহুর্তেই পিনপতন নিরবতা নেমে এল সেলুনে।
সবাই নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিল। দুই টেবিলের লাইন অফ ফায়ারে থাকা মানুষ গুলো ভয়ে কাঠ হয়ে গেল। এমন মন্তব্যের পর লড়াই অনিবার্য। বাক্যটা শুনে মুহর্তের জন্য আগন্তুকের মুখর পেশি শক্ত হয়ে গেলেও আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল। কোন দিক না তাকিয়ে গলা ভেজানোয় মন দিল।
সেলুনে অবস্থানরত লোকগুলোর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। কেউ কেউ মজার একটা গান ফাইট দেখতে গেল না বলে রাগ করে সেলুন থেকে বের হয়ে গেল। অধিকাংশই মতামত দিল, "ব্যাটা একটা কাপুরুষ, সুতরাং তাকে গুলি করে মারা উচিৎ"। ষান্ডা লোকটা দুঃখ পেল। মারামারি করতে তার খুব মজা লাগে।
ভেবেছিল আগন্তুক ক্ষেপে গেলে খালি হাতে পিটিয়েই মনের সুখ মিটিয়ে নেবে। আগন্তুকের নির্লিপ্ত আচরন দেখে থু করে থুতু ছিটিয়ে সেলুন থেকে বের হয়ে গেল। কেবল খুশি হল সেলুন মালিক। শেষ পর্যন্ত তার সেলুনে কোন ঝামেলা হয় নি। ঝামেলা হলে হয়ত সেলুনই বন্ধ করে দিত শেরিফ।
একটা বোতল নিয়ে আগন্তুকের টেবিলে এগিয়ে গেল। "আমি কি তোমার টেবিলে বসতে পারি?" অনুমতি চাইল সেলুন মালিক।
- "অবশ্যই" মুখ না তুলেই জবাব দিল আগন্তুক।
- "কোথা থেকে আসছ?" চেয়ারে বসতে বসতে জানতে চাইল লুইস হুগো।
- "মেক্সিকো" আবারও এক শব্দে জবাব দিল সে।
_ "আমি 'লুইস হুগো'। পরিচিতরা লুইস বলে ডাকে। "
- "আমি রলিন্স, ফিল রলিন্স" বলল আগন্তুক। "বন্ধুরা ফিল বলে ডাকে। যাই হোক, যান্ডা মার্কা লোকটা কে?"
- "নাম সানচেজ।
সারাক্ষন মানুষের সাথে ঝগড়া লাগাবার তালে থাকে। দুর্ধষ মুষ্ঠিযোদ্ধা এবং দক্ষ বন্দুকবাজ। আমার পরামর্শ, ওর সাথে তোমার আর দেখা না হলেই ভাল হবে। " শুনে মুচকি হাসি হাসল ফিল। মাথার হ্যাট ঠিক করে বিল পরিশোধ করে "পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ" বলে এগিয়ে চলল দড়জার দিকে।
হ্যাট ঠিক করার সময় এক ঝলকের জন্য তার চেহারা উন্মুক্ত হয়ে পরেছিল। মুখে গভীর কাঁটা দাগ দেখে ফিল কে চিনে ফেলল হুগো। দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে জিজ্ঞেস করল, "কেন ফিরে এলে 'ফিলাডোলিয়া'?" দড়জার হাতলে হাত রেখে ফিরে তাকাল ফিল। কান্না জড়ানো গলায় জবাব দিল, "মা কে দেখতে"। চলবে.........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।