আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

*~* অভিমানী মেঘের পরে রংধনুর কোমল পরশ *~*

এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অনেক রাতে টিপু ভাই এর বিয়ে থেকে ফেরার পরে সকালে আর ঘুম ভাঙ্গে না ... আম্মু কতক্ষন ডাকাডাকি করে চলে যখন দেখে লাভ নাই তখন নিজের কাজে চলে গেল ... কিন্তু আমার এমন মজার ঘুম মনে হয় সবার সহ্য হয় না ... আর তাই হঠাৎ করেই বেজে উঠলো টেলিফোন ---- ক্রিং ক্রিং ক্রিং > হ্যালো >> কিরে শালা এখনো ঘুমাস ? কন্ঠটা শুনেই এক মুহুর্তেই আমার এতো আরামের ঘুম বাপ বাপ করে পালিয়ে গেল ... কারন আমার ঘুমও জানে, ওর সাথে ঠিকমতো কথা না বললে নির্ঘাত আমার কপালে মাইর আছে > না মানে , এই তো, উঠে গেছি >> তোর গলা শুনে তো মনে হয় না উঠে গেছিস , রেডি হতে কতক্ষন লাগবে ? > কি ? (তখনো আমি বুঝিনাই ও আসলে কি বলতে চাইছে) >> (একেবারে কঠিন আর ঠান্ডা কন্ঠে ছেড়ে ছেড়ে বললো) আমি বলেছি তোর রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হতে কতক্ষন সময় লাগবে > (মনে মনে হিসাব করে নাশতা সহ টাইম বললাম) এই মনে কর ঘন্টাখানেক ... >> তুই কি মেয়ে নাকি যে ঘন্টাখানিক ধরে মেকাপ করে বেরুবি ? তোকে আমি ১ ঘন্টা সময় দিলাম এর মধ্যে কি করবি না করবি জানি না, শুধু জানি এখন থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে আমার সামনে তুই হাজির হবি .... > কিন্তু তোর বাসায় যেতে তো ৪০ মিনিটের মতো লাগে , আমি কেমনে কি করুম ? >> এতো কিছু তো জানি না , এখন ৭.৪৫ বাজে ৮.৪৫ এর আগে তোরে আমি আমার বাসায় দেখতে চাই , ব্যাস .... (বলেই লাইন কেটে দিলো) ফোন হাতে কিছুক্ষন বসে থাকলাম .....এতক্ষনের কি হলো, সবটা মাথার উপর দিয়ে গেল বলেই মনে হলো ... আবার মনে করি -- ধুর, কি হইসে না হইসে তা পরে চিন্তা করে দেখবো আগে ওর বাসায় যাই সময় মতো, না গেলে কপালে আজকে মাইর আছে .... যত দ্রুত সম্ভব রেডি হয়ে , একটা গিফট প্যাকেট ব্যাগে ঢুকিয়ে একরকম দৌড়ে বাইরে বেরিয়েই দেখি সকাল বেলার জ্যাম ... রিক্সা না নিয়ে জ্যামটা হেটে পার হয়ে এর পরে রিক্সা নিয়ে রিক্সাওয়ালাকে জোরে চালাতে বলতে বলতে একরকম তাড়িয়ে নিয়ে যখন ওর বাসায় পৌছুলাম তখন বেজে গেছে ৮.৪৬ ... লিফটে উঠে ওর ঘরে বেল দিতে দিতে ৮.৫০ ... দেখি বেল দেয়ার সাথে সাথে বের হয়ে বললো -- চল যাই ... আমি জিজ্ঞেস করলাম -- কৈ যাবি ? মুহুর্তের মধ্যে পিঠের উপরে একটা হাতুড়ির বাড়ির মতো কি জানি পড়লো, সেই সাথে ওর কন্ঠস্বরে ভেসে উঠলো -- একে তো লেট করেছিস আর উপরে প্রশ্ন করিস ? তোর তো সাহস কম না ... চুপচাপ যা করতে বলি কর ... চল বেরুই । আমি বললাম > আচ্ছা ওর বাসা থেকে বের হতেই রিক্সা ডেকে বলে -- চিড়িয়াখানা যাবেন ? আমি একটু আস্তে করে জিজ্ঞেস করতে গেছিলাম -- ঐখানে কি করুম আজকে ? কিন্তু ওর চোখের আগুন দেখে আর কিছু বলার সাহস পেলাম না ... এর পরে সারাটা পথ সে আমাকে খালি দেখে আর রাগ রাগ করে তাকায় ... আমি কিছু বলতে গেলেই হাইহিল দিয়ে পায়ে খোঁচা মেরে ঠান্ডা গলায় বলে -- চুপ থাকতে বলসি? ... আমিও আর কথা না বাড়িয়ে চললাম ওর সাথে ... সেদিন দেখি সে নিজেই চিড়িয়াখানার ২টা টিকিট কেটে বাদামওয়ালার কাছ থেকে এত্তোগুলো বাদাম কিনে আমাকে সাথে নিয়ে ঢুকলো ভিতরে ... একটু হেটেই সামনে পড়লো বান্দরের বিশাল খাচাটা, সেখানে গিয়ে আমার ও বললো --- নে ধর, তুই আর বান্দর রা মিলে বাদাম খা, আমি দেখবো আমি বললাম > আমি, বান্দর, বাদাম ... মানে কি ? ও বললো >> তুই তো মানুষ না , তুই একটা বান্দর , কালকে রাতে আন্টি তোকে সবার সামনে বান্দর বলে পরিচয় করায়ে দিসে তাও আবার কার সাথে , টিপু ভাই এর বৌ আর শালীদের সাথে ... শালা তুই এক বান্দর ওরাও সব বান্দর ... আমি কালকে যেতে পারিনি তাও তুই গেছিস ঐখানে , সকালে বেলা তুহিনের কাছ থেকে শুনেছি তো .... বর হওয়ার খুব শখ জাগছে না ? ওদের দিকে কেমনে তাকায়ে ছিলি সেটাও আমি শুনেছি ... ওদের থেকে এই বান্দরগুলো অনেক সুন্দর আছে , এ জন্যই তোকে এনেছি ... এইবার নে ... এই খাচার থেকে একটারে বেছে নে , ঐটার সাথেই তোর বিয়ে দেব আমি ... জলদি কর । আমি বলি > আরে কি বলিস না বলিস , তুহিন বললো আর তুই বিশ্বাস করলি ?ওখানে তো আমরা মজা করছিলাম ... নাথিং সিরিয়াস দোস্ত ... টেক ইট ইজি ও বলে >> তুই শালা টাংকী মারবি ক্যান ওদের সাথে ... দুনিয়ায় আর কাউরে চোক্ষে দেখিস না ? আমি বলি > আরে কি যে বলিস আমি কিছু করলে সবার আগে তো তুই জানবি ও বলে >> থাক আর চাপাবাজি করিস না আমার সাথে .... আমি কালকে রাতে ঘুমুতে পারিনি সারা রাত, আজকে আমার টার্ম পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার কথা, তুই তো জানিস এটা আমার জন্য কত ইম্পর্টেন্ট এর পরে ও তোকে এমনটা এই সময়ে করতে হবে ? আমার রেজাল্ট দেখার কথা ছিল তোর তার দেখিসনি ফর শিউর ... তুই আমার কেমন দোস্ত রে ? দুর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে , আমি চাইনা তোর মুখ দেখতে ... এক মূহুর্ত দাড়াবি না আমার সামনে ... ভাগ আমি বললাম > চল বাসায় পৌছে দেই তোকে ও বলে >> তুই জাহান্নামে যা, আমি তোর সাথে যাব না আমি বললাম >> বুঝিস কিন্তু ... আমি চলে যাচ্ছি ও বললো >> যা না , তোকে আটকে রেখেছে কে ? একটা ছোট্ট হাসি মুখে নিয়ে এর পরে বললাম > টার্ম পরিক্ষায় বেষ্ট গ্রেড নিয়ে কেউ এমন করে বকা দেয় কাউকে ? এবার আয় তো দেখি তোর মুখটা --- বলে দু হাতে ওর মুখটা ধরতেই চোখের কোনে মুক্তোর মতো জ্বলজ্বলে কিছু কিছু ধরা পড়লো ... আঙ্গুল দিয়ে ওটাকে দুর করতে করতে, ব্যাগ থেকে গিফট প্যাকটা বের করে ওর হাতে দিতেই বলে উঠলো >> কি আছে এতে ? বললাম >> খুলেই দেখ না , কি আছে প্যাকেটটা খুলতেই মাঝারী সাইজের একটা তুলতুলে বিয়ার বের হতেই নিজেকে আর ও ধরে রাখতে পারলো না , শক্ত করে দুহাতে বিয়ারটার জড়িয়ে ধরে গাল ফুলিয়ে বললো -- কিরে, ওদের সাথে টাংকি মারা জন্য আমাকে তোর সাবস্টিটিউট দেয়া হচ্ছে বুঝি ? বুঝলাম, অভিমানের বরফ গলা শুরু করেছে, কিন্তু কিছু বলে আর নতুন করে ওকে না রাগিয়ে ঠোটের কোনে ছোট্ট একটা হাসি দিলাম ... ঐ দেখে সে হালকা একটা অভিমানের ঝাড়ি দিয়ে বলে -- এমন সবজান্তার মতো হাসতেছিস ক্যান, জানিস না এখন আমার আইসক্রিম খেতে মন চাইছে ? আমি বললাম -- রেইনবো ? ও বললো -- হু এর পরে ওর নরম কোমল আংগুলের মাঝে আমার আংগুল গুলোকে ঢুকিয়ে রংধনুর সাত রং এ ভাসিয়ে দিলাম নিজেদেরকে ... একসাথে, পাশাপাশি ....
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।