আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ বিকেলের আলোয় .. (৩)

~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~
শেষ বিকেলের আলোয় ... (২) বিপদে আমি আগেও পড়েছি অনেকবার, কিন্তু সে বিপদ এবারের মত না। এখন আমার হাত পা বাঁধা, সামনে অর্ধমৃত নদী, শত্রু - একদল ভাড়াটে খুনী - যারা টাকার জন্য কাজ করে, মানুষ চেনেনা। আমি পড়ে আছি চরের ভেজা বালিতে, আশেপাশে কয়েক মাইলের মধ্যে জন বসতি নেই, কাজেই চিৎকার করে সাহায্য পাবার আশা প্রায় শুন্যের কোঠায়। দ্রুত চিন্তা করতে থাকি, কোন উপায় কি নেই? সময় বেশী নেই আমার হাতে, সন্ধ্যে হতে আরও কয়েক ঘন্টা বকি। এই সময়ের মধ্যেই আমার যা করার করতে হবে।

আমার হাত পা বাঁধা চিকন কিন্তু শক্ত নাইলনের রশি দিয়ে, বেশী জোরাজুরি করলে কব্জি কেটে বসে যাবে রশি, লাভ কিছুই হবে না, ফলে সে চিন্তা আপাতত বাদ। ধারালো কোন কিছু বা কোন পাথরও নেই আশেপাশে যা দিয়ে ঘষে ঘষে দড়ি কাটার চেষ্টা করা যায়। হঠাৎ করে একটা বুদ্ধি আসে মাথায়। নদীতে এই সময় পানি বেশী থাকেনা, বাতাসও থাকেনা তেমন, কাজেই বড় ও মাল বোঝাই নৌকার মাঝিরা শ্রমিকদের দিয়ে গুণ টানায়, কয়েকজন লোক নদীর পাড় ধরে হেটে হেটে নৌকাটাকে টেনে নিয়ে যায়। আমি যদি গড়িয়ে গড়িয়ে নদীর কাছাকাছি চলে যেতে পারি, তবে এ যাত্রা বেঁচে যাওয়া সম্ভব হতে পারে, ওরা হেঁটে যাবার সময় গান করে, আমি যখন ওদের গান শুনতে পাবো, ওরাও তখন নিশ্চয়ই আমার চিৎকার শুনতে পাবে।

এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে গড়াতে আরম্ভ করি, কিন্তু আমার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ঘন কাশের ঝাড়, অসম্ভব শক্ত গোড়া কাশের, সেগুলোর ওপর দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া তো দুরের কথা, নড়ানোই যায়না। এঁকেবেকে যাওয়ার চেষ্টা করার ফলে আঘাত পাই হাতে, মুখে। রক্তের নোনতা স্বাদে ভরে যায় মুখ। কিন্তু জীবন যেখানে বিপন্ন, সেখানে এসব নিয়ে ভাবলে চলবেনা, চেষ্টা চালিয়ে যাই। কিন্তু আনুমানিক আধ ঘন্টা পরে থেমে যেতে বাধ্য হই, এভাবে এগুনো সম্ভব না।

সারা শরীরে কেটে যাওয়া জায়গা গুলো জ্বলতে থাকে, তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ। কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই, অসার শরীর নিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া। ক্রমেই মনে হতে থাকে ফেলে আসা দিন গুলির কথা। ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত। নিজের কাছেই প্রশ্ন করি, আমার কি এভাবে মরবার কথা? ছেলেবেলার দুরন্তপনা আর বড় হয়ে রাজনৈতিক কারনে প্রচুর মারামারি করেছি।

কিন্তু তাই বলে নিজের বিবেককে বিসর্জন দেইনি কখনও। আমার হাতে খুন হয়নি কেউ আজ পর্যন্ত। আমার পরিকল্পনায় প্রতিপক্ষকে মেরে ফেলার মত বিষয়টা আসতো না, বরং ওদের কি করে সর্বোচ্চ পরিমান ভয় দেখানো যায়, তা নিয়ে ভাবতাম বেশী। অধিকাংশ মারামারিতে যখন আমি রিভলবার নিয়ে একা সামনে এগিয়ে গিয়ে ফায়ার করেছি, তখনই ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে প্রতিপক্ষ। জীবনের মায়া প্রত্যেকেরই আছে।

হঠাৎ ঝোপঝাড় ভেঙ্গে কারও এগিয়ে আসার শব্দ শুনি। সম্ভবত কোন প্রানী। এই বিজন চরে শেয়ালের আড্ডাখানা। আমাকে এ ভাবে পড়ে থাকতে দেখলে এই দিনের বেলাতেই হিংস্র শেয়ালগুলো ছিড়ে খেয়ে ফেলবে। গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসে আমার।

আতঙ্কে নড়তেও পারছিনা। ক্রমেই এগিয়ে আসছে প্রানীগুলো, শনের শুকনো পাতা আর ডাল মাড়িয়ে দেবার মড়মড় শব্দ যেন আমার মাথার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। অপেক্ষায় আছি, যেন যুগ যুগ ধরে আমি অপেক্ষায় আছি সেই সময়টার জন্য। অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় এক সময়। ঝোপঝাড় ভেঙ্গে প্রথম শেয়ালটার কুৎসিত মাথা বেড়িয়ে আসে।

হিংস্র নোংরা চোয়ালটা থেকে লালা ঝড়ে পড়ছে প্রানীটার। এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি আমার অসহায়ত্ব, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ওরা বুঝে যাবে যে আমার পক্ষে ওদের বাধা দেয়া অসম্ভব। চিৎকার করে ওদের কিছুক্ষন হয়তো দূরে রাখা যাবে, কিন্তু সেটাও খুব বেশী সময় না। তারপরেও শরীরের শক্তি একত্র করে জো্রে চিৎকার করে উঠি, ভয়ে ছুটে পালায় শেয়ালগুলো, কিন্তু কয়েক মুহুর্ত পরেই আমার খুব কাছে আবার ঝোপঝাড় ভাঙ্গার শব্দ পেয়ে অসার হয়ে আসে শরীর। ক্রমশ ... শেষ বিকেলের আলোয় ... (শেষ পর্ব)
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।