আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ
জেএমবি গঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। প্রথমে শায়খ আব্দুর রহমান, গালিব, সানি প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ নেতৃত্বে ছিলেন। তাদের প্রথম অপারেশন তথা নাশকতা শুরু হয় ১৯৯৯ সালের মার্চে উদিচীর অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী বোমা হামলার মাধ্যমে। এরপর আরও সন্ত্রাসী বোমা হামলা হয় শেখ হাসিনার পূর্বের আমলের শেষ ৩ (১৯৯৯, ২০০০, ২০০১) বছরে। এরপর খালেদার দ্বিতীয় আমলে ময়মনসিংহের সিনেমা হলে বোমা হামলা দিয়ে জেএমবির নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
লক্ষ্যণীয় বিষয় এই বোমার উপকরণ, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ডেটোনেটর ইত্যাদি সবই ভারত থেকে আগত। শায়খ রহমানের আগে তেজগাও পলিটেকনিক হতে গ্রেফতার হয় তার ছোট ভাই সানি। সে ছিল জেএমবির সামরিক কমান্ডার সকল নাশকতা মূলক কাজ ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর কৌশলগত বুদ্ধি ও প্রশিক্ষণ দাতা। সে সহ জেএমবির আরো যেমন বোমারু মিজান অনেকেই নাকি ভারতে যেয়ে বোমা তৈরি ও হামলার পূর্ণ প্রশিক্ষণ নেন। RAB এর কাছে গ্রেফতারের পর সে স্বীকার করে বোমার সকল রাসায়নিক সহ, ডেটোনেটর সবই ভারত থেকে তারা আনত।
এরপর শায়ক রহমান গ্রেফতার হলে সেও নাকি একই কথা বলে। তারপর এরা, সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই সহ মোট ৬ জনের ফাসী কার্যকর হয় ৩০শে মার্চ ২০০৭ এ। তারপরও জেএমবির তৎপড়তা থেমে নেই। কারণ বোমা হামলার বিষয় সহ জঙ্গীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা ইত্যাদি এখনও(২০০৯ সালে) চলছে। বিশেষ করে তাদের বোমার সরঞ্জাম(গ্রেনেড সহ), অস্ত্র এখনও ভারত থেকে আসা অব্যাহত রয়েছে।
পূর্বে বলা হত সানি ও শায়খ রহমান কে চরম নির্যাতন করে চারদলীয় জোট সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে বলিয়েছে যে ভারতের কথা বলতে বোমার সরঞ্জাম সেখান থেকেই আসে। ফখরুদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল যে তারাও নাকি সাবেক বিএনপি-জোট সরকার কে বাচিয়ে দিয়েছে এবং ভারত থেকে আগত বোমা সরঞ্জাম বিষয়টি কে সত্য বলার জন্য। সম্প্রতি জেএমবির বোমারু মিজান কে RAB গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে সেও স্বীকার করে বোমা সহ অন্যান্য অস্ত্রাদিও ভারত থেকে আগত। শুধু তাই নয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদাহে নাকি জেএমবির একটি আস্তানা তথা ঘাটি আছে। তারাই ঐ বোমার সরঞ্জামাদি ভারতের বিভিন্ন স্থান হতে যোগাড় করে বাংলাদেশে পাচার করে।
গতকাল ৫ই জুন দৈনিক প্রথম আলোতে "বোমার রাসায়নিক ডেটোনেটর উদ্ভাবন করেন জঙ্গি মিজান" শিরোণামের একটি রিপোর্ট এই পোষ্টের সাথে সম্পর্কিত বিষয় তুলে ধরা হল।
*********************
ভারত থেকে বিস্কোরক সংগ্রহ: সুত্রমতে, মিজান জানিয়েছেন, জেএমবির বিস্কোরক সংগ্রহ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি দল আছে। সেটা তদারক করেন সংগঠনের আমির সাইদুর রহমান ও ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাহফুজ ওরফে সোহেল। মাহফুজ এর আগে জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন। তাঁর পর বোমারু মিজান সামরিক শাখার দায়িত্ব পান।
মিজান জানান, জেএমবি কিছু বিস্কোরক দেশের বিভিন্ন রাসায়নিকের দোকান থেকে সংগ্রহ করে। তবে পিস্তল, পাওয়ার জেলসহ আরও কিছু বিস্কোরক সংগ্রহ করা হয় ভারত থেকে। এ কাজে সহায়তার জন্য ভারতের মালদহে জেএমবির একটি শাখা আছে। তারা অস্ত্র-বিস্কোরক সংগ্রহ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে এপারে পাঠায়।
পুলিশের একটি সুত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গত বছরের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির শুরা সদস্য রফিকও একই রকম তথ্য দিয়েছিলেন।
ফাঁসির আগে জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আব্দুর রহমানও টিএফআই কেন্দ্রে দেওয়া জবানবন্দিতে এমন তথ্য দিয়েছিলেন। শায়খ আব্দুর রহমান জবানবন্দিতে বলেছিলেন, ২০০২ সালে ভারতের মালদহ জেলায় জেএমবির কার্যক্রম শুরু হয়। মালদহকে জেএমবির ৬৫তম সাংগঠনিক জেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মালদহ শাখার মাধ্যমে জেএমবি ওয়ান শুটারগান, পাওয়ার জেল ও ডেটোনেটর সংগ্রহ করে।
Click This Link
*********************
এখন প্রশ্ন হল সেই ১৯৯৮-৯৯ থেকে বর্তমান ২০০৯ সাল তথা দীর্ঘ ১০-১১ বছর ধরে ভারত থেকে এই সকল সন্ত্রাসী কাজের বোমার সরঞ্জাম আসে কিভাবে? আমরাতো জানি ভারতীয় RAW একটি শক্তিশালী ইন্টিলিজেন্স এবং ভারতের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমূহ র এর মত বিদেশে গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনা তে পারদর্শী না হলেও নিজ দেশে সন্ত্রাসী ধরতে অনেক পারদর্শী।
এখানে ভুলে গেলে চলবে না যে পশ্চিমবঙ্গের মালদহে বিচ্ছিন্ন ভাবে নয় টানা ১০-১১ বছর ধরে জেএমবির গোপন ঘাটি আছে। তাই এতটা সময় গোয়েন্দা সংস্থা ও ভারতীয় প্রশাসনের চোখ কে ফাকি দিয়ে কিভাবে বাংলাদেশে বোমার সরঞ্জাম আসে? হয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা চরম অথর্ব নতুবা ভারত সরকারই প্রকৃতপক্ষে জেএমবির মদদ দাতা(ঠিক যেমন চাকমা উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনী কে ভারত ২০-২২ বছর শেল্টার ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল)। যদি মুমবাইতে তাজ, ওবরয় হোটেলের ঘটনার ছুতা ধরে এই লেখার সাথে তুলনা দেওয়া হয় সেটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। কারণ মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলা সম্পূর্ণটাই ভারতের বাইরে পরিকল্পনা নেওয়া হয় এবং এর অস্ত্র, গোলা বারুদও বাইরে থেকে আনা। তাই হঠাৎ পরিকল্পনায় ভারতে সন্ত্রাসী হামলা কে ১০-১১ বছর ধরে মালদহতে থাকা জেএমবির সাথে তুলনা করার কোন উপায় তথা যুক্তি নেই।
কারণ ১/২ বছর এই ঘটনা চলতে পারে কোনমতেই ১০ বছর না। ভারতের বিভিন্ন স্থান হতে বোমার উপকরণ সংগ্রহ করে মালদহ তে জমা করা হচ্ছে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিষয় টি ভারতীয় গোয়েন্দা ও প্রশাসন জানে না তা একটা কিন্ডারগার্টেনের শিশুও বিশ্বাস করবে না। ভারত যে ভাবে বাংলাদেশের সীমান্তে কাটা তারের বেড়া দিচ্ছে, সামান্য ছুতায় নিরীহ বাংলাদেশীদের বিএসএফ অহরহ গুলি করে খুন করছে তার মধ্যে দিয়ে কিভাবে দীর্ঘ ১০-১১ বছর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তা কোন মামুলী ব্যাপার নয়। ভারতীয় সরকারে প্রত্যক্ষ মদদেই জেএমবি সৃষ্টি হয়। উদ্দেশ্য বাংলাদেশ কে অস্থিতীশিল করা।
ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্রস-বর্ডার টেররিজমের কথা বলে অথচ সে নিজেই জেএমবি কে বছরের পর বছর নিজ দেশে শেল্টার দিয়ে আসছে। এটা ভারত থেকে ফেন্সীডিল বাংলাদেশে পাচার হওয়া মতন এবং অতি বীভৎস বিষয়। ভারত যতদিন নিজ দেশের বেসরকারী কারখানা হতে ফেন্সীডিল উৎপাদন বন্ধ না করে ততদিন বাংলাদেশে ফেন্সীডিল আসবেই আসবে। আমাদের দেশের বিডিআর যে দোষ মূক্ত তা আমি বলব না। তাদেরও কিছু অসাধু সদস্যদের জন্য ফেন্সীডিল, অস্ত্র ইত্যাদি ভয়ংকর জিনিস বাংলাদেশে আসে।
তারপরেও যতদিন উৎস বন্ধ না হচ্ছে ততদিন এগুলো আসতেই থাকবে। ভারতের লক্ষ্য হল বাংলাদেশ কে ব্যার্থ, অকার্যকর ও সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করার এই ঘৃণ্য কৌশল। অতীতে যেমন শান্তিবাহিনীকে মদদ দিত এখন এই জেএমবিকেও ভারতীয় RAW মদদ দিচ্ছে। যদি বলত ভারত দখলকৃত কাশ্মিরে এই আস্তানা আছে তাও মেনে নেওয়া যায় না। কারণ এত প্রদেশ পেরিয়ে যেখানে বহু পুলিশি ও অন্যান্য ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ও চেকিং ফাকি দিয়ে এ সমস্ত শুটারগান, পাওয়ার জেল ও ডেটোনেটর বাংলাদেশে আসা সম্ভব নয়।
আর এটাতো পশ্চিমবঙ্গের মালদহ মাত্র। আজকে ভারত বাংলাদেশ কে দ্বায়ী করে উলফা, নাগা, বোরো বিদ্রোহীদের সহায়তা করার জন্য অথচ সে নিজেই কিনা পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি কে সহায়তা দিচ্ছে। কথায় বলে অতিভক্তি চোরের লক্ষণ। তাই জেএমিবর ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও সন্ত্রাসী হত্যা-খুন, যখম ও আতংক সৃষ্টি করা যা শুরু থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম যে বাংলাদেশ বিরোধী তথা ভারতীয়রা এ বিষয়ে জড়িত। তাদের প্রয়োজন করিডোর, চট্টগ্রাম সুমুদ্র বন্দর, বাংলাদেশের গ্যাস, তালপট্টি, বাংলাদেশের ন্যায্য সুমুদ্র সীমার উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের বলে দ্বাবী আরো কত কি।
কিন্তু অতীতের একমাত্র বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে নৌ করিডোর ছাড়া আর অন্যকোন সরকারই তাদের দ্বাবী মানে নি। বরং বাংলাদেশের সমান সুবিধা চেয়ে দ্বাবী করে আসছে। যাকে বলে মিউচুয়াল বেনিফিট। কিন্তু ভারত শুধু ষোল আনা নিতেই জানে দেওয়ার বেলায় যত যুচ্চুরি ও ঠকানো। তাই বাংলাদেশ যেন স্থিতিশীল হতে না পারে এবং সব সময় তাদের পছন্দের তাবেদার সরকার থাকে তাই এই ঘৃণ্য কৌশল।
অনেকেই আশংকা করছেন যে পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনায় সীমান্ত ৭ দিন হতে ১৫ দিন অরক্ষিত ছিল এই সুযোগে বহু বিস্ফোরক সহ অন্যান্য ক্ষতিকারক অস্ত্র ভারত হতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। তাই যদি বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক না হয় তো জেএমবি পুনরায় সংগঠিত হয়ে আবার বাংলাদেশে নাশকতা মূলক কর্মকান্ড চালাতে পারে। তাই সচেতন দেশ প্রেমিক বাংলাদেশীদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।