আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ.টি.এম শামসুল হুদাকে কে না চিনেন। তিনি যে অত্যন্ত রসিক মানুষ তা এতদিনে নিশ্চয়ই আমরা সবাই টের পেয়ে গিয়েছি। নির্বাচনের আগে প্রতিদিনই তাকে টিভি সংবাদে দেখা যেত। সিরিয়াস সব বিষয় খুব হালকাভাবে নিয়ে তিনি চমৎকার সব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তবে আমি তার বিশাল ভক্ত হয়েছি জামাতকে কোপানোর পর থেকে।
এত সুন্দর করে কৌতুক করে যে সবার হৃদয়ের কাঁটা ঘাকে কোপানো যায় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক দল এবং রাজাকারের দল জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ যখন নির্বাচন কমিশনের সাথে প্রহসন করা শুরু করল ঠিক তখনই হুদা সাহেব চমৎকারভাবে কোপটা দিলেন। সবারই নিশ্চয়ই মনে আছে রমজান মাসে জামাত যখন নির্বাচন কমিশনের সাথে এক বৈঠকে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিল এবং পরবর্তী বৈঠকে মত পালটে বেঁকে বসলো তখন ড. শামসুল হুদা বলেছিলেন, " হায় আল্লাহ, পবিত্র এই রমজান মাসে জামাতে ইসলামের হুজুরদের মুখে আমি একি শুনিলাম!" অসাধারণ। এত জটিলভাবে জামাতকে আগে পঁচিয়েছে বলে জানা নেই। সাধু-চলিতের মিশ্রণে জটিল একখান কোপ দিয়েছেন ইসি।
যদিও এরপর জামাত কর্তৃক তাকে "রাস্তার লোক" জাতীয় কথা শুনতে হয়েছে কিন্তু জামাতের কথা কেডা শুনে? যাই হোক এখানেই শেষ নয়। তত্তাবধায়ক সরকার যখন নির্বাচনে সব দলকে অংশগ্রহণ করাতে বাধ্য হয়েছে তখন শেষ মুহূর্তে অনিয়মের অভিযোগে বাতিল হওয়া প্রার্থীকে পুনর্বহাল করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বিপদে ফেলেছিল। কয়েক লাখ ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে যাবার পর নির্বাচন বিধিমালা লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত প্রার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যখন সরকার নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিল তখন নির্বাচন কমিশনের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ল নতুন করে ব্যালট পেপার ছাপানোর। কমিশন এত ব্যালট পেপার অল্প সময়ে ছেপে শেষ করতে পারবে কিনা সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে শামসুল হুদা বলেছিলেন, "অবশ্যই পারব। আমাদের অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে।
আমরা মহামানব। আমরা নিশ্চয়ই পারব। তাছাড়া বিজ্ঞ আদালত তো রায় দিয়েছেন এ ব্যাপারে, তারা তো অনেক জানেন। তারা নিশ্চয়ই বুঝে শুনেই এ রায় দিয়েছেন। " চমৎকার কোপ এবার তথাকথিত স্বাধীন বিচার বিভাগকে।
গত দু'বছর নানা সংকটে, নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে তিনি চমৎকার সব বক্তব্য দিয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন বারবার। কোন সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই সাংবাদিকদের অস্থি সব প্রশ্নের জবাবেও ইসি সাহেব তাদেরকে, "ভাই, সময় হলেই তো সব জানতে পারবেন। আমি যেটা জানি না সেটা আপনাদের বলব কীভাবে?" নির্বাচন কমিশনের যেকোন ব্যর্থতা সরলভাবে স্বীকার করার জন্যেও তিনি আলোচিত হন। সর্বোপরি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে বরাবরই তিনি বলেছেন, " সুষ্ঠু না হওয়ার কোন আলামত তো আমি দেখছি না, কাজে কাজেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এ নিয়ে সংশয়ের কোন কারণ নেই। "
সব মিলিয়ে এই ভদ্রলোককে নিয়ে এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ করার কোন গ্রাউন্ড কেউ পায় নি।
এখনও তিনি সুন্দরভাবে দায়িতালন করে চলেছেন। হ্যাটস অফ মি. হুদা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।