আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হায়! বাংলার তাজমহল!

আদর্শটাকে আপাতত তালাবন্ধ করে রেখেছি
শুক্রবার বা ছুটির দিনে আমি সাধারণত দুপুর বারটার আগে ঘুম থেকে উঠি না। কিছুদিন আগে এক শুক্রবারে উঠতে হলো, কারণ সহকর্মীদের সাথে সোনারগাঁও যেতে হবে। এর আগে মাত্র একবার সোনারগাঁও গিয়েছিলাম। তাও অনেক আগে। পানাম নগরীটা নাকি নতুন করে সাজিয়েছে।

ভাবলাম দেখেই আসি। ঢুলতে ঢুলতে হাজির হলাম মহাখালী রেলগেটে। এখান থেকে হিমালয় পরিবহনের বাসে চিটাগাং রোডে যেতে হবে প্রথমে। বাসে উঠেই দিলাম ঘুম। নামবার ঠিক আগ মুহূর্তে জানলাম- আমরা আসলে যাচ্ছি বাংলার তাজমহল (!) দেখতে।

এই তাজমহল দেখার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না, কিন্তু পড়েছি মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে। দ্বিরুক্তি না করে চিটাগাং রোড থেকে সহকর্মীদের সাথে টেম্পোতে উঠলাম। সেখানেও খানিকটা ঘুম দিলাম। এরপর নেমে খাওয়া-দাওয়া করে রিকশায় প্যারাবর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম- ভারতের তাজমহল আগ্রাতে, বাংলার তাজমহল প্যারাবতে। প্রথম আলোতে যখন বাংলার তাজমহল নিয়ে প্রথম রিপোর্ট করা হয়, তখনই প্রশ্নটা মনে এসেছিলো।

রিকশায় যেতে যেতে আবার ভাবলাম- একটি দেশের নিজস্ব ঐতিহ্য বা গৌরবকে আরেকটি দেশ এভাবে নকল করতে পারে কিনা? এটা আইনসঙ্গত কিনা? পরক্ষণেই মনে হলো- ক্ষতি কী? আজকে যদি মোনালিসা বা দ্য লাস্ট সাপারের পোস্টার না বেরুতো, আমার কি সাধ্য ছিলো ইউরোপে গিয়ে সেগুলো দেখে আসার। তেমনি আগ্রহ থাকলেও অনেকের সাধ্য নেই ভারতে গিয়ে তাজমহল দেখার। দুধের স্বাদ ঘোলে কিছুটা মিটলে ক্ষতি কি? দ্বিতীয় যুক্তিতে অবশ্য নিজেই সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। ইতোমধ্যে আমরা পৌঁছে গেছি তাজমহলের গোড়ায়। ঢুকতে লাগে মাত্র ৫০ টাকা, বেরুনো ফ্রি।

পঞ্চাশ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভেতরে ঢোকার মুহূর্তেই সব আগ্রহ উধাও। গঠন-গাড়ন একই থাকলেও আদপে এটি একটি টাইলসের বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাও কাজ শেষ হয় নি পুরোপুরি। ভেতরের কাজ তো পুরোটাই বাকি। বাইরে যে জায়গা তাতে একটু বেশি দর্শক হলেই মোটামুটি নরকগুলজার হয়ে যাবে।

ওয়াশরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলেও একসাথে কয়েকজনের বেশি জায়গা হয় না। সব মিলিয়ে বিরক্তির চূড়ান্ত। তাছাড়া আসা-যাওয়ার ঝক্কিটাও কম নয়। রাস্তা সরু এবং অনেক জায়গায়ই ভাঙা। এমন কাউকে পাওয়া গেলো না বাংলার এই তাজমহল দেখতে এসে ভালো লেগেছে।

তাহলে এতো মানুষ কেন আসে? গত ঈদে নাকি তিলধারণের জায়গা ছিলো না এখানে। বেড়াতে যাওয়ার জায়গার খুব অভাব আমাদের। আবার ঐতিহাসিক জায়গা ছাড়া শুধু প্রকৃতি বা মানুষ দেখতে যাওয়ায়ও আমরা আগ্রহী নই। ফলে কোথাও ইট-পাথরের কিছু থাকলেই পঙ্গপালের মতো ছুটে যাই। এমনকি গিয়ে ঠকবো জেনেও যাই।

বাংলার তাজমহল বোধহয় সেরকমই আরেকটা কিছু হতে চলেছে। তাজমহল দেখতে গিয়ে ঠকেছি, তাতে আফসোস নেই। বন্ধু হিসেবে সহকর্মীদের সঙ্গ পেয়েছি বেশ কিছুক্ষণ, সেটাই বা কম কী! কিন্তু ভাবছি- তাজমহল দেখার নামে ফাজলামোর শিকার হওয়া মানুষগুলোর বিরক্তিগুলোকে একজায়গায় জড়ো করে কিছু করা গেলে এই দেশের কী উপকারটাই না হতো!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।