লিখতে তো দেখি ভালোই লাগে.......
শুনেন ভাই, আপনার লিখা পড়লাম । ভালোই লিখেছেন। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই একজন সরকারী চাকুরে হিসাবে আপনার লিখার প্রতিবাদে কিছু একটা লিখার তাগিদ অনুভব করছি। জানিনা আমার অন্যান্য সরকারী চাকুরে ভাই বোন দের কি অবস্থা। কিন্তু আমি আমার দিক থেকে বলতে পারব যতটা সুখ আপনি সরকারী চাকুরে দের জন্য বরাদ্দ করেছেন ঠিক ততটা দুখই কিংবা তার চেয়েও বেশি আপনি নিজের জন্য বরাদ্দ করতেন যদি আপনি সরকারী চাকুরিজীবী হতেন।
কিছু দিন আগেও আমি প্রাইভেট জবে ছিলাম। আমার সরকারী চাকুরিতে আসার প্রধান কারন হচ্ছে আমার ছোট্ট সোনামনি টাকে একটু বেশি সময় দেওয়া। কিন্তু হায় আফসোস এখানে আমাকে ৯-৫টা নয় ৯-৭টা আফিস করতে হয়। আমার অনেক কলিগরা তো রাত ৯টা ১০টার দিকেও বাসায় যেতে পারে না। আমি মেয়ে বলে হয়তো এদিক দিয়ে একটু সুবিধা ভোগ করছি।
ভাই আপনি তো তবুও রাত ১২টায় বাসায় ঢুকতে পেরেছেন এমন অনেক সরকারী চাকুরীজীবীকে আমি দেখেছি রাত নাই দিন নাই সাইট ভিজিট এর জন্য দৌড়াচ্ছে । আমার বাবাকে দেখেছি যখন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলো রাতের ১২টায় ফোন আসছে ওখানে অভিযানে যেতে হবে সাথে সাথে ড্রেস পড়ে ফোর্স নিয়ে বেরিয়ে যেতো। আমার মা টেনশনে সারা রাত না ঘুমিয়ে বসে থাকতো। আমার বনের হাসবেন্ড, আছেন সহকারী বন সংরক্ষক হিসাবে, উনি রাত ১২টায় যান চোরাই কাঠ ধরার অবিযানে আসেন ভোর ৪টায়। উনারি এক অভিঙ্ঘতার কথা শুনেছি জোয়ারের সময় গিয়েছে অভিযানে , অভিযান শেষ হতে হতে ভাটা পড়ে গেল, অতএব ভাটায় বোট আটকে গেছে এবং উনারা টানা ৫ ঘন্টা হাত পা গুটিয়ে ঐ নির্জন জায়গায় অপেক্ষা করেছেন কখন জোয়ার আসে ।
রবীঠাকুরের সেই লাইনটিই হয়ত বারবার উচ্চারণ করছিলো মনে মনে - "কখন আজি আসিবে জোয়ার?"
আমার হাসবেন্ড, সহকারী প্রকৌশলী একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের, ওকে দেখেছি রাতের ১১/১২টায় যেতে হয় রাস্তার ঢালাই পর্যবেক্ষণ করতে। আসে রাতের ২-৩টায় । ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মাঝে মাঝে আমি রেগে যায় রাতের বেলা এসব কি। কিন্তু ওদের তো কিছু করার নেই । একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তার তার দায়িত্ব পালনে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়।
যে দায়িত্ব পালনে অপারগ সে সব জায়গায় অপারগ সরকারী বেসরকারী বলে কথা নেই।
আর ঐ ছবির কথা বলছেন আপনি এমনটাই কেন ভাবছেন ওনার কোন কাজ নেই তাই উনি পরে ঘুমাচ্ছেন। এমনও কি হতে পারেনা উনি আনেক কাজ করে এসে ক্লান্ত হয়ে কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন। আমাদের অফিসের এক কর্মকর্তা গত সপ্তাহে কাজের ভার সহ্য করতে না পেরে হার্ট এ্যাটার্ক করেছেন। বেচারা সেদিন ভোরে ঢাকা থেকে এসেছেন জরুরী মিটিং সম্পন্ন করে এবং এসে আবার অফিস এটেন্ড করেছেন ফলে শরীর লোড নিতে পারেনি।
এখনও হাসপাতালে আছেন।
তথাপি আমার ভাই ও বোনেরা আপনারা যারা ভাবছেন সরকারী চাকুরিতে কোন কাজকর্ম নেই, শুধু বসে বসে বেতন খাওয়া, ছুটি কাটানো এবং ঘুমানো তাদের জন্য বলা প্রাইভেট জবে মাস শেষে বিরাট একটা পকেট পাওয়া যায় কিন্তু সরকারী চাকুরিতে এতো কষ্টের পরেও পকেটে আসে খুবই সামান্য। তাই সরকারী চাকুরীজীবী দের আত্মতৃপ্তিটা বেতনে আসে না আসে মানুষের দেওয়া সম্মানে, মানুষের ভালোবাসাই ও দোয়ায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।