যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
বিজনেস স্টাডির ক্লাসে কিংবদন্তী উদাহরন হতে পারেন সৈয়দ মুজতবা আলী আর তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি, "বই কিনে কেউ কখনও দেউলিয়া হয়না"। এমন একটা অমর বাণী দিয়ে দেশের পুস্তক ইন্ডাস্ট্রির যে অপরিসীম উপকারটা তিনি করে দিয়ে গিয়েছেন, সত্যিকারের ব্যবসাবুদ্ধিটা ভালো থাকলে আইনী প্যাঁচ মেরে মুজতবা আলী অথবা নিদেনপক্ষে তাঁর উত্তরপুরুষেরা এই এক উক্তির কপিরাইট দিয়েই পায়ের ওপর পা তুলে জীবন কাটাতে পারতেন। সত্যি বলতে কি, ভাবতে গিয়ে দেখলাম, একটি মাত্র উক্তি দিয়ে একটা মার্কেটকে এতটা উজ্জীবিত করার উদাহরণ হ্য়তো জগতেই আর নেই। একেবারে পারফেক্ট ক্যাচফ্রইজ যাকে বলে।
বই কিনতে গিয়ে বাঙালী যখনই অপচয়জনিত হেসিটেশনের সামনে পড়ে, তখন সঙ্গের বন্ধুটি, যার কিনা ঐ পুস্তকক্রয়ের সাথে সাথে মাগনায় একটি বই পড়ে ফেলার প্রবল সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়, তার মুখে মুজতবা আলীর সেই অমোঘ বাণী, "বই কিনে কেউ কখনও দেউলিয়া হয়না", নিঃসৃত হবার সাথে সাথেই বাঙালীর সব হেসিটেশন পানিতে ধুয়ে যায়।
দেউলিয়া হবার আশু ভীতিকে জয় করে তৃপ্ত মনে বাঙালী বই কেনে।
কিন্তু সর্ষের মতো যে ভাবনাটির উদ্রেক ঘটে মনে, তা হলো মানুষ আসলে কি কেনে বা ক্রয় করে? চাল, ডাল, শাকসব্জি, মাছ-মাংস, ফাস্টফুড, জামাকাপড়, স্টেশনারী, ইলেকট্রনিক্স বা সৌখিন কিছু জিনিস -- এসবই তো! এগুলোর কোনটা কিনে কে কবে ফতুর বা দেউলিয়া হয়েছে? পনেরো-বিশ হাজার টাকায় চায়নীজ রঙীন টিভি কেনার সামর্থ্যওয়ালা লোক তো আর দুই-তিন লাখে ফ্ল্যাট প্যানেল টিভি কিনতে যাচ্ছেনা, তাইনা? তাহলে দেখা যাচ্ছে, কিছু কিনে কেউ কখনও ফতুর বা দেউলিয়া হয়না, তা সে বইই হোক, আর শাড়িই হোক; তারপরও বাক্যটির কি অবারিত ব্যবহার!
ভেবে দেখলাম দেউলিয়া হয় মানুষ মূলতঃ ঋণে। চড়াসূদে এনজিওর ঋণ, আবোল তাবোল ব্যবসার আইডিয়াপ্রসূত ঋণ আর কাপড়ের মাপে কোট না কাটার ঋণ -- এসবেই। সেক্ষেত্রে মুজতবা আলী বরং ঋণ করে বই কেনার উপদেশ দিলেই সেটা বেশী যুক্তিযুক্ত হতো, যেমন তিনি বলতে পারতেন, "ঋণ করে শুধু ঘিই খেয়োনা, কিছু বইও কেনো"। তবে যে যুগ পড়েছে, ঋণ করার উপদেশ দিয়ে আবার "কর্পোরেটের দালাল" উপাধি জোটে কিনা কপালে, সেটা হয়তো রসিক সৈয়দ সাহেব পাঁচ-ছয় দশক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন।
*স্মৃতিবিভ্রম অথবা ভুল পাঠের কারণেই হোক, মাথার ভেতর ঢুকে ছিলো বই কিনে দেউলিয়া না হবার আশ্বাসটি সৈয়দ মুজতবা আলী দিয়েছিলেন। খানিকটা সন্দিহান, তবে এমন হতে পারে মুজতবা আলীর কোন লেখায় তিনি এটা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ব্লগার নকীবুল বারীর দেয়া তথ্য থেকে জানলাম এটা প্রমথ চৌধুরীর উক্তি, তাঁকে (প্রমথ চৌধুরী না, নকীবুল বারী) ধন্যবাদ। লেখায় ভুলটা সংশোধন করলামনা, ভুল জানি অনেককিছু, এসবের প্রমাণ থাকুক; তাছাড়া মুজতবা আলীর একটা স্বাদ আছে, সেটাও থাকুক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।