আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি হু হু করে কেঁদেছি, স্লোগানের মাঝে চিৎকার করে কেঁদেছি, আমার ভাই, আমার মা, আমার বোন, আমার বাবা কে খুঁজে পেয়েছি লাখো জনতার মুখের মাঝে।

অন্যায়ের বিরোধে প‌্রতিবাদি হতে চাই শরীরটা খুব খারাপ। জ্বর এসেছে, গলায় প্রচন্ড ব্যথা, দুই পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুতে চাপা ব্যথা, পা ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে। তবু দ্রোহের আগুনে, মানুষের ভালোবাসায়, গন জাগরনের ঊৎসবে পথ চলি। বিপ্লবের কথা শুনেছি মানুষের মুখে, আন্দোলনের কথা বলেছেন অগ্রজেরা; শুনেছি আর ভেবেছি এমন কি মাহাত্ম্য এই শব্দের মাঝে? লাল বিপ্লব, নীল বিপ্লব, হলুদ বিপ্লব, কালো বিপ্লব... কতো না রঙ্গ, রূপ, রস বিপ্লবের। আমি দেখেছি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির এক বিপ্লবের রূপ।

প্রজন্ম চত্ত্বরের প্রতিটি রাত পেরিয়ে ভোরের যে সূর্য ওঠে, তার প্রখর, কিন্তু মিষ্টি আলোর মাঝে আজ হারিয়ে গেছে সকল রঙ। এই বিপ্লবের কোন রঙ নেই, আছে শুধু অনুভূতি, আছে চেতনার ঊদ্ভাস। মহাসমাবেশের পরের দিন, একজন আমাকে সামনে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন আবেগে। চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলেন মহাসমাবেশের দিন সকালে। একদিনের প্রস্তুতি নিয়ে আসলেও তাঁর এই গনজাগরনের রাজপথ ছেড়ে যেতে মন চাইছে না।

তিনি বললেন- "আমি যাবোনা ঘরে ফিরে, আমি থাকবো আপনাদেরই মাঝে, আপনাদের একজন হয়ে, এ যে আমার অস্ত্বিতের লড়াই" রংপুর থেকে এসেছিলেন একজন বীরাঙ্গনা, বাজারের ব্যাগের ভেতর টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার নিয়ে। নিজের হাতে লেখা একটি পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন জনতার মহাসমূদ্রে, ঢেঊয়ে ভেসে গিয়েছিলো তাঁর ব্যাগটি, ভলান্টিয়ার টা পরে সেটা খুঁজে দিলেও টিফিন ক্যারিয়ারটি পাওয়া যায় নি। আমরা মায়ের মমতা দিয়ে নিয়ে এসে খাইয়েছিলাম তাঁকে, সে যে কি গর্ব, সে যে কি অন্তরের মাঝে অভিঘাতের পদধ্বনি! ভোর রাতের দিকে যখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে যাবার ঊপক্রম হয়, ঘরে ফিরতে শুরু করি। দেখি কাগজ জ্বালিয়ে ধোঁয়ার বাতাবরনে রাস্তার ঊপরেই শুয়ে আছে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছেলেটি, যার ফেসবুকে পলিটিক্যাল ভিউতে লেখা আছে, I Hate Politics! ভীড়ের মাঝে ঘুরে ঘুরে ছোটছোট দলগুলিকে খুঁজে বের করছিলাম। দশজন বন্ধু মিলে একটা ব্যানার বানিয়ে নিয়ে চলে এসেছে, ২০ জন সহকর্মী মিলে একটি পতাকা ও কিছু ফুল, মোমবাতি কিনে এনে বসে পড়েছেন রাস্তায়।

আমি যেয়ে শুধালাম, আপনারা রাতে কিছু খেয়েছেন? না খেয়ে থাকলে আমাকে বলেন, খারাব আর পানি পৌঁছে দিচ্ছি। চিৎকার করে তাঁরা বললেন, তাঁদের খাবার লাগবেনা, তাঁরা আন্দোলনে এসেছেন। আমাকে বললেন, খাবার আপনারা খান, যারা যুদ্ধটাকে পরিচালনা করছেন! যাদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি, তাঁদের চোখের কৃতজঙতার ভাষা বার বার আমাকে ঋদ্ধ করেছে। আমি হু হু করে কেঁদেছি, স্লোগানের মাঝে চিৎকার করে কেঁদেছি, আমার ভাই, আমার মা, আমার বোন, আমার বাবা কে খুঁজে পেয়েছি লাখো জনতার মুখের মাঝে। আমি স্বপ্ন দেখি, আমি স্বপ্নাহত... দেশ জেগেছে, জাতি জেগেছে, জয় আমাদের হবেই! জয় বাংলা! @বাঁধন স্বপ্নকথক (Blogger and Online Activist Network -BOAN) পেইজ থেকে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।