যারা শাহবাগের আন্দোলনে ভীত-সন্ত্রস্ত তারা মনে রাখবেন সত্যের লড়াইয়ে এমন পরিস্থিতি কোনও নতুন ব্যাপার নয়। এমন এবং এর চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মহান রাসূলের (স যুগে। রাসুল (স নিজে অংশ নিয়েছেন এমন কয়েকটি ঐতিহাসিক যুদ্ধের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গাযওয়ায়ে বদর, গাযওয়ায়ে ওহুদ, গাযওয়ায়ে বনী নযীর, গাযওয়ায়ে বদরে ছোগরা, গাযওয়ায়ে আহযাব, গাযওয়ায়ে বনী কোরায়যা, হুদাইবিয়ার সন্ধি এবং বাইয়াতে রেদওয়ান, মক্কা বিজয়, গাযওয়ায়ে হুনায়ুন, গাযওয়ায়ে তাবুক। এর মধ্যে বদর ওহুদের মতো স্মরণীয় যুদ্ধ ছিল গাযওয়ায়ে আহযাব। সেই যুদ্ধে মুসলমানদের ওপর আঘাত এসেছিল চতুর্দিক থেকে।
ডান-বাম-উপর-নিচ....সবদিক থেকে। তখন মুসলমানদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। স্বয়ং আল্লাহপাক সেই অবস্থা বর্ননা করছেন এভাবে....যখন তারা তোমাদের ওপর থেকে, তোমাদের নীচ থেকে তোমাদের ওপর হামলা করার জন্য আসছিলো, যখন ভয়ে তোমাদের চক্ষু বিস্ফারিত হয়ে পড়েছিলো, প্রাণ হয়ে পড়েছিলো কণ্ঠাগত এবং আল্লাহর সাহায্যে বিলম্ব দেখে তোমরা আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে নানা রকমের ধারণা করতে লাগলে। সূরা আহযাব-১০
সে সময়ে ঈমানদাররা চরমভাবে পরীক্ষিত এবং তারা মারাত্মকভাবে কম্পিত হয়ে পড়েছিল। আহযাব-১১
সে সময় মোনাফেক এবং যাদের মনে সন্দেহের ব্যাধি ছিলো তারা বলতে লাগলো, আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুল আমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছেন তা প্রতারণা বৈ কিছউ ছিল না।
আহযাব-১২
বিশেষকরে যখন তাদের একটি দল এসে বললো হে ইয়াসরেবের অধিবাসীরা, আজ শত্রুবাহিনীর সামনে তোমাদের দাঁড়াবার মতো কোনো জায়গা নেই, অতএব তোমরা ফিরে যাও, এমনকি তাদের একাংশ তোমার কাছে এই বলে অনুমতিও চাইছিলো যে আমাদের বাড়িঘরগুলো সবই অরক্ষিত রয়েছে, তাই আমরা ফিরে যেতে চাই। অথচ আল্রাহ তায়ালা জানেন তা অরক্ষিত ছিলো না। আসলে তারা ময়দান থেকে শুধু পালাতে চেয়েছিল। আহযাব-১৩
যদি শত্রু দল নগরীরর চারপাশ থেকে ওদের ভেতর প্রবেশ করতো এবং যারা মোনাফেক তাদের যদি বিদ্রোহের ফেতনা খাড়া করার জন্য বলতো তবে তারা নির্দ্বিধায় তাও মেনে নিতো, এ ব্যাপারে তারা মোটেও বিলম্ব করতো না। -১৪
যারা ঈমানদার তারা আজকের পরিস্থিতিতে বিবেচনা দেখবেন কতটুকু পার্থক্য সেই সময়ের সাথে বর্তমান পরিস্থিতির।
আজ টিভি টকশো, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা, সরকার চারিদিক থেকে যেভাবে ঘিরে ধরেছে- একদিকে পুলিশ মারছে প্রকাশ্যে গুলি ঠেকিয়ে, কখনও পায়ে, কখনও মাথায় কখনও চোখ তুলে নিয়ে হত্যা করছে পৈশাচিক কায়দায়। অন্যদিকে মিডিয়াগুলো বলছে পুলিশ নাকি ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছে! আবার যেখানে বিচারিক আদালত একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীও হাজির করতে পারেনি যে লোকের বিরুদ্ধে তাকে দিচ্ছে যাবজ্জীবন সাজা, অথচ যেই বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের খুনীদের সারা দেশবাসী দেখেছে স্পষ্ট চোখে সেই খুনীদের ফাঁসি হচ্ছে না, ন্যুনতম সাজা হচ্ছে না। আবার যে রাষ্ট্র দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে জনগণের প্রাণের দাবি পদ্মাসেতুকে বলি দেয়, তারও বিরুদ্ধে সোচ্চার নয় কারও কণ্ঠ। সোচ্চার নয় যেই ব্যাংক সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে তার বিরুদ্ধে, সোচ্চার নয় সেই মিডিয়ার বিরুদ্ধে যার দরবেশ মালিক শেয়ারবাজারের টাকা চুরি করে পথের ফকির বানিয়েছে তেত্রিশ লাখ বিনিয়োগকারীকে। অথচ ওরা বন্ধ করতে চায় ইসলামী ব্যাংক কে যার জন্ম হয়েছে মানুষকে সূদভিত্তিক অর্তনৈতিক ব্যবস্থা থেকে মুক্তি দিতে, ওরা বন্ধ করতে চায় ফোকাস রেটিনা’র মতো কোচিং সেন্টার কে যারা এ দেশের যুব সমাজকে মেধাবী হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে, ওরা বন্ধ করতে চায় আমারদেশ, নয়া দিগন্ত, দিগন্ত টেলিভিশনকে যারা সত্যকে তুলে ধরে নির্মোহ নিরপেক্ষভাবে।
হে নতুন প্রজন্ম এসব কীসের লক্ষণ? এর অর্থ লড়াই। এই লড়াই সত্য ও মিথ্যার লড়াই। অতএব তোমাকে বেছে নিতে হবে তোমার পথ। হয় সত্যের পক্ষে নয়েো বাতিলের পক্ষে। নিরপেক্ষ বলে আর কোনও দল নেই।
যদি থাকে সেটি মুনাফেকদের দল। আল্লাহপাক বলছেন....এমনকি তাদের একাংশ তোমার কাছে এই বলে অনুমতিও চাইছিলো যে আমাদের বাড়িঘরগুলো সবই অরক্ষিত রয়েছে, তাই আমরা ফিরে যেতে চাই। অথচ আল্লাহ তায়ালা জানেন তা অরক্ষিত ছিলো না। আসলে তারা ময়দান থেকে শুধু পালাতে চেয়েছিল। সূরা আহযাব-১৩
সত্য-মিথ্যার লড়াইয়ে নিরপেক্ষ থাকার কোনও পথ নেই।
কেউ বলবে আমিতো চাকরি করি, চাকরি রক্ষাই ঈমানী দায়িত্ব, কেউ বলবে আমিতো সাংবাদিক আমার দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা, কেউ বলবেন আমিতো অসুস্থ আমার যুদ্ধে না গেলেও চলবে, কেউ বলবে আমি শুধু দাওয়াতী কাজ করবো, মানুষকে ডেকে ডেকে যুদ্ধে পাঠাবো (নিজে যাবো না), কেউ বলবে সবাই একসঙ্গে মরে লাভ কী? তাহলে কারা আগামীতে দেশ চালাবে? এরা সবাই মুনাফেকীর লক্ষণাক্রান্ত। এ যুদ্ধে যার যা সামর্থ্য সেই অনুযায়ী এবং একজন ইমাম বা নেতার নির্দেশ অনুযায়ী যাকে যেই দায়িত্ব দেয়া হবে তাকে তা-ই পালন করতে হবে। ময়দান থেকে পালাবার পথ নেই। সেই ঘোষণা স্বয়ং আল্লাহর।
হে নবী এদের তুমি বলো, যদি তোমরা মৃত্যু থেকে পালাতে চাও অথবা কেউ তোমাদের হত্যা করবে এ কারণে পালাতে চাও তাহলে এই পালানো তোমাদের কোনও কাজে আসবে না।
যদি কোনওরকম পালিয়ে যতেও পারো তাহলেও তা সামান্য কয়দিনের উপকারই ভোগ করতে দেয়া হবে মাত্র। সূরা আহযাব-১৬
এখন এর আলোকে কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে সত্যের সৈনিকদের। ইসলামী মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রথম কাজ একজন আমির বা নেতা নির্বাচন। কে হবেন সেই অগ্রসেনানী? কে নেতৃত্ব দেবেন এই আদর্শ প্রজন্মকে? নেতৃত্ব দেবেন এমন ব্যক্তি যিনি ইসলামের প্রত্যক্ষ অনুসারী, যিনি মনে করেন আল্লাহর নির্দেশিত এবং রাসুলের (স দেখানো পথেই কেবল শান্তি আসতে পারে দুনিয়ায়।
যিনি বাস্তব জীবনে রাসুল স:কে অনুসরণে করেন। অর্থাৎ ইসলামী আদর্শ ও দেশপ্রেম তথা জাতীয়তবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরাই হবেন এই আন্দোলনের নেতা। যুদ্ধের হাতিয়ার কী হবে? রাসুলের স: যুগে শত্রুদের অস্ত্র আর সত্যপথের সৈনিকদের অস্ত্রও ছিল একই। আজ ইসলামের বিরুদ্ধে কী কী অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে? মিডিয়া, ইন্টারনেট, অর্থ, জনসমষ্টি, কৌশল, রাজপথ ও স্লোগান। ঠিক একই অস্ত্র দিয়ে রুখে দিতে হবে ইসলামবিরুদ্ধ অপশক্তিকে।
আলহামদুল্লিাহ উল্লিখিত সবক’টি অস্ত্রই আছে ইসলামপন্থী দেশপ্রেমিকদের। আছে সত্যের পক্ষের মিডিয়া। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত সত্যের পক্ষে লড়াইয়ে ব্যবহৃত হয়নি। আছে ইন্টারনেট, আছে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, আছে বিশাল জনসমষ্টি, আছে মেধাবী কর্মীবাহিনী, অবশিষ্ট আছে বিশাল রাজপথ যা এখনই দখলে নিতে না পারলে বাতিলের দখলে চলে যাবে অচিরেই। আছে স্লোগান।
বিপ্লব বিপ্লব ইসলামী বিপ্লব। মুক্তির ঠিকানা রাজপথ রাজপথ। খুন-খারাবি বন্ধ করো খিলাফত কায়েম করো। দুর্নীতি বন্ধ করো খিলাফত কায়েম করো। আমাদের সংবিধান আলকোরান আলকোরান।
ইসলামের শত্রুরা হুঁশিয়ার সাবধান। ধর্মের শত্রুরা হুঁশিয়ার সাবধান। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা যাবে না। ইসলাম নিয়ে কটাক্ষ সহ্য করা হবে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।