জানার আগ্রহ মানুষের চিরন্তন, বই হলো তার বাহন, আইনের মৃত্যু আছে কিন্তু বইয়ের মৃত্যু নেই।
গতকাল বাংলাদেশ বিমানের লাশবাহী ফ্লাইটটি হযরত শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় গগণ বিদারি বিলাপ। ভাগ্য বিড়ম্বনায় লাশ হয়ে ফেরা স্বজনদের আহাজারিতে বিমান বন্দর জুড়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। এরপর বিমান বন্দর থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি বস্ত্ত নিজ সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে বের হলেন রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর সর্তা গ্রামের ষাটোর্দ্ধ ইদ্রিস মিয়া। হতভাগ্য এ পিতার দুই সন্তানই আমিরাতের আল আইন ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারান।
তারপর একে একে আরো ৫টি লাশের কফিন নিয়ে স্বজনরা বিমান বন্দর থেকে বের হলেন। মায়ের কাঁধে ছেলে, পিতার কাঁধে সন্তান, ভাইয়ের কাঁধে ভাইয়ের লাশ। এই এক মর্মন্তুত দৃশ্য। এরপর মরদেহ নিয়ে গন্তব্যে যাত্রা করেন স্বজনরা।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি আবুধাবির আল আইনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হন।
এর মধ্যে ২০ জন বাংলাদেশি। নিহতদের মধ্যে সর্বাধিক ৮ জনের বাড়ি চট্টগ্রামে। বাংলাদেশির মধ্যে গতকাল রবিবার প্রথম দফায় ৭ জনের লাশ আসে চট্টগ্রামে। গতকাল সকাল পৌনে ৮টায় চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে এক ঘণ্টা পর সকাল পৌনে ১০টার দিকে লাশগুলো তাদের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
۞۞۞ এক পরিবারের দুই ভাই নিহত ۞۞۞
শোকের চাদরে ঢাকা পুরো বাড়ি। দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে সবার অপেক্ষা। সে অপেক্ষা ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসলো। রবিবার ভোর বেলা থেকে শুরু হলো ঘড়ির কাটার ক্ষণ গণনা। শত শত নারী-পুরুষের ভিড় করলো বাড়ির উঠানে।
কেউবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে। আবাল বৃদ্ধ-বণিতা, শিশু-কিশোর সবার চোখে কান্না। আহাজারি করছে নিকটাত্মীয়রা। সবার অপেক্ষা কখন এম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ বেজে উঠেবে। পৌঁছবে দুই ভাইয়ের লাশ।
এমন অপেক্ষার পালা শেষ হলো বেলা সাড়ে ১২টায়। এসে পৌঁছলো দু’টি এম্বুলেন্স। গাড়ির শব্দ শুনেই দৌঁড় সবার। লাশের কফিন বাড়ির উঠানে ঢুকার আগে হু হু করে কান্নার চিৎকার শুরু হলো। কে কাকে থামায়, কে কাকে সান্ত্বনা দেয়।
কেউ যেন এই নির্মম ভাগ্যের পরিহাস মেনে নিতে পারছিলেন না।
এদিক দুই সহোদরের লাশ বাড়িতে ঢুকানোর আগে যে ভিটায় নতুন পাকা ঘর করার স্বপ্ন দেখেছিলেন দুই ভাই, সে জায়গাটি ঘুরে আনেন কফিনে বন্দী প্রাণহীন দুই ভাইয়ের গাড়িটি। শোক ছাপিয়ে দুপুর ২টায় নামাজের জানাজা শেষে দুই ভাইকে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়। এতেই মা-বাবার দুই আদরের ধনের চিরবিদায় ঘটে। আদরের সবার বড় ও সবার ছোট দুই ছেলে হারিয়ে মা হাছিনা বেগম ও বাবা ইদ্রিস মিয়ার এখন সারা জীবনের জন্যে শেষ সম্বল হিসেবে রইলো দু’চোখের কান্না আর একমাত্র কন্যা বিয়ে দিয়ে পরের ঘরের বধূ হওয়া রোজি আকতার।
প্রবাসী দুই সহোদর খোরশেদ আলম (২৪) ও মাসুদ রানার (২২) লাশ উত্তর সর্তা গ্রামে এসে পৌঁছালে আত্মীয় স্বজনের বুকফাটা আর্তনাদে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় বাবা ইদ্রিস দুবাইয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরিতে ছিলেন। দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে তিনি সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল পুত্রের লাশ নিয়ে একই বিমানে তিনিও আসেন।
দুই পুত্রের শোকে তিনি ছিলেন নির্বাক। অপরদিকে দুই পুত্রের শোকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা মা হাসিনা বেগম ও একমাত্র বোন এখনো শয্যাশায়ী।
নিহতদের দাফনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে নগদ ৩৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। আরো দুই লাখ টাকা করে শীঘ্রই দেওয়া হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া আমিরাত সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিজনের জন্য ৪০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।