আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐশী প্রসঙ্গে অধ্যাপক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী: প্যারেন্টস হ্যাভ টু বিকাম ফ্রেন্ডস অব দি চিলড্রেন



বাংলাদেশে সম্প্রতি পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী মর্মান্তিকভাবে খুন হয়েছেন। খুনের অভিযোগে তাদের মেয়ে ঐশীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছিল। সে বাবা মাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। এর পর সংশোধানাগারে নেয়া হয়। তো ঐশী কেন এমনভাবে বিপথগামী হলো,দেশের মাদক পরিস্থিতি, অপরাধপ্রবণতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা-এসব সামগ্রিক বিষয়ে আমরা কথা বলেছি বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী, সমাজকর্মী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীর সঙ্গে।

পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাতকারটি উপস্থাপন করা হলো : প্রশ্ন : মাদক বা নেশা জাতীয় দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো কি যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে বলে আপনার মনে হয়? প্রায়ই দেখা যায় প্রতিবেশী দেশ থেকে নানারকম নেশাদ্রব্য প্রবেশ করছে। তো এটিও বা কেন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না? অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী: জ্বি মাদক বা নেশা জাতীয় দ্রব্য অহরহ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তবে আমার কাছে যে বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে- এসব মাদক বা নেশা জাতীয় দ্রব্য যারা আনছে বা যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করার পরও দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয় না এদেশে। সেজন্যে এসব মাদক বাজারে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং যুব সমাজের হাতে হাতে পৌঁছে যায় কোনো না কোনো উপায়ে। তবে একথা ঠিক যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক বা নেশা জাতীয় দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করছে।

তবে একথাটাও সত্যি যে বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মিয়ানমারের সুর্দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে সেই সীমান্ত পথেই মূলত বেশিরভাগ মাদক দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে। এতবড় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে সরকারকে আরো সজাগ হওয়া দরকার। আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে এবং একটা সুস্থ সমাজ গড়তে হলে- তাদের ব্যাপারে আমাদের অনেক বেশি চিন্তা করতে হবে এবং এসব সর্বনাশা বিষয় থেকে তাদেরকে দূরে রাখতে হবে। কিছুদিন আগে একটা কনফারেন্সের আমি যোগ দিয়েছিলাম।

সেখানকার আলোচনার প্রতিপাদ্য ছিল 'Save the youth and save the future'। তো আমার বক্তব্য হচ্ছে- How can we save the youth and future when elders are liable for that. অর্থাত আমরা বড়রা যখন যুব সমাজকে নষ্ট করে ফেলছি তখন কিভাবে এটা সম্ভব! আর সেজন্য আমাদের বড়দের অনেক বেশি দায়িত্ব রয়েছে নতুন প্রজন্মের প্রতি। তারা যাতে এ ধরনের সর্বনাশা পথে যেতে না পারে বা এসব পথ থেকে বিরত থাকে সেদিকে আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমি আবারও বলছি দেশের নিরাপত্তাবাহিনী যারা এসব কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারা চেষ্টা করছেন তবে মাদক বা নেশার বিষয়টি এত প্রকট আকার ধারণ করেছে যে তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সেজন্যে আমি বলব এ ব্যাপারে সরকারকে আরো অনেক বেশি দৃষ্টি দিতে হবে, আরো জোরদার পদেক্ষপ নিতে হবে।

যেহেতু একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ভবিষ্যতে যাতে এরকম আর কোনো ঘটনা ঘটতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রশ্ন : আদর্শ জীবন গঠনে ধর্মীয় মূল্যবোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তো পারিবারিক জীবনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে এই ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে তরুণ সমাজ বখে যাচ্ছে বা বিপথে পরিচালিত হচ্ছে- বলে অনেকে মনে করছেন। তো এ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন? অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী: আপনি ঠিক বলেছেন, আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ তেমন কোনো কাজ করে না। তারা ওপেনলি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।

যুব সমাজ আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমগুলোর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হচ্ছে। আমি বলব পরিবার হচ্ছে আসল জায়গা যেখানে বাবা-মা সন্তানদেরকে প্রথম থেকেই লালন পালন করবে। বাবা-মায়েরা যদি প্রথম থেকেই তাদের সন্তানদেরকে ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়, ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে মানুষ করেন তাহলে এ ধরনের সংকট তৈরী হয় না। সন্তানদেরকে ভালো মন্দ শিক্ষা দেয়া, কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় সেটা বোঝানো , কোনটা গ্রহণ করা উচিত আর কোনটা বাদ দেয়া উচিত এসব যদি শেখানো হয়-তাহলে মাহফুজুর রহমানের মতো করুণ পরিণতির শিকার আমাদের হতে হয় না। আমরা তো পাশ্চাত্যের অনেক কিছুই গ্রহণ করছি।

তবে পাশ্চাত্যের যেসব জিনিষ আমাদের জন্য ক্ষতিকর হবে সেটা থেকে সন্তানদেরকে ছোট বেলা থেকেই দূরে রাখতে হবে। বাবা মায়েরা যখন ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশছে এবং তাদেরকে বাড়তি টাকা দিচ্ছে- কেন তারা বাড়তি টাকা দিচ্ছে এ প্রশ্ন আমার? এসব বাড়তি টাকা পাওয়ার কারণে তারা অন্যায় পথে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তো পরিবারের মধ্যেই ছোট বেলা থেকে যখন এভাবে তৈরী হয় সন্তানেরা তখন তার খেসারত দিতে হয় ভবিষ্যতে। আর একটা বিষয় হচ্ছে আগেকার দিনে একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবার প্রথা ছিল। তখন পরিবারের সবাই সন্তানদের প্রতি লক্ষ্য রাখতে পারত।

কিন্তু এখন তো একক পরিবার। একটি পরিবারে বাবা ও সন্তান ছাড়া এর বাইরে আর কেউ থাকে না। ফলে সন্তান কি করছে অনেক সময় তা বাবা মা লক্ষ্য রাখতে পারে না। সন্তানদেরকে সময় দিতে হবে, তাদের সাথে কথা বলতে হবে বন্ধুর মতো করে। তাছাড়া সারাদিন তারা কোথায় গেল কি করল সেসব খোঁজ খবর নিতে হবে।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে –আমাদের সন্তান একজন মুসলমান, একজন বাঙালী বা বাংলাদেশী- এ বিষয়গুলো তার মধ্যে ঢুকাতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে নিজেকে তৈরী করার জন্য এসব বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। কেউ যেন সন্তান সম্পর্কে মন্দ কিছু বলতে না পারে সেজন্য বাবা-মাকেই সন্তানদেরকে আদর্শিক ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। বাবা মা সন্তানকে ভালোবাসবে আবার শাসনও করবে। শুধুমাত্র শাসন করেই সন্তানদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায় না।

ফলে বাবা-মার ভালবাসা কেবল শাসন না। অনেকভাবেই বাবা-মার ভালবাসা আসতে পারে। বুঝানোর মাধ্যমেও সেটা হতে পারে। তবে ইদানিং লক্ষ্য করা যায় ধর্মীয় মূল্যবোধ খুব কমে গেছে। আজকালকার ছেলে-মেয়েরা ধর্মীয় মূল্যবোধকে গুরুত্বই দেয় না।

আর এর কারণ হচ্ছে বাবা-মায়েরাই এর গুরুত্ব সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেয়নি। ফলে আমি স্পষ্টভাবেই বলব ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত এবং বাবা-মার নিজেদের এগুলো প্রাকটিস করা উচিত। বাবা মায়েদের দেখে তাদের ছেলেমেয়েরাও শিখবে এবং তাদের জীবনে সেগুলোর চর্চা করবে। সর্বোপরি আমি বলব ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রাকটিস বাবা-মায়েরা নিজেরা করবেন এবং সন্তানদেরও সেই মূল্যবোধে দিক্ষিত করবেন। শুধু তাই নয় সন্তানদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই বাবা মাকে আদর্শবান হতে হবে এবং সন্তানদেরকে সুপথ দেখাতে হবে।

সন্তানদের অসুবিধাগুলো জানতে হবে সেই অনুযায়ী তাদের সমস্যার সমাধানে সর্বাত্মকভাবে মনোনিবেশ করতে হবে। সন্তানেরা যদি বাবা মাকে বন্ধু ভাবতে পারে তাহলে তাদের কোনো অসুবিধা হলে সেটা বাবা মায়ের সাথে শেয়ার করবে। তাতে সন্তানদের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। parents have to become the friends of the children. প্রশ্ন : সামাজিকীকরণ ও সাংস্কৃতিকরণের সমস্যা থেকে নতুন প্রজেন্মর মধ্যে অপরাধপ্রবণতা তৈরী হচ্ছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে – আকাশ সংস্কৃতির খারাপ দিকগুলো এখন বেশ জোরে সোরে চেপে বসেছে।

নানারকম অশ্লীল সিনেমা, নাটকসহ এমনসব জিনিষ বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সিনেমাহলগুলোতে দেখানো হচ্ছে যার ফলে তরুণ সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। তো সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন? অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী: আসলে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেটাকে আটকানো যায় না। আবার এমন অনেক কিছু রয়েছে যা নিষেধও করা যায় না। তবে একজন অভিভাবক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে- বাচ্চারা কি করছে সেটা দেখা। তারা চিত্ত বিনোদনের জন্য কি ধরনের মুভি বা অন্যান্য প্রোগ্রাম দেখছে।

তারা ইন্টারনেট এবং ফেসবুকে কি করছে বা কি দেখছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় এমনও দেখা যায় বাবা মায়েরা ঘুমিয়ে পড়েছে এ সময় বাচ্চা উঠে ন্যুড ফিল্ম দেখছে। এসব ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চাদেরকে বোঝাতে হবে কোন জিনিষ তাদের উপকারি এবং কোনটা ক্ষতিকর। আর সেভাবে তাদেরকে ভালো জিনিষের দিকে আকৃষ্ট করতে হবে।

এর আগে আমরা আলোচনার মধ্যে বলেছি ধর্ম চর্চার কথা। একইসাথে বলব সংস্কৃতি চর্চারও দরকার আছে। অর্থাত ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চা পাশাপাশি করতে হবে। সমাজ ব্যবস্থায় তরুণ সমাজের অনেক কাজ আছে। যেমন স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনেক প্রোগ্রাম থাকে।

এসব প্রোগ্রামে ব্যস্ত থাকার জন্য ছেলে মেয়েরা অনেক মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকে। এসব বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকার কারণে তাদের ড্রাগ খাওয়ার সময়ই থাকে না। আমরা এমনও শুনেছি স্কুলের দারোয়ান আয়ারাও এসব মাদকদ্রব্য ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে ছড়াচ্ছে। ফলে এসব দিকেও আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে। একই সাথে আকাশ সংস্কৃতির যে খারাপ দিক রয়েছে বা যাকে আমরা বলতে পারি অপসংস্কৃতি- সেই অপসংস্কৃতির ব্যাপারে আমাদেরকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

আর অপসংস্কৃতির ভয়াবহতার ব্যাপারে বাচ্চাদেরকে খুব ভালোভাবে বোঝাতে হবে। তবে এটাও আবার ঠিক,সব সময় বাচ্চাদের উপদেশ দিলে তারা বিরক্তও হয়ে যেতে পারে। ফলে উপদেশের পাশাপাশি তাদের সাথে আনন্দময় জিনিষ নিয়ে আলাপ করতে হবে। তাদেরকে ভালোভালো বই কিনে দিতে হবে এবং ভালো ফিল্ম কিনে দিতে হবে। বাচ্চাদের সঙ্গে এমনভাবে এসব বিষয় নিয়ে সময় কাটাতে হবে যাতে তাদের মনটা ওইসব বিষয়মুখী হয়ে যায়।

এরফলে তারা বাইরে সময় কাটানোর আর সময় পাবে না। বাচ্চাদেরকে গঠনশীল ও আনন্দময় কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে হবে। মানুষের আচার ব্যবহারের মধ্যে দিয়েই কিন্তু একটি দেশের পরিচয় ফুটে ওঠে। যারা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম, তারা আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দেবে তাদেরকে যদি আমরা বড়রা সুন্দর করে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে না পারি তাহলে তো আমাদের পরিচয়টাই থাকবে না। সেজন্যে আমাদের বাবা-মায়েরা পরিবারের মধ্যে এবং শিক্ষক শিক্ষিকারা যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তাদের সবারই দায়িত্ব রয়েছে নতুন প্রজন্মকে ঠিকপথে পরিচালিত করার।

আমরা যেন কোনো অবস্থাতেই আমাদের দায়িত্বে অবহেলা না করি। আর যদি আমরা দায়িত্বশীল না হই তাহলে আমরাই তাদেরকে ভবিষ্যতে অন্যায় পথের দিকে ঠেলে দেব। প্রশ্ন : অপরাধ কমিয়ে এনে কিভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় আর এখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা কতখানি? অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী: দেখুন আজকাল যেসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে- আমরা এ ধরনের অপরাধের কথা শুনিনি বা দেখিনি। বর্তমান ড্রাগস সম্পর্কিত অপরাধ বেশি হচ্ছে। এর আগেও অনেকে গাজা খেত।

কিন্তু বর্তমানে গাজাসহ অন্যান্য মাদকের ধরন অনেক বেশি complicated. শুধুতাই নয় মাদকের ভয়াবহতা তরুণ সমাজের মধ্যে এমন আকার ধারন করেছে যে তারা তাদের নিজেদের জীবনকে পর্যন্ত ধ্বংস করছে। আর সেজন্যে পরিবার,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ এবং রাষ্ট্র- সবারই দায়িত্ব আছে এই ভয়ংকর অবস্থা থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষার। আমাদেরকে অনেক বেশি সময় দিতে হবে বাচ্চাদের। আমরা যত বেশি সময় দেব তত ভালো হবে এবং আমরা জানতে পারব বাচ্চারা কি করছে। একই সাথে আমি স্পষ্টবাবে বলতে চাই দেশে কঠোর আইন থাকা দরকার।

পাশাপাশি যারা অন্যায় করছে তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে অন্যরা সুযোগ পাবে এবং অনেক অন্যাযের প্রতি উতসাহিত হবে। আর এভাবে যদি মাদক, দুর্নীতি ও অন্যায়ে দেশ যদি ভরে ওঠে তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। আমাদের কোনো সন্তানকে আমরা রক্ষা করতে পারব না। এই যে দেখুন ফল ও খাবারে ফরমালিন মিশিয়ে বাচ্চাদের যে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছি, এদেরকে যে ড্রাগে আসক্ত করছি- এ ধরনের সুযোগ কিন্তু আমাদের বাবা মায়েরা আমাদেরকে দেননি। তাহলে আমরা কেন অভিভাবক হয়ে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে নষ্ট করছি এ প্রশ্ন কিন্তু খুব বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

তাহলে কি আমাদের বিবেক সঠিকভাবে কাজ করে না। আর সেজন্য আমাদেরকে আগে ঠিক হতে হবে। তাহলেই তো আমরা নতুন প্রজন্মকে সুন্দর জীবনাদর্শে গড়ে তুলতে পারব। যারা সুন্দর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। তাদের দেশের প্রতি দায়িত্ব থাকবে অনেক।

তারা দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমি মনে করি আমাদের দেশের তরুণ সমাজ অনেক বেশি মেধাসম্পন্ন এবং বুদ্ধিমান, অনেক বেশি সৃষ্টিশীল এবং প্রতিভাবান। আমাদের এই তরুণ সমাজ শুধু সুযোগের অভাবে অনেকে এগিয়ে আসতে পারে না। যদি সরকার তরুণদের জন্য নানাবিধ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় তাহলে তারা অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে। দেখা যায় নানাভাবে দেশের পয়সা নষ্ট হচ্ছে, রাজনৈতিক কারণে অনেক পয়সা খরচ করা হচ্ছে।

এসব অর্থ যদি নতুন প্রজন্মের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা যায়, খেলাধুলা বা আনন্দময় কাজের মধ্যে তাদেরকে ব্যস্ত রাখা যায় তাহলে তরুণ সমাজের অন্যায় করার প্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে। আমি আবারও বলব- আমাদের খুব যত্নের সাথে খেয়াল রাখতে আমাদের সন্তান কার সাথে মিশছে কে তার বন্ধু। আর সন্তানের সবচেয়ে বড় বন্ধু হচ্ছে তার বাবা-মা। ফলে আমরা বাবা-মায়েরা যেন সতিকারার্থে সন্তানের বন্ধু হিসেবে তাদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি এই হবে আমাদের আজকের প্রতিজ্ঞা। সূত্র: রেডিও তেহরান


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।