আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Well, George, we knocked the bastard off

::::: দেখবো এবার জগতটাকে :::::
স্যার এডমন্ড হিলারী। ২০০৬সালে তোলা ২০শে জুলাই ১৯১৯সালে তার জন্ম নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের কাছে শহরতলীতে। নাম এডমন্ড হিলারী। ছোট বেলায় ছিলেন স্কুলের একদম পিছের সারির ছাত্রদের একজন। স্কুলের গন্ডি পেরুন টেনে টুনে বেশ কষ্ট করে।

হাইস্কুলে গিয়ে পুরো ধরা। তার হাইস্কুল (কলেজ) ছিল অনেক দূরে। প্রতিদিন দু-ঘন্টা ট্রেন জার্নি। এমনিতে খারাপ ছাত্র তার উপরে এসময় মাথায় ভর করে এডভেঞ্চার বই গুলো। দুঘন্টা ট্রেনে বসে গোগ্রাসে গিলতেন জুলভার্ন, এইচজি ওয়েলস।

খুব লাজুক আর অমিশুক স্বভাবের ছেলেটার বন্ধুও জোটেনি তেমন সেখানে। পুরোক্লাসে বসে বসে পৃথিবীর দুর্গমতম আনাচে কানাচে গুলোতে এডভেঞ্চারের দিবাস্বপ্নে বুঁদ। কিশোর হিলারীর জীবনে বড় একটা মোড় আসলো যখন কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে Mount Ruapehu তে যাবার সুযোগ হলো। ১৬বছরের কিশোরের স্বপ্ন রঙ্গিন চোখে তুষার শুভ্র চুড়া, আকাশের কাছা কাছি বসে নিচের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে বলা দেখ, আমি সবার উপরে, চিন্তা করা সবই ছিল স্বপ্নের মতো। তার উচ্চতা ৬ফিট ৫ইঞ্চি।

আজন্ম দুর্দান্ত ফিটনেস, বড় হয়ে মাউন্টেনিয়ার হবার স্বপ্নটাকেই উস্কে দিল। কলেজ শেষে ইউনিভার্সিটি অফ অকল্যান্ড থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন ম্যাথমেটিকসে। এর পরপরেই জীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ন মাউন্টেন সামিট করেন মাউন্ট অলিভার নামের চুড়ায়,আল্পসের মাউন্ট কুক পর্বতের একটি শিখর। জীবিকার তাগিদ আবার পাহাড় বাইবার নেশা। ভাইয়ের সাথে মধুর ব্যাবসায় যোগ দেন হিলারী।

দুর্গম পার্বত্য বনভুমীতে মউয়ালের কাজটা করা তার নেশার মতো। সামারে মৌয়াল উইন্টারে জমানো টাকা ভাঙ্গিয়ে চলে যান পর্বতের চুড়ার দিকে। নিউজিল্যান্ড ডলারে স্যার এডমন্ড হিলারী। এর মাঝে শুরু হয়ে গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধে যোগ দিলেন রয়েল নিউজিল্যান্ড এয়ারফোর্সের উভচর সী-প্লেনের নেভিগেটর হিসাবে।

যুদ্ধের শেষ বছর ৪৫সালে ফিজি, সলোমন আইল্যান্ড বিভিন্ন জায়গায় উভচর যুদ্ধে অংশ নেন এবং একটি অভিযানে মারাত্মক ভাবে অগ্নিদগ্ধ হন। ১৯৫১সালে ব্রিটিশ রেকি এক্সপেডিশেন্সের দলের একজন হয়ে সালে এভারেস্ট অভিযানে বের হন হিলারী এবং তার বন্ধু মাউন্টেনিয়ার জর্জ লো। দলের নেতৃত্ব দেন কিংবদন্তি মাউন্টেনিয়ার এরিক শিপটন। এরিক শিপটনের নেতৃত্বে পরের বছর চো ওইয়ি (পৃথিবীর ৬ষ্ট উচ্চতম পর্বত) অভিযানে যান। কিন্তু এই অভিযানও ব্যর্থ হয়।

************************************************* ১৯৫৩সালে এডমন্ড হিলারী চললেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চুড়া এবং সব এডভেঞ্চার প্রেমীর স্বপ্নের এভারেস্ট শৃঙ্গকে পদানত করতে। এই সময় চাইনিজ সরকার তিব্বত অংশ রাজনৈতিক কারনে সকল অভিযাত্রীর জন্যে নিষিদ্ধ করে দেয়। শুধুমাত্র নেপালের রুট খোলা তাও বছরে মাত্র একটি অভিযানের অনুমতি মেলে। ১৯৫২সালে একটি সুইস টিম এই রুট দিয়ে এভারেস্ট জয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। সেইদলের গাইড ছিলেন বিশ্বখ্যাত শেরপা মাউন্টেনিয়ার তেনজিং নোরগে।

কিন্তু এভারেস্ট চুড়ার সামিট পয়েন্ট থেকে মাত্র ৮০০ফিট দূরে থেকেই প্রচন্ড খারাপ আবহাওয়া তাদেরকে ফিরে যেতে বাধ্য করে। ১৯৫২সালে প্রায় একই সময়ে হিলারী এবং তার বন্ধু জর্জ লো আল্পস অভিযানের সময় জয়েন্ট হিমালয়ান কমিটির এভারেস্ট অভিযানের আমন্ত্রন পান। স্যার এডমন্ড হিলারী এবং তেনজিং নোরগে। প্রথমে দলের নেতৃত্বে ব্রিটিশ এক্সপ্লোরার শিপটন থাকলেও পরে দায়িত্ব পান উইলিয়াম হান্ট। এতে এভারেস্ট অভিযানের দল থেকে হিলারী নাম প্রত্যাহার করে নেন।

কিন্তু পরে হান্ট এবং শিপটন দুজন মিলে হিলারীকে রাজি করান। মুল অভিযাত্রিদের ছোট ছোট সাবগ্রুপে ভাগ করা হয়। হিলারী দলের অন্যজন সদস্যের নাম তেনজিং নোরগে। খুব শিঘ্রি হিলারী এবং তেনজিং প্রচন্ড ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যান। গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর অভিযানে বার বার মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়ে অনেক সাধনা, শ্রম আর আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গি করে ১৯৫৩সালের ২৮শে মে তারা এভারেস্টের কাছা কাছি চলে আসেন।

সাপোর্টেড গ্রুপ বিদায় নিলে সামনে এগিয়ে যান দুই বন্ধু তেনজিং আর হিলারী। অবশেষে ২৯শে মে পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান অজেয় মাউন্ট এভারেস্ট তথা সাগরমাথা মানুষের পদানত হলো। অনেক গৌরব আর জনপ্রিয়তা সঙ্গি করে করে তেনজিং আর হিলারী কাঠমান্ডু শহরে ফিরলেন রানী এলিজাবেথের সিংহাসন আরোহনের পরের দিন। সদ্য মুকুট পরিহীত তরুনী সম্রাজ্ঞী হান্ট এবং হিলারীকে নাইট উপাধিতে ভুষিত করেন। মৌয়াল এডভেঞ্চারার হিলারী হলেন স্যার এডমন্ড হিলারী।

অপরদিকে ১৯৫৩সালে ভারত স্বার্বভৌম্য রাষ্ট্র। তেনজিং নোরগেও অভিযানের আগেই নেপালী থেকে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন দার্জিলিং থেকে। প্রধানমন্ত্রি জওহরলাল নেহেরুর অনুরোধে তেনজিং নাইট উপাধি গ্রহন না করে ব্রিটিশ এম্পায়ার মেডেল গ্রহন করেন। এভারেস্ট জয় করার পর দির্ঘদিনের সঙ্গি পর্বোতারোহী এবং বন্ধু জর্জ লোকে দেখে হিলারীর কমেন্ট ছিলঃ Well, George, we knocked the bastard off. ২৯শে মে ১৯৫৩সাল। প্রথমবারের মতো পর্বতরাজ হিমালয়ের সবচাইতে উচু পয়েন্ট মাউন্ট এভারেস্ট অথবা সাগরমাথা পদানত হলো মানুষের।

ছবিতে তেনজিং নোরগে। এভারেস্ট জয়ের পরে হিলারি থামেন নি। হিমালয় অঞ্চলে আর ছয়টা শৃঙ্গ জয় করেন ৬৫সাল পর্যন্ত। ১৯৫৮সালে স্যার এডমন্ড হিলারী উত্তর মেরু অভিযানে অংশ নেন এবং জয় করেন। ১৯৭৯সালে ওশান টু স্কাই নামের এক অভিযানে গঙ্গা নদীর সাগরে মেশার অংশ থেকে উৎস পর্যন্ত আকাশ অভিযান পরিচালনা করেন।

১৯৮৫সালে নিউজিল্যান্ড সরকার তাকে ভারত, নেপাল এবং বাংলাদেশ এই তিন রাষ্ট্রের হাইকমিশনার হিসাবে ভারতে প্রেরন করে। স্যার এডমন্ড হিলারীর পুত্র পিটার হিলারীও একজন বিখ্যাত ক্লাইম্বার ছিলেন। তেনজিং নোরগের পুত্র এবং বিখ্যাত মাউন্টেনিয়ার জাম্লিং নোরগের সাথে যৌথভাবে এভারেস্ট জয়ের ৫০বছর পুর্তীতে চালানো অভিযানে তারাও সফল ভাবে এভারেস্ট আরোহন করেন। এভারেস্ট জয়ের ৫০বছর পূর্তীতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বিশেষ সংখ্যা। গত বছর ১১জানুয়ারী (২০০৮) সালে অকল্যান্ডে ৮৮বছর বয়সে স্বপ্ন প্রেমী এই দুরন্ত মানুষটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx এভারেস্ট জয়ের দিনটি স্বরন করে ২০০৮থেকে ২৯শে মে নেপাল সরকার এবং সারাবিশ্বের মানুষ এভারেস্ট ডে পালন করে। বাংলাদেশও গতবছর ২৯শে মে উদযাপন করে এডভেঞ্চার ক্লাব ভ্রমন বাংলাদেশ। এবছরেও ২৯শে মে শুক্রবার এভারেস্ট ডে পালনের উদযোগ নেয়া হয়েছে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।