আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩৪৫ দিন পরে গ্রামের বাড়ি গেলাম। কয়েক মূহুর্তের জন্য থেমে গিয়েছিলো আমার বর্তমান, ফিরে পেয়েছিলাম আমার হারানো অতীত আর কিছু মজার অভিজ্ঞতা... ...

চাকরি করার ইচ্ছে হয়নি কখনো। তাই তো পড়ালেখা হিসাববিজ্ঞান নিয়ে, কিন্তু করছি কম্পিউটার ব্যবসা!!! কম্পিউটার সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। মেইল: sajimtalukdar@gmail.com

শেষ কবে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন? আমি ৩৪৫ দিন পরে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম তাই পাড়ি দিতে হবে পদ্মা নদী। সাঁতার জানি না তাই নদীতে ঢেউয়ের ভয়ে ফেরী পরাপার হয়ে যেতে প্রায় ছয় ঘন্টা লেগে গেলো। কিন্তু মজার বিষয় হলো বাতাস না থাকাতে নদীতে কোন ঢেউ-ই ছিলো না, আর পদ্মার বুকে জেগে উঠা চরের সৌন্দর্য্য দেখে মনের ভেতর একটি গান বাজছিলো, " পদ্মার ঢেউ রে... মোর শূণ্য হৃদয়......।

" যাইহোক যতই বাড়ির দিকে যাচ্ছি ততোই কেমন যেন সব অপরিচিত লাগছে। পৌঁছে বাবার সাথে দেখা করেই বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বেরিয়ে পরলাম। অনেক খুঁজে দু'জনের সাথে দেখা, কিছু ক্ষণ আড্ডা দিতেই দেখি রাত অনেক হয়েছে আর একটু হলেও ক্লান্ত তাই বাধ্য হয়েই বিদায় নিতে হলো। আমি এখনো আমার ঘরে প্রবেশ করিনি। ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করছি তখন-ই চোখ পরলো আমার ড্রয়ারটার দিকে, পকেট থেকে চাবিটা নিয়ে ড্রয়ারটা খুলে বিছানার উপর নিয়ে বসলাম।

একটু একটু করে যখন ড্রয়ারের জিনিস গুলো দেখছিলাম মনে হচ্ছিলো আমি যেন ফিরে যাচ্ছি আমার হারানো অতীতে। প্রতিটা জিনিসের সাথে আমার অতীত জড়িত আর তাই প্রতিটা জিনিস যেন আমার বর্তমানকে থামিয়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিলো আমার অতীত সময়ে। চোখের সামনে যেন আমি আমার অতীতকে দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার ড্রয়ারে কি কি ছিলো তার একটি তালিকা আপনাদের জন্য- ১) চিঠি ৫১ টি, ২) ফটো এ্যালবাম ৩টি এবং মোট ছবি ৬১টি, ৩) ডায়েরি ১টি, ৪) কলম ১১টি, ৫) লেখার জন্য প্যাড ১৬টি, ৬) মেডেল ৬টি, ৭) খালি খাম ১৫টি, ৮) শুকনা ফুল ৩টি, ৯) ভয়েস রেকর্ড করা ক্যাসেট ১টি, ১০) পকেট টিস্যু প্যাক ১টি, ১১) প্লেইং কার্ড ১প্যাক, ১২) শুভেচ্ছা কার্ড ১টি, ১৩) কবিতা ২টি, ১৪) এক টাকার নোট ২টি, দুই টাকার নোট ২টি, পাঁচ টাকার কয়েন ১টি, দশ টাকার নোট ১ টি, মোট ২১টাকা, ১৫) আর ফ্রি হিসেবে পেয়ে ছিলাম ৯টি টিকটিকির ডিম!!! এবং ইত্যাদি ইত্যাদি.................। পরের দিন অনেক কাজ তাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম।

যে উদ্দেশ্য গ্রামে গেলাম তার জন্য একটা রিক্সা দরকার, আর তাই আগেই রিক্সা ভাড়া করা ছিলো। সকাল আটটার দিকে রিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সারা দিন ঘুরলাম আমার নানা- দাদা বাড়ির এলাকা, আমার স্কুল-কলেজ সব। যানবাহনের মধ্যে রিক্সা আমার প্রিয় কিন্তু কয়েক ঘন্টা যাওয়ার পরে কি কষ্ট যে লাগছিলো... ...। তবুও পরো কাজ করতে রাত ১২টা বেজে গেলো।

এটাই আমার জীবনের রেকর্ড যে, আমি টানা ১৬ ঘন্টা রিক্সায় ঘুড়েছি। এর পর আর কি একটা ক্লান্তির ঘুম........................। ঢাকা ফিরে আসবো তাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। যাওয়ার দিন নদীতে ঢেউ ছিলোনা তাই আজ ঠিক করলাম লঞ্চ দিয়ে পদ্মা পার হবো। লঞ্চ চলছে আর আমার মনে বাজছে সেই একই গান।

প্রায় ঘাটে চলে এসেছি আর ১৫-২০মিনিট লাগবে, কিন্তু শুরু হলো বাতাস আর প্রচন্ড ঢেউ। লঞ্চের সকল যাত্রীর মুখ শুকিয়ে কাঠ সাথে আমারটা ও। এখন আর গান বেরুয় না শুধু আল্লার নাম। তবে শেষ পর্যন্ত ভালো ভাবেই নদী পার হলাম। এখন আমি সেই যান্ত্রিক শহরে।

থেমে গেছে আমার অতীত, দূর্বার গতিতে চলছে আমার বর্তমান এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।