অকাট মূর্খ যাকে বলে আমি তাই। সুতরাং জ্ঞানীরা বেশি জ্ঞান দিলে আমি চাইয়া চাইয়া দেখা ছাড়া কিচ্ছু করতে পারিনা। পোড়া কপাল!!
*
*
*
*
*
*
*
*
*
*
*
*
*
দিয়াশলাই, ছোট্ট একটা জিনিস । দিয়াশলাই এর কথা মনে হলেই সিগারেটের কথা মনে পরে। না শুধু ধুমপানের ক্ষেত্রেই নয়, দিয়াশলাই ব্যবহার করা হয় চুলা ধরানো, মোমবাতি ধরানো সহ নানাবিধ কাজে।
কিন্তু আমরা কি কেউ জানি কিভাবে এই ছোট্ট অথচ অত্যন্ত উপকারী জিনিসটি আবিষ্কৃত হয়েছিল?আসুন জেনে নেই দিয়াশলাই আবিষ্কারের চমকপ্রদ ইতিহাস।
আজ থেকে ১.৫ মিলিয়ন বছর পূর্বেই পৃথিবীর আদিগন্তময় প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন মানুষ শিখেছিল দুটো কাঠির ঘর্ষনে কিভাবে আগুন জ্বলে। তার পরবর্তীতে তারা আবিষ্কার করেছিল যে চকমকি পাথর (Flint) কিংবা ইস্পাত(Steel) এর ঘর্ষনে আরো সহজেই আগুন জ্বালানো যায়।
১৬৬৯ সালে একজন অপরসায়নবিদ (Alchemist), যে কিনা অন্যান্য অপরসায়নবিদদের মতই মনে করতেন যে তিনিও ধাতুকে স্বর্ণে পরিনত করতে পারেন, এমন কিছু আবিষ্কার করে ফেলেন যা নিশ্চিতভাবেই সোনা ছিলনা। তিনি এর নাম দেন ফসফরাস (phosphorous)।
পরবর্তীতে ১৬৮০ সালে ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট বয়েল (Robert Boyle) যার নাম অনুযায়ী বয়েলের সূত্র (Boyle's Law) নামকরন হয়েছে, একটুকরা কাগজকে ফসফরাস দ্বারা আবৃত করেন এবং সালফার দ্বারা আবৃত একটা কাঠের টুকরা দ্বারা এটাকে আঘাত করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে এর ফলে বিস্ফোরনের মাধ্যমে আগুন উৎপন্ন হয়। তিনি অবশ্য বুঝেছিলেন যে ঘর্ষনের ফলে আগুন উৎপন্ন হয়নি বরং এটা হয়েছে ফসফরাস এবং সালফারের রাসায়নিক প্রকৃ্তির কারনে। তিনি অবশ্য ঠিকই মনে করেছিলেন। কিন্তু তাঁর অনুসৃ্ত পরীক্ষাপদ্ধতিই (ঘর্ষন) আধুনিক ম্যাচ বা দিয়াশলাই আবিষ্কারের মূলনীতি।
এর অনেক পরে ১৮২৬ সালে ইংরেজ ফার্মাসিস্ট জন ওয়াকার (John Walker) দৈবক্রমে এমন একটি রাসায়নিক মিশ্রন আবিষ্কার করেন যা ছিল আগুন উৎপাদনে সক্ষম। একটি রাসায়নিক মিশ্রন (যাতে ফসফরাস ছিলনা) নাড়ার পরে নাড়ানি হিসেবে ব্যবহার করা কাঠিটিকে তিনি সরিয়ে ফেলেন এবং লক্ষ্য করেন যে কাঠিটির প্রান্তভাগে শুকনো কিছু লেগে আছে। যখন তিনি এই শুকনো অংশ দূর করার জন্য কাঠিটিকে মেঝের সাথে ঘষা দেন তখন কাঠিটি জ্বলে ওঠে। তার ঐ মিশ্রণ (যা আগুন জ্বালাতে সক্ষম ছিল) এর মধ্যে ছিল এন্টিমনি সালফাইড (antimony sulfide),পটাশিয়াম ক্লোরেট(potassium chlorate),গাম (gum) এবং স্টার্চ (starch)। তড়িঘড়ি করে তিনি তার এই আবিষ্কার জনসমক্ষে আনতে গিয়ে তিনি এটার পেটেন্ট নেননি।
কয়েকদিনের মধ্যেই, জন যাদের কাছে এই পদ্ধতিটি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তাদেরই একজন স্যামুয়েল জোনস(Samuel Jones) এতবড় একটি সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেননি। তিনি নিজের নামে এর পেটেন্ট নিয়ে নেন। তিনি অবশ্য এই মিশ্রন ব্যবহার করে লুসিফার (Lucifers) নামক দিয়াশলাই তৈ্রি করেন। এই দিয়াশলাই এর বিক্রয় ছিল অবিশ্বাস্যরকমের বেশী। উল্লেখযোগ্য যে তখন দিয়াশলাই এর এই সহজপ্রাপ্যতা ধুমপানের হার বাড়িয়ে দিয়েছিল।
তবে লুসিফার এর খারাপ দিকও ছিল। লুসিফারের সবচেয়ে খারাপ দিক ছিল এর চরম দূর্গন্ধ এবং প্রজ্জ্বলনের সময়ে আতশবাজীর মত আগুনের ঝলকানি। লুসিফার প্রকৃ্তপক্ষে এমন এক সতর্কসংকেত বহন করেছিল যে, শুধু এর দ্বারা জ্বালানো সিগারেটটাই ক্ষতিকর না বরঞ্চ এটি নিজেও স্বাস্থ্যের পক্ষে চরম হুমকি।
১৮৩০ সালে চার্লস সাওরিয়া(Charles Sauria) নামক একজন ফরাসী রসায়নবিদ এই দূর্গন্ধ দূর করার জন্য লুসিফারের রেসিপি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি রেসিপিতে সাদা ফসফরাস যোগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু মিস্টার সাওরিয়া জানতেননা যে সাদা ফসফরাস, এর সান্নিধ্যে আসা ব্যক্তির জন্য প্রানঘাতীরূপে দেখা দেয়।
তিনি না জেনে হলেও সাদা ফসফরাস মিশ্রনের মাধ্যমে এক ভয়ংকর মহামারীর জন্ম দেন। এই ফসফরাস "Phossy Jaw" নামক এক ভয়ংকর রোগের কারন ছিল। এই রোগে দিয়াশলাই কারখানায় কর্মরত কর্মচারীদের হাড় হয়ে পড়ত বিষাক্ত। ১ প্যাকেট দিয়াশলাইতে যে পরিমান সাদা ফসফরাস থাকত তা ছিল একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট।
অবশেষে ১৯১০ সালে সারা পৃথিবীব্যাপি সাদা ফসফরাসযুক্ত এই দিয়াশলাই বন্ধের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হয়। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে "ডায়মন্ড ম্যাচ কোম্পানি" (Diamond Match Company) নামক একটি কোম্পানি সর্বপ্রথম অবিষাক্ত দিয়াশলাই এর পেটেন্ট করায়। তারা যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে অবিষাক্ত দিয়াশলাই উদ্ভাবন করেছিল তা হল সেসকুইসালফাইড অফ ফসফরাস(sesquisulfide of phosphorous)।
এই আবিষ্কারটি এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম এইচ. টাফট (William H. Taft) "ডায়মন্ড ম্যাচ কোম্পানি" কে অনুরোধ করেন তাদের পেটেন্ট তুলে নিতে, এবং বিশ্বমানবতার জন্য সবার কাছে তাদের এই অবিষাক্ত দিয়াশলাই এর রেসিপি উন্মুক্ত করে দিতে, যাতে সব কোম্পানিই তা অনুসরন করতে পারে। যদিও ব্যাপক মুনাফাগত সম্ভাবনা ছিল কিন্তু তারপরেও "ডায়মন্ড ম্যাচ কোম্পানি" এই মানবিক আহবানে সাড়া দিয়ে ১৯১১ সালের ২৮শে জানুয়ারি তাদের পেটেন্ট তুলে নেয়।
এর পরপরই আমেরিকা কংগ্রস একটি বিল পাস করে যাতে সাদা ফসফরাস যুক্ত দিয়াশলাই এর উপর অকল্পনীয় হারে ট্যাক্স ধার্য্য করা হয় যাতে আর কেউ এই ধরনের দিয়াশলাই তৈ্রিতে উৎসাহী না হয়।
দিয়াশলাই আবিষ্কারের কাহিনী "ম্যাচবুক" এর উল্লেখ ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। "ম্যাচবুক" হচ্ছে আমরা যে দিয়াশলাই ব্যবহার করি, অর্থাৎ কাগজের ফোল্ডারের মাধ্যমে যে দিয়াশলাই তৈ্রি হয় তাই। জোসুয়া পুসি(Joshua Pusey) নামক Pennsylvania এর একজন আইনজীবি ১৮৮৯ সালে ম্যাচ বুক আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের পিছনে একটি গল্প আছে।
একবার তিনি ফিলাডেলফিয়ার মেয়র কর্তৃক একটি ডিনারে আমন্ত্রিত হন। তিনি তার সর্বোৎকৃ্ষ্ট পোশাক পরিধান করে গেলেন সে অনুষ্ঠানে। সবই ঠিক ছিল শুধু একটি জিনিস ছাড়া আর তা হল তিনি যে দিয়াশলাইটা সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। ধুমপান করার উদ্দেশ্যে তিনি কাঠের বাক্সের দিয়াশলাই(তখন তাই প্রচলিত ছিল) নিয়ে গিয়েছিলেন যা তাঁর ওয়েষ্টকোটকে এত ফুলিয়ে রেখেছিল যে তিনি বিব্রত হয়ে গিয়েছিলেন। তখনই তিনি চিন্তা করলেন যে দিয়াশলাই কাঠের বদলে যদি কাগজের তৈ্রি হত তাহলে আরো হালকা এবং ছোট হত।
তিনি এই ধারনার উপর ভিত্তি করে কাজ শুরু করেন। তাঁর ধারনা ঠিক ছিল। কিন্তু তিনি একটু গলদ করে ফেলেছিলেন। তাঁর তৈ্রি দিয়াশলাই এর স্ট্রাইকিং সারফেস টা ছিল ৫০ টা কাঠিযুক্ত দিয়াশলাইএর ভিতরের দিকে। এর ফলে একটি কাঠি জ্বালালে বাকী ৪৯ টিও জ্বলে উঠত।
প্রথম দিকে "ডায়মন্ড ম্যাচ কোম্পানি"র সাথে তাঁর এই "ম্যাচবুক" এর আবিষ্কার নিয়ে মামলা লড়তে হয়েছিল, কারন "ডায়মন্ড ম্যাচ কোম্পানি" প্রায় একই সময়েই "ম্যাচবুক" আবিষ্কার করেছিল। কিন্তু মামলায় মিস্টার পুসি ই জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি অবশ্য "ডায়মন্ড ম্যাচ কোম্পানি"র কাছে তাঁর "ম্যাচবুক" এর সর্বসত্ত্ব ৪০০০ ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। "ডায়মন্ড ম্যাচ কোম্পানি" এরপর মিস্টার পুসির "ম্যাচবুক" এর স্ট্রাইকিং সারফেস বাইরে নিয়ে আসেন এবং "সেফটি ম্যাচ" নামে বাজারজাত করে।
বর্তমান বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ বিলিয়ন দিয়াশলাই এর ব্যবহার হয়।
এর ২০০ বিলিয়ন আসে "ম্যাচবুক" থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।