ক খ গ ঘ ঙ
ব্লগে বিচরনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছি ভিওআপি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের এবং ব্লগারদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ আছে। তাই বিষয়ের উপর আমার যে ধারনা রয়েছে তা সেয়ার করার চেষ্টা করবো এই পোষ্ট এর মাধ্যমে।
ভিওআইপি কি:
ভিওআইপি হচ্ছে ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল। ইয়াহু, গুগলটক বা স্কাইপ এর মাধ্যমে দেশে বিদেশে আমরা যে কথা বলি তা হচ্ছে ভিওআইপির উদাহরন। কম্পিউটারের মাধ্যমে কথা বলার চেয়েও ভিওআইপি আমাদের দেশে বেশি পরিচিত যে কারনে তা হলো মোবাইলে বিদেশ থেকে কল রিসিভ করার জন্য।
মোবাইলে বিদেশ থেকে যখন একটা কল রিসিভ করি এবং দেখি একটা দেশি মোবাইল থেকে কল এসেছে বা কলার আইডির জায়গায় প্রাইভেট নাম্বার লিখা তখন আমরা বুঝি যে এই কলটা ভিওআইপির মাধ্যমে এসেছে। তবে টেকনিক্যাল ডিটেইল সম্পর্কে অনেকের ধারনা থাকলেও সবার তা থাকার কথা নয়। একটা উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটা তাই সহজ করে বলার চেষ্টা করবো।
ধরা যাক আমেরিকায় আপনার এক বন্ধু আছে এবং বাংলাদেশে বসে ইয়াহুর মাধ্যমে আপনি তার সাথে কথা বলছেন। আপনার প্রধান যে সমস্যা তা হলো কম্পিউটারের সামনে বসে কথা বলতে হচ্ছে এবং আপনি কলটা আপনার মোবাইলে ট্রানস্ফার করে নিয়ে কথা বলতে বলতে বাইরে যেতে পারছেন না।
(ধরে নিছ্ছি আপনার মোবাইলে স্কাইপ ব্যবহারের সুবিধা নাই)। আপনার যদি দুইটা মোবাইল থাকে তবে আপনি একটা সমাধান চিন্তা করতে পারেন। কম্পিউটারের হেডফোন খুলে একটা মাইক্রোফোন এবং একটা স্পিকার লাগালেন। একটা মোবাইলকে কম্পিউটারের কাছে রেখে তার লাউড স্পিকার অন করলেন। এবার এই মোবাইল থেকে অন্য একটা মোবাইলে ফোন করলেন।
এখন অন্য মোবাইলটা নিয়ে কথা বলতে বলতে বাইরে গেলেন। যদিও ভয়েস কোয়ালিটি খুব একটা ভালো হবে না তবুও আপনি এভাবে আমেরিকার বন্ধুর সাথে মোবাইল থেকে যোগাযোগ করতে পারবেন। তবে পুরাপুরি বিনা পয়সায় হবে না, আপনাকে মোবাইলের বিল দিতে হবে।
আপনি সেট আপটাকে আর একটু উন্নত করতে পারেন। কম্পিউটারের স্পিকার আর মাইক্রোফোন খুলে তার দিয়ে সাউন্ডকার্ড আর প্রথম মোবাইলের স্পিকার আর মাইক্রোফোন জোড়া দিয়ে দিতে পারেন।
এতে সাউন্ড কোয়ালিটি কিছুটা ভালো হবে। তবে কম্পিউটার থেকে কলটা মোবাইলে ট্রনস্ফার করার জন্য একজন অপারেটর লাগবে। আপনার বন্ধু আমেরিকা থেকে সরাসরি আপনার মোবাইলে কল করতে পারবেন না।
আপনার যদি টেকনিক্যাল জ্ঞাণ খুব বেশি ভালো হয়, হয়তো আপনি অপারেটরের কাজটাও অটোমেটিক করতে পারবেন। আপনি একটা সফটওয়ার তৈরী করলেন যা ইয়াহু আর আপনার প্রথম মোবাইলের অপারেটিং সিসটেম এর সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
(নকিয়া পিসি সুটকে ইয়াহুর সাথে ইনটিগ্রেট করার মতো) এর পর আপনার বন্ধু আমেরিকার কম্পিউটার থেকে আপনার মোবাইলেই সরাসরি কল করতে পারবেন।
এখন আপনার কম্পিউটার টা পুরাপুরি একটা ভিওআইপি গেটওয়ে হয়ে গেছে। আপনি এখন আমেরিকায় লোকজনকে বাংলাদেশে কল করার জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করতে বলতে পারেন। তবে আপনার খরচ (মোবাইল বিল, ইন্টারনেট, কম্পিউটার আর লাভ) তোলার জন্য অবশ্যই যারা বাংলাদেশে কথা বলতে চাইবেন তাদের কাছ থেকে আপনি টাকা নিবেন। এটাই হচ্ছে ভিওআইপির ব্যবসা।
কল টারমিনেট করা কথাটা খুব প্রচলিত এ ক্ষত্রে। আমেরিকা থেকে একটা কল ইন্টারনেটের মাধ্যমে এসে আপনার কম্পিউটারে যে ল্যান্ড করলো এই ঘটনাটাকে বলা হয় কল টারমিনের করা। কল টারমিনেট করার জন্য ভিওআইপি অপারেটরেরা টাকা পায়। কারন পরবর্তিতে তারা কলটা মোবাইলে অরিজিনেট করে মোবাইল ব্যবহার কারীর কাছে পৌছে দেয়। আমেরিকাতে যে কলটা অরিজিনেট করেছে তার জন্য আমেরিকার কোন ফোন কোম্পানি কলারের কাছ থেকে বিল নিবে, এই বিলের কিছু একটা অংশ বাংলাদেশের ভিওআইপি অপারেটর আমেরিকার সেই ফোন কোম্পানীর কাছ থেকে পাবে।
ভিওআইপি কেন অবৈধ:
এখানে মনে হতে পারে যেহেতু বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আসছে তাই ভিওআইপি অবৈধ হওয়াটা অযৌক্তিক। কিন্তু আসলে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই টাকাটা বাংলাদেশে আসে না। উপরের উদাহরণ থেকে যদি ধরা হয় আপনার বন্ধু আমেরিকাতে ফোনের ব্যবসা করেন এবং বাংলাদেশে কল পাঠানোর জন্য তার দেশে একটা ভিওআইপি সেট আপ আছে। এ ক্ষেত্রে তাকে দেশে সেইটুকু টাকাই পাঠাতে হবে যেটুকু তার খরচ হয়, যেমন মোবাইল বিল, ইন্টারনেট বিল আর বাড়ি ভাড়া। সরকার চায় কল টার্মিনেশানের ব্যবসাটা বিটিটিবি করুক।
এতে সরকারের আয় হয়। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার কারনে অনেকটাকাই সরকারের কাছে আসে না। সরকারের কল টার্মিনেশানের রেট এখন মিনিট প্রতি ৪ সেন্ট। কিন্তু আমি ইটালী থেকে মিনিট প্রতি ২.৫ সেন্ট দিয়ে বাংলাদেশে কথা বলতাম। বুঝাই যায় এই কলটা অবৈধ উপায়ে দেশে যেত।
সরকারী প্রচেষ্টা ও ফলাফল:
কারা দেশে ভিওআইপির ব্যবসা করতো বা করে সে বিষয়ে আমার তেমন কিছু ধারনা নাই। প্রচলিত কথা হচ্ছে অনেক রাজনৈতিক নেতাই নাকি এ ব্যবসা করে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করেছেন। এ বিষয়ে তেমন কোন তদন্ত হয়েছে বলে জানিনা। বিগত বছর গুলোতে মোবাইল কোম্পানীগুলোকে জরিমানা করার বিষয়টি বেশ প্রসংশিত হয়েছে। ভিওআইপি থেকে মোবাইল কোম্পানীগুলোর যে আয় তা হছ্ছে ভিওআইপি অপারেটরেরা যে সিম ব্যবহার করে তা থেকে মোবাইল কোম্পানীগুলো প্রচুর বিল পায়।
জেনেশুনে অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছে সিম বিক্রি করার দায়ে মোবাইল কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে কয়েক শ কোটি টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। তবে এতে করে ভিওআইপি বন্ধ হয়নি।
কারন এই অবৈধ ব্যবসা যারা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন সরকারই তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কি কাজে সিম ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েও বাংলাদেশে সিম সংগ্রহ করা কোন কঠিন কাজ নয়। তাই এখনো এ ব্যবসা চলছেই।
সূধিজনের মতামত হচ্ছে সরকারের উচিৎ ছিল ভিওআইপিকে বৈধতাদেয়া এবং এ সব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ট্যাক্স নেয়া। আবশেষে সরকার ভিওআইপি কে বৈধতা দানের জন্য কিছু গেটওয়ে অপারেটর স্থাপন করেছে। কিন্তু এদের টারমিনেশান চার্য বেশি হওয়ার কারনে অধিকাংশ কলই অবৈধ পথেই যাচ্ছে এখনো।
আমার কথা:
আমার এবং আমার স্ত্রীর মোবাইলে স্কাইপ ইনস্টল করা আছে। তাই আমি দেশে যখন আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলি তখন ভিওআইপির মাধ্যমেই মোবাইলে কথা বলি।
কিন্তু কোন ভিওআইপি অপারেটরকে টাকা দেই না। সরকারও আমার কাছথেকে টাকা পায় না। জানি না এভাবে কথা বলা অবৈধ কিনা। তবে জানি দেশে যখন মোবাইল ইন্টারনেট আরও বেশি সহজলভ্য হবে (৩জি, ওয়াই ম্যাক্স আসার পর) তখন সবাই আমার মতোই কথা বলবে, তখন সরকার কোনো ভাবেই তা বন্ধ করতে পারবে না।
মানুষকে শুবিধা দেয়ার জন্যই নতুন নতুন টেকনোলজির আবিষ্কার।
সরকারের উচিৎ নয় এ শুবিধা থেকে মানুষকে বন্চিত করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।