যদি কখনও সুযোগ পাই, সাত বাজারের চুড়ি এনে দেব, যত্ন করো!
আমাদের বন্ধুদের একেএকে অনেকেই যখন ঢাকায় চলে আসল, তখন আড্ডার একটা কমন স্পেস খুব দাকার হয়ে পরছিল। সবার জন্য সুবিধা হয় এরকম একটা প্লেস পাওয়া আসলেই খুব টাফ ছিল। একএকজন এক এক দিকে থাকে। অফিস আরেক দিকে, আবার অনেকেই তখনও বেকার, সব কিছু চিন্তা ভাবনা করে এমনিতেই একটা জায়গা হঠাৎ ডিফল্ট হয়ে গেল আমাদের মাঝে। সেটা বিজয় স্মরণীর নভোথিয়েটারের সামনে।
নভোথিয়েটারের দাই টিকেট কাউন্টারের মাঝে যে ফাঁকা জায়গাটা আছে, সেটা ছিল আমাদের বসার কমন স্পেস। আমাদের মাঝে যে আগে আসত, সেই আগে এটা দখল করে বসত। মাগরিবের পর থিয়েটার বন্ধ, আরামে বসে একটানা রাত দশটা পর্যন্ত আড্ডা চলত। আশে পাশে খোলা স্পেসের কারণে প্রচুর বাতাস, ভালই লাগত। হানিফ, আমি, মিল্টন আর ইকবাল ছিলাম কমন।
কখনও আতিক, জনি ভাই, জোহা ভাই, সাইফুল আসত। এভাবে সোয়া একবছর পার করার পর গত ৩/৪ মাস যাবৎ এই আড্ডাটা বন্ধ। সবাই ব্যস্ত। কাররই তেমন একটা আর সময় হয় না। তারপরও মাঝে মাঝে বসার চেস্টা করি।
গতকাল আমি, হানিফ আর রোমেন আড্ডাইলাম কিছুক্ষন। রোমেন বিয়ে করবে, মেয়ে খুজতেছে। শর্টলিস্টও করছে। ১জনকে আবার টপ প্রাওরিটি দিছে। আমি বললাম যাকে মনে ধরছে তাকে সব বলছস? সে বলল না, ক্লিয়ারলি কিছু বলি নাই।
এবার আমি তাকে একটা গল্পের কথা বললাম। ঠিক গল্প না, আমাদের আগের অফিষ থেকে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ট্রেইনিং হত। টেলিকম রিলেটেড টেকনিক্যাল ট্রেনিংই বেশী হত তবে মাঝে মাঝে কাস্টমার রিলেশন ডেভেলপ করার জন্য অন্যরকম কিছূ ট্রেনিং হত! এরকম একবার এক ট্রনার এসছিল যিনি মার্কেটিং বা কাস্টমার রিলেশনে বেশ ওস্তাদ মানুষ। তিনি আবার বিভিন্ন দেশ থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত। ত আমাদেরকে এক ট্রেনিংএর কথা বলছেন যে ঐ ট্রেনিং এ তারা গিয়ে দেখলেন বোর্ডএ বড় করে 'DO' লেখা আছে।
ইন্সট্রাক্টর কোন এক বিখ্যাত ব্যক্তি, তিনি এসে বললেন DO! তারা কেউই কিছু বুঝছেন না। পরে ঐ ইন্সট্রাক্টর ব্যাখ্যা করলেন এরকম যে যদি কোন কিছু করতে মন চাই, সিম্পলি করে ফেলবেন। যেমন কোথাও যদি কারও কোন মেয়েকে পছন্দ হয়, তাহলে সিম্পলি তাকে তা জানিয়ে দেয়া, সরাসরি। এটাই হচ্ছে 'ডু'! আপনি মনে মনে কাউকে পছন্দ করলেন, কিন্তু তা মনে পুষে রাখলেন, তাহলে তো সে কখনও জানতেই পারল না যে আপনি আসলে কি চান। জানিয়ে দিলে ২টা সম্ভাবিলিটি তৈরী হতে পারে, হয় সে গ্রহণ করবে, না হয় রিফিউজ করবে।
৫০-৫০ চান্স! যদি গ্রহণ করে তাহলে তো ভালই, আর না করলেও খারাপ না। সে ক্ষেত্রে আপনি বাড়তি ঝামেলা থেকে বেঁচে গেলেন। রিফিউজ করার ক্ষেত্রেও ২টা সম্ভাবিলিটি। হয় ভাল করে বুঝিয়ে বলবে, না হয় অপমান করবে। এখানেও ৫০-৫০! ১মটা হলে ত ওকে।
২য়টা হলে একটু সমস্যা। ঐটা হয়ত আপনাকে বিব্রত করতে পারে। তবে সেই চিন্তা করে লাভ নেই এখন। কারণ নো পেইন, নো গেইন। একটু রিস্ক তো নিতেই হবে।
তখন না হয় অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা দেয়া যাবে। ...
এই কথা রোমেন শুনে খুব ইন্সপায়ারড হল। আসলেই, এই থিওরী আগে জানলে তো সে অনেক আগেই এপলাই করত! তাকে বললাম, এখনও সময় আছে, করে ফেল। ৫০-৫০! সে মহা খুশি। এবার মনে হয় সে কিছু একটা করেই ছাড়বে।
ঐ ট্রেনিংএ আমাদেরকে আরও একটা প্রশ্ন করেছিলেন, বাংলাদেশের সেরা সেলস ম্যান কে? ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে পারি নাই। বানিজ্য বিষয়ে আমার আইকিউ একেবারে গাধা পর্যায়ের। আমাদের এক হালকা বেকুব বলে উঠল গ্রামীনের রুবাবা দৌলা মতিন? উত্তরটা শুইনাই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। ঐ ভদ্রলোকও না করে দিলেন। তিনি আমাদের কাছ থেকে আর কোন রেসপন্স না পেয়ে একটা নাম বললেন, সালমান এফ রহমান, তারপর আবুল আউয়াল মিনও... ব্যাস আমার সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে।
এবার বুঝতে পারলাম তিনি সেলসম্যান বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছেন। আমি বলা শুরু করলাম হুমায়ুন আহমেদ, ডঃ জাফর ইকবাল। তিনি সায় দিচ্ছেন আমার সাথে, এই দুই ভাই আমাদের তরুন প্রজন্মের কাছে বই কেনার মানসিকতা তৈরী করেছেন, বই বেচছেন... আরও বললাম ব্যাংকার মামুনুর রশীদ, ডঃ ইউনুস.., কিন্তু যে কথা বলতে পারলঅম না সেটা হল আমাদের রাজনীতিবিদ। তারাও তো সেলসম্যান একপ্রকার। পুরা দেশটাই বেচতেছেন।
সাথে আছে দুর্নিতীবাজ, বন খেকো, খাম্বা কিংবা এরকম আরও!
ফিরে আসার সময় দেখলাম ফুটপাথে অনেক পরিবার বসবাস করছে। এটা ঢাকার চিরাচরিত দৃশ্য। ছোট ছোট বাচ্চারা রাস্তায় ঘুমাচ্ছে, খাচ্ছে, বড় হচ্ছে। কেন জানি মনে হয় ওদের অভিশাপ আমরা, আমি বয়ে বেড়াচ্ছি। ওদের দেখে একটা গান মনে পরে গেল, লাইনটা এরকম, "রেমনেন্টস অব ডাইং লাফটার, ইকোস অব সাইলেন্ট ক্রাইজ!" এনাথেমার কোন এক গানের লাইন।
এই ব্যান্ডটা সম্বোন্ধে তেমন কাউকে বলতে শুনি নাই। তবে তাদের কিছু কিছূ গান খু্বই সুন্দর। সুররিয়ালজম (Surrealism) কি আমি তেমন একটা জানি না। বুঝি কম। তবে তাদের এরকম কিছু গান এই সুররিয়ালজম এর ভাব জাগিয়ে তুলে, অন্তত আমার কাছে মনে হয়।
একটু পিংক ফ্লয়েডিশ টাইপের। তবে পুরাপরি না। সিড ব্যারেটের লিরিক আর রজার ওয়াটার্সের কম্পোজিশনে যা হয় আরকি!
ছোট কাল থেকেই শুনে আসতেছি পিআরএসপি, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা পন্চ বার্ষিকি পরিকল্পনা। এগুলাতে হয়ত দেশের অনেক উন্নয়ন হয়, দারিদ্র বিমোচন হয়, কিন্তু রাস্তার মানুষ রাস্তায়ই থেকে যায়, ওখানেই তাদের দেখি। তাদের কোন উন্নতি হয় না।
আমরা জনগণ সাইলেন্ট মুডে তাকিয়ে থাকি। এক বন্ধু আজকে করিম সালামার গানের একটা লিংক দিল। লিরিকের দুটো লাইন এরকম, "And don’t you see how we fear the patient eyes of a lion.
And don’t you see how we fear those lions in their silence"
আমরা ঐ সাইলেন্ট লায়ন হয়েই থাকব মনে হয়। কখনও হুংকার দিবনা। আমাদের সেলসম্যানরা আমাদের প্যাশেনসকে ভয় পায় না।
প্রসঙ্গ শিরোনাম : "বন্যেরা বনে সুন্দর, রাজাকাররা পাকিস্তানে!" - নভোথিয়েটারের একটা টিকেট কাউন্টারের দেয়ালে এই লেখাটা দেখতে পেলাম। আগে কখনও দেখিনি। কেউ মার্কারে এই চিকা মারছে। দেখে খুব পছন্দ হল। খাঁটি কথা।
মানুষ তাদের ক্রোধ লুকাতে পারছে না। আমি ভাবি তাহলে আমাদের রাজনীতিবিদ বা সমাজপতিরা কোথায় সুন্দর? কোথায় তাদের ভাল মানাবে? জেলে তো ছিল, থাকতে বা রাখতে পারে নাই। চিরস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী (ক্ষণস্থায়ী রাজনীতিবিদদের একটা ফর্ম আমরা গত 'আর্মি ব্যাকড গভর্নমেন্টের' সময় দেখেছি) রাজনীতিবিদ কাউকেই ত কোথাও মানাচ্ছে না। সেলসম্যানরা দেশ বেচতেছে, পাপ করতেছে আর অভিশাপ বহন করছি আমরা.... "ইকোস অব সাইলেন্ট ক্রাইজ"... আমার কানে গানটা শুধু বেজেই যায়!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।