আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!
ঝড়ের গতিতে অফিস চলছে। আমরা যখন একটা মিটিংএর ইনভাইটেশন পাঠাচ্ছিলাম, তখন তার আগেই আরেকটা মিটিং এর ইনভাইটেশন চলে আসলো। নিজেকে মনে হলো এমন এক চিজ যাকে মাইনকা চিপায় ফেলায়া টানাটানি করছে ম্যানেজম্যান্ট ও অন্যান্যরা। সারা দিন ডকুমেন্টস, টার্গেটস মিট করার তাড়া করার: মনে হয় দিন গুলা আজকে খুব দ্রূত চলে গেলো।
দিন যখন যেদিন দ্রূত যায় তখন একটা কথা মনে হয়, মৃত্যু খুব কাছে এসে পড়লো বলে: স্বাগতম বৃদ্ধ জীবন!
জীবনে কি করেছি না করেছি, পাপ কত, পূন্য কত এসব হিসাব এড়িয়ে চলি, তবুও দেখা যায় গাড়ীতে বসে পাশে যখন কোনো হুজুর বসে তখন তার বয়ান শুনলে একটা কথা মনে পরে যায়: এখনই সময়!
: আস্লামুআলাইকুম
: ওয়ালাইকুম
: (আমি পুরা উত্তর দেই নাই বলে চেহারা বিমর্ষ করে) ভাইজান এইটা কি গুলিস্তান যাবে?
: না, আজিমপুর যাবে। সমস্যা নাই টিকিট যখন কাটছেন, তখন ঐখান দিয়া অনেক গাড়ী পাবেন।
: কিন্তু কন্টাক্টর যে কইলো গুলিস্তান যাইবো এইটা?
: আমার মনে হয় না!
: (আরো চিন্তিত মনে কন্টাক্টরকে কাছে ডেকে) ভাই এইটা বলে গুলিস্তান যাইবো না? আমারে উঠাইলেন কেন?
কন্টাক্টর কপাল কুচকিয়ে ঝাড়ি দিলো: আপনেরে গুলিস্তান নামাইলে হইবো? চুপচাপ বইসা থাকেন।
ঝাড়ি খেয়ে হুজুর বসে পড়লো যেনো উনার মাথায় নূরানী ঠাটা পড়ছে আকাশ থেকে। বিড় বিড় করে তওবা পড়তে পড়তে এবার আমাকে ধরলো: দেখছেন ভাইজান, কোনো আদব নাই।
দেইখা বুঝোনোও যায় না এইডা হিন্দু না মুসলমান?
: হুমম...(গম্ভীরভাবে)
: আসলে আমাদের মাঝে নবীজির আকীদা নাই বলেই আজকে আমাদের এমন দুরবস্হা। নামাজ-কালাম, রোজা কিছুই দেখা যায় না। কলেমাও মুখস্হ পারে না ইদানিংকার ছেলে পেলে।
: হুমমম...(গম্ভীরতর হয়ে)
: কাউরে কিছু কইলেই সবাই এড়ায়া যায় নাইলে হুজুর বইলা গালি দেয়। এরকম চলতে আছে বইলাই আমাদের উপর এমুন গজব।
: হুমমম.. (আরো গভ্ভীরতর হয়ে)
: ভাই আপনের নাম টা জানতে পারি?
: হুমমমম...(আরো উচ্চ গম্ভীরতর হয়ে)
আমার এহেন হুমম মার্কা আচরন দেখে ভদ্রলোক আশাই ছেড়ে দিলেন ন্যায়বিচারের। উনি বায়ে তাকাতে লাগলেন পাশের সীটে বসা ভদ্রমহিলার দিকে। কিন্তু বেশীক্ষণ তাকাতে পারলেন না কারন ভদ্রমহিলার শাড়ী পড়ার স্টাইলটা একটু আধুনিক। উনি বসে বসে আল্লাহ করতে লাগলেন আর আমি ভাবতে লাগলাম: আসলেই ভালো কথার দাম নেই।
অনেকসময় অলস সময় কাটানোর জন্য নানা পদক্ষেপ হাতে নেই।
কিছুদিন আগে একটা কাজ করতাম রাস্তার পাশে দাড়িয়ে 'মামা' বলে জাহাঙ্গীরনগরের বাসে উঠে চলে যেতাম। ক্যাম্পাসে নেমে ঘুরতাম। একবার কি মনে করে শনিবার দিন সকাল সকাল চলে গেলাম। সারাদিন বসে রইলাম পুকুরের পাড়ে। ওখানে অবশ্য অনেক পুকুর।
মাঝে মাঝে ক্যাফেটেরিয়া অথবা শহীদ মিনারের সামনের জলা। ওখানে একটা হালকা গোলাপী রঙ্গের ফুল গাছে আছে। ওটার দিকে চেয়ে থাকি আর নাম জানার চেস্টা করি নিজে নিজে। সেদিন রাতের বেলা শুরু হলো মোবাইল ফিল্ম ফেয়ার। আমিও ঝাকের কইয়ের মতো মিশে গেলাম।
বেশ ভালো মোবাইল চলচ্চিত্র বানিয়েছে হলে থাকা ছেলে পেলে, প্রশংসা না করে পারা যায় না। আমার সামনে বসা এক যুবক হঠাৎ নাক চেপে বললো: ঐ, কেডা চানাচুর খাইয়া আইছে?
পাশের একজন তাকিয়ে বললো," ব্যাটার বদ হজম হইয়া গেছে!"
ঐ ছেলেটি আবার বললো, "আরেকটা ছাড়লে খবর আছে!"
৫ মিনিট পর আবারও গন্ধ আসলো নাকে। আমি ভয়ে কিছু বললাম না, কিন্তু পাশের ছেলে দাড়িয়ে মাথা খুজা শুরু করলো দম বন্ধ করে। কিছু বুঝতে না পেরে বললো," ঐ, কার বদজম হইছে? এইখানে পরিবেশ কেনো নস্ট করতাছে? দয়া কইরা টয়লেটে যান?"
সে বসতে না বসতেই এমন সময় একটু সামনে বসা একটা শর্ট কামিজ পড়া মেয়ে উঠে যেতে দেখে ছেলেটি আমাকে বললো," ভাইজান, কি যে হইলো কিছু বুঝতাছেন?"
: এই ফিল্মটা দারুন বানাইছে। মনে হয় এন সিরিজের মোবাইল!
: হ এইডা ঠিক কইছেন! তা আপনে কোনো ডিপার্টমেন্টের? আগে তো কখনো দেখি নাই?
: জ্বি আমি ক্যাম্পাসে খুব একটা থাকি না, আমি নৃতত্বে পড়ছি!
: ও আচ্ছা।
ছেলেটি সামনে তাকিয়ে মুভী দেখতে লাগলো!
রাত অনেক হয়ে গেলো, ভাবলাম বাড়ি যাই কারন সকালে অফিস। ওভার ব্রীজের ওপাশে রাস্তায় দাড়িয়ে বুঝলাম হিসাবে একটা গন্ডগোল হয়ে গেছে। কারন গাড়ী নাই।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম সমস্যা অন্যরকম ভয়াবহতার রূপ নেয়। কোনো সময় প্রকট অথবা কোনো সময় গায়ে না লাগানোর মতো গুরুত্বহীন।
সেটা ভেবেই গাবতলীতে নেমে হাটছি। দেয়ালের পাশে তাকাতেই একটা পোস্টারে আমার চোখ আটকে গেলো। পোস্টারটা হলো এলাকার ছাত্রলীগের কোনো এক নেতার আগমনে বিশাল জলসা, বা পাশের উপরের ক্যাপশনে বন্ঙ্গবন্ধুর গর্বিত ঠাটানো চাহনী আর তার বুকের নীচে তাকিয়ে আছেন লাস্যময়ী হাসিনা। দেখে মনে হলো বঙ্গবন্ধু এমন সাহসী দৃস্টিতে তাকিয়ে আছেন বলেই তার এই লাস্যময়ী হাসি। আর সেই ছোট্ট ক্যাপশন ওয়ালা ছবির ডানে নীল শাড়ি পড়ে দাড়িয়ে আছে মমতাজ, মুখে তার দুস্ট হাসি।
আমি বুঝলাম না জলসার সাথে তার কি সম্পর্ক? আরেকটা জিনিসও বুঝলাম না মমতাজ আড় চোখে ডানে তাকিয়ে আছে কেন? পোস্টারের ডানে আবার আরেকটা পোস্টার সেটা হলো মাথায় ব্যান্ডেজ ওয়ালা চোখ বুজু বুজু কেযেনো চেয়ে আছেন যার উপরে লেখা বিগত বিএনপি সরকারের আমলের সাবেক এমপির আশীর্বাদ পুস্ট কোন জায়গার কোন নেতাকে নাকি পিটায়া তক্তা বানায় দিছে আর সেজন্য সব এলাকার বিএনপি সমর্থক আর আমজনতা বিচার চাইছে যদিও আমি জানি না আমি আমজনতা হইয়াও তার বিচার কেনো চাইলাম না!
আমার কাছে মনে হলো মমতাজ এজন্য হাসছে যে ঐ নেতা খুব সম্ভবত গত সরকারের আমলে তারে বহুত জ্বালাইছে তাই এই সরকারের পুলাপান যখন তার চেহারায় সীল মাইরা দিছে সেইটা দেইখা সে খুব খুশী আর তাই জলসায় গান গাইতে আসছে।
যদিও এটা কাকতালীয় কিন্তু ভাবতে ভালোই লাগলো এহেন কোনো ঘটনা নিয়ে। এসব ভাবতে ভাবতে যখন হিস্যু করছিলাম ফুটপাথের উপর তখন দেখি দুটা ছেলে হাতে থাকা চাইনিজ মোবাইলের গানের সাউন্ড কমিয়ে পোস্টারের সামনে আসলে। এসে মমতাজের বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলে ছবি তুললো। কি খায়েষ এতটুকু পোলাপানের! হরমোন মাথায় চইড়া আছে মনে হয়!
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেস্টা করতেই দেখি কয়েকজন লোক আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
তখন ব্যাপারটা মনের মাঝে খটকা লাগলো, এতক্ষণ মমতাজকে নিয়ে যা ভাবলাম এমনকি হয়তো এটাও হতে পারে এরা আমাকে এই পুচকে পুলাপানের মনের খায়েসের সাথে আমার মনের খয়েস মিলিয়ে ফেলছে না তো?
আমি হাটা ধরলাম সোজা, বাড়ি যাবো, কারন বাবা অলরেডী ১২ টা কল দিয়ে ফেলেছে!
এখনো অফিসে বসে। একটু আগে শুনলাম মহাখালীতে মেট্রো পলিটন হাসপাটালের সামনে পেট্রোল পাম্পে আগুন লাগছে। সবাই জানালা দিয়ে দেখছে। ভাবলাম কিছু এসএমএস করি:
প্রথম এসএমএস: মহাখালির মোড়ে (মেট্রোপলিটন হাসপাতালের অপজিটের পেট্রোল পাম্পে) আগুন লাগছে। রোড বন্ধ।
সাবধান!
পাঠিয়ে দিলাম ৫ জনকে। ৪ জন ব্যাক করলো যে তারা সাবধানেই আছে!
১০ মিনিট পর আরেকটা এসএমএস: মহাখালীতে রায়ট শুরু হয়ে গেছে। পেট্রোল পাম্পে বাস্ট হবার কারনে রাস্তা ঘাটে লাশের ছড়াছড়ি। পুলিশ লাঠি পেটা করছে উত্তেজিত জনতাকে। গাড়ি ঘোড়ার ব্যাপক ভাংচুর।
লুটপাট চূড়ান্ত। সাবধান।
এবার ঐ ৪ জনকে পাঠালাম! একজন পাঠালো: ঐ মিয়া গান্জ্ঞা মারো কেন? আমি এখন মহাখালির মোড়ে, রাস্তাঘাট ফাকা!
আর বাকি কয়েকজন এসএমএসে জানালো: আমি বাসায় যাবো কিভাবে? এভাবে কি চলতে পারে? আমি এখন কি করবো?
আমি ভাবলাম গুজব ছড়ানোর ভালো একটা মাধ্যম এসএমএস। তবে বসের দেখা পাচ্ছি না। ৪ টা প্রেজেন্টেশন তৈরী করে বসে আছি কিন্তু উনি মিটিং এ।
উনি এসব এ্যাপ্রুভ করলে তবেই কালকের মিটিং গুলোতে দেখাতে পারবো। আমি কখন বাসায় যাবো আল্লা জানেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।