আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই বৈশাখে

যদি এ আমার হৃদয়দুয়ার বন্ধ রহে গো কভু দ্বার ভেঙে তুমি এসো মোর প্রাণে, ফিরিয়া যেয়ো না প্রভু।
(এই গল্পটা উৎসর্গ করলাম ব্লগার সহেলীকে, যে টিপ খুব পছন্দ করে, কোন ছুঁতো পেলেই তার গল্পে টিপ নিয়ে হাজির হয়। আর শওকত হোসেন মাসুম ভাই, পারভেজ ভাই এবং ছন্নকে--যারা আমাকে লিখতে উৎসাহিত করেন। ) ভোর ছয়টায় বারান্দায় বেরিয়ে এসে রুচিরা অবাক হয়ে যায়। চারিদিকে রঙ্গীন আলোর বন্যা।

লাল, সাদা, সবুজ কত রঙ্গের নারী-পুরুষ দল বেঁধে ছুটছে। উদ্দেশ্য রমনা। রিক্সার টুংটাং, গাড়ীর শব্দ আর মানুষের কোলাহল মিলে মিশে একটা সঙ্গীতের মত হয়ে গেছে। হুম হুম একজাতীয় শব্দ হচ্ছে। রুচিরা বারান্দা থেকে সরে আসে।

টিভিতে নিশ্চই লাইভ দেখাচ্ছে রমনার উৎসবটা। কিন্তু টেলিভিশনটা বেড রুমে। রাসেলের ঘুম ভাঙ্গানোর সাহস পায়না সে। পা টিপে টিপে রান্নাঘরে ঢুকে খুব নিঃশব্দে নিজের জন্য এককাপ চা বানায় আর টিন খুলে মা'র হাতে বানানো এক মুঠো মুড়ি নিয়ে, সকালের নাস্তা সারে একা একা। এ বাড়িতে মানুষ মাত্র তিনজন।

রুচিরা, রুচিরার মেয়ে আর রাসেল মানে- রূপসীর বাবা। বাবা মেয়ে দুজনেই ঘুমাচ্ছে। মেয়ের ঘরে মেয়েকে দেখে আসে একবার। ঘুমন্ত মেয়েটাকে যে কি সুন্দর দেখাচ্ছে! এবার রুচিরা রান্না ঘরে ঢোকে আজকের স্পেশাল মেন্যু নিয়ে "ইলিশ আর পোলাও" জানে এ দুটোই সবার প্রিয়। রান্না শেষ করতে বৈশাখের গুমোট গরমে ঘেমে নেয়ে ওঠে।

আজকের সকালটায় আকাশে একটু মেঘও আছে যেন। তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নেয়। একটা সুতি অফ হোয়াইট এবং লাল কালোর দারুণ কাজ করা শাড়ী পরে। শাড়িটা পরে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই নিজের বয়স-অনেকটাই কমে যায়। একটা টিপ পরতে ইচ্ছা করে ওর।

কিন্তু কোথাও একটা টিপ খুঁজে পায়না। সে টিপ পরে না আজ প্রায় দশ বছর। রাসেল টিপ পরা খুব একটা পছন্দ করে না। নিজের ছোট্ট স্টাডি রুমটায় এসে স্টিরিও টা ছেড়ে দেয়। শ্রীকান্ত আপন মনে রবীন্দ্র সঙ্গীত গায়----রুচিরা মুগ্ধ হয়ে শোনে।

জীবনে আমার সঙ্গীত দাও আনি, নীরবে রেখোনা তোমার বীণার বাণী প্রিয়তম হে জাগো, জাগো। মিলাবো নয়ন তব নয়নের সাথে, মিলাবো এ হাত তব দক্ষিণ হাতে-- প্রিয়তম হে জাগো জাগো। । সকাল বেলাই গান শুনতে শুনতে রুচিরা কেমন যেন হয়ে যায়। ও গানের গভীরে প্রবেশ করে।

ওর হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে সুর খেলা করে, "প্রিয়তম হে জাগো জাগো"। এই বৈশাখের সকালটাই ওর কাছে অন্যরকম হয়ে যায়। কি সুন্দর সকাল; জানালার পর্দা সরিয়ে দেয়। বাতাসে ভেজা গন্ধ। বৃষ্টি হবে মনে হয়।

প্রতিদিনের দেখা সকালটাকে আজ ওর একেবারে অন্যরকম মনে হয়। আজ কেউ ঘুমিয়ে নেই। গোটা শহর জেগে গেছে। রাস্তায় রাস্তায় রঙ্গীন আলোর বন্যা। সাদা লাল সবুজ, উজ্জ্বল চোখ ধাঁধানো সব রঙ্গের মানুষ ধেয়ে চলছে-- কি তাদের কলকাকলী।

রুচিরা ধ্যানস্থ হয়। এই কি হল? রুচিরার ধ্যান ভাঙ্গে। ওর কথা বলতে ইচ্ছা করে না। সঙ্গীত ওর জীবনে থেরাপির মত কাজ করে। ও আরোগ্য হয়।

কোথাও কি বজ্রাঘাত হয়? ও থমকে যায়। না বজ্রাঘাত না। রাসেল চেঁচাচ্ছে। গানটা একটু কমাও নারে ভাই! দিলে তো সকাল বেলার ঘুমটা মাটি করে। রুচিরা তাড়াতাড়ি শব্দটা কমায়।

শব্দটা সহনীয়ই ছিল কিন্তু রাসেল এসব সঙ্গীতে টঙ্গীতে নেই। ওকে শিল্প সাহিত্য বা সংস্কৃতির বিষয়গুলো খুব একটা আলোড়িত করেনা। পুরো দস্তুর সংসারী এবং বাস্তববাদী মানুষ। রুচিরা রাসেলের চিৎকার গায়ে মাখেনা। " ওর শরীর জুড়ে সুর---"প্রিয়তম হে জাগো জাগো"।

ও রাসেলকে জাগাতে চায়। বেড রুমে গিয়ে রাসেলকে জাগানোর চেষ্টা করে। এই ওঠো নয়টা বেজে গেছে। চলোনা বাইরে যাই। সবাই বেরুচ্ছে।

রাসেল খুবই বিরক্ত হয়। এই বয়সে তোমার এত রোমান্স আসে কি করে? সারা সপ্তাহ খেটে একটা দিন ছুটি পেয়েছি--তোমারও তো তাই। তুমিও রেস্ট করো না কেন? এই সকালেই আবার বাইরে যাবার চিন্তা। ------- বাদ দাও। রুচিরা জবাবে কিছু বলে না।

চুপ করে সরে আসে। জানে, রাসেলকে সাধলেও কোন লাভ হবে না। সংসারে আজকাল রুচিরা বলার মত কোন কথা খুঁজে পায় না। একবার শুধু বলে, কি খাবে? এইটা একটা কাজের কথা বলেছ, আজ একটু পোলাও কর, আর ইলিশ ভুনা। ১২ টার দিকে আমাকে তুলে দিও।

একসঙ্গে লাঞ্চ করবো। একবার ঘুম জড়ানো কন্ঠে রাসেল বলে, তুমি সকালে নাস্তা করে নিও কিন্তু। রুচিরা মন খারাপ করে স্টাডি রুমে এসে একটা বই নিয়ে বসে। এগুলো রুচিরাকে আজকাল আর স্পর্শ করে না। নিয়ম রক্ষার এই সংসারে রুচিরা অনেক নিয়মেই আজকাল অভ্যস্থ হয়ে গেছে---- ।

হঠাৎ কে যেন ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। নরম দুটো হাত। ওর গালে গাল ঘষে। মা তোমার গায়ে কি সুন্দর গন্ধ! দেখি দেখি, সামনে এসে হাঁটুতে থুতনী রেখে চৌদ্দ বছরের রূপসী বলে, মা তোমাকে তো খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। যা তোকে আর পাকামো করতে হবে না।

ফ্রেশ হয়ে আয়. দশটা বাজে। কি খাবি বল? মা, আমি একটু পান্তা খাবো। হুম তোর জন্য ফ্রেশ ভাত রান্না করেছি সকালে। পানি দিয়ে মাখিয়ে দেব। না আমি ঐ পান্তা খাবো না।

ক'দিন ধরে বলছি--- আমি একটু সত্যিকার পান্তা খাবো, এমন করো কেন আমার সঙ্গে? রূপসী অভিমান করে উঠে যায়। বাথরুম থেকে চেঁচিয়ে বলে, আমাকে পান্তা আর কাঁচা মরিচ না দিলে সকালে আমি কিছুই খাবোনা। এমন সময় রাসেল গজ গজ করতে করতে বেরিয়ে আসে বেডরুম থেকে। তোদের মা মেয়ের অত্যাচারে সকালে যে একটু আরাম করে ঘুমোবো তার উপায় নেই। কি হয়েছে রে রূপা? তোমার মেয়ে অরিজিনাল পান্তা খাবে।

বাসী ভাতের পান্তা। একটু দেই না হয়, কি বলো? তুমি যে একটা কি না? মেয়ে বল্লো আর অম্নি তুমি রাজী হলে--- এই পান্তা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে। কত অস্বাস্থ্যকর সেটা তোমার খেয়াল আছে। রাসেল ঘরে পরার চটি জুতোয় ফট ফট শব্দ তুলে ফ্রেশরুমে যায়। খাবার টেবিলে রূপসী ফিসফিসিয়ে বলে, মা একটা কাঁচামরিচ দাও না? প্লীজ।

ওর কন্ঠে অনুনয়। এই নে। বাবা বেরুনোর আগেই শেষ করো। রুচিরা টেবিলে এক চামচ চিনি এনে রাখে। মেয়েটার এরকম ঝাল খাবার একদম অভ্যাস নেই।

ছুটির দিন সকালবেলা রাসেল ফ্রেশ হতে অনেক সময় নেয়। সেই ফাঁকে রূপসী বাসী ভাতের পান্তা আর কাঁচামরিচ শেষ করে। মেয়েটার এমন গব গব করে খাওয়া দেখে রুচিরার খুব কষ্ট হয়। আসলে রাসেল এরকমই। মানুষ হিসেবে খারাপ না।

সৎ। বাবা হিসেবে চমৎকার। পরিবারের প্রতি যত্নশীল। কিন্তু দুজন ভালো মানুষ হলেই যে চমৎকার বোঝাপড়া হবে এমন নয়। রুচিরা এবং রাসেল মানুষ হিসেবে যতটা ভালো, বন্ধু হিসেবে বোধ হয় ততটা নয়।

আর যাই হোক স্বাপ্নিক এবং কিছুটা ভাবুক রুচিরার এই ভাবালুতা রাসেলের কাছে কখনই প্রশ্রয় পায়নি। মা তাড়াতাড়ি এসো। রুপসী চেঁচায়। আসছি। শাড়ীটা পরিয়ে দাও না-- পরতে পারছি না তো? রুচিরার খুব হাসি পায়।

তার চৌদ্দ বছরের মেয়ে আজকে শাড়ি পরে বেরুবে। গত ক'দিন ধরে মেয়েটা বায়না ধরেছে, একাই বন্ধুদের সাথে একটু বেরাবে। ঝুম্পা, কাকলী, মনি এদের অবশ্য রুচিরা ভালো করেই চেনে। আর তাছাড়া-- রুচিরা বলেছে ঝুম্পার মাও থাকবেন সাথে। ঝুম্পার মা খুব আমুদে মহিলা।

মেয়েদের সাথে চৌদ্দ বছরের হয়ে যান। বাচ্চারা সবাই ওর সঙ্গ খুব পছন্দ করে। সেই অনুমতি মিলে যাওয়াতে রূপসী মহা খুশী। মনের আনন্দে উড়ছে। শাড়ী পরানো হতেই আয়নায় অসংখ্যবার নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে।

মাকে অন্তত এর মধ্যে বিশবার বলেছে, মা আমাকে কেমন লাগছে? রুচিরা অবাক হয়ে দেখে--- নিজের ছায়া দেখতে পায়। ও কখনই তার মেয়ের মত এত সুন্দর ছিল না, কিন্তু দুচোখ ভর্তি মেয়ের মতই স্বপ্ন ছিল। শৈশবে রুচিরার সময়টা ওর অনুকূলে ছিল। মাত্র বিশ বছর আগেও মফঃস্বল শহরেও দিনে বা সন্ধ্যায় নিজস্ব অভিভাবক ছাড়াই মেয়েরা স্কুলের শিক্ষক বা পাড়ার বড় ভাইদের তত্ত্বাবধানে খোলা মাঠে হারমনিয়াম বাজিয়ে গান করতে পারতো। কবিতা পড়তে পারতো।

উপচে পরা লোকেরা কাউকে পীড়িত করতো না। বরঞ্চ অনুষ্ঠান শেষে শস্তা উপহারের বন্যা বইয়ে দিত, পাড়ার বৃদ্ধ-যুবকেরা। দুই একজন সাহস করে প্রেম পত্র দিলেও তাতে কুৎসিত কোন ইঙ্গিত থাকতো না। নাম উল্লেখ তো থাকতোই না। আজতো সবাই আরও আধুনিক হয়েছে, আরও শিক্ষিত হয়েছে, কত পরিবর্তন এসেছে আজকের জীবন ধারায়-- তাহলে রুচিরার এই সমাজের উপর বিশ্বাস রাখতে দোষ কোথায়? মা কি দেখছ তখন থেকে? একটা টিপ দাওনা--- কাল টিপ কিনতে ভুলে গেছি।

কাঁচের চুড়ির রিমঝিম শব্দে রূপসী অধৈর্য। সারাক্ষণই কোন কারণ ছাড়াই ব্যাস্ত। ইস! মেয়েটার মুখের দিকেই শুধু তাকিয়ে ইচ্ছা হয়, মা টিপ না দিলে কিন্তু আমি কোথাও যাবো না। মেয়েটা কাঁদো কাঁদো। দাঁড়া দাঁড়া দেখি কি ব্যবস্থা করা যায়।

কিরে! রূপা এত চেঁচামেচি কিসের? রাসেল দরোজায় মুখ বাড়ায়। ওরে বাবা আমার টুকটুকিকে দেখি এক্কেবারে লাল পরীরর মত লাগছে। এত সুন্দর করে সাজলো কেন আমার মা'টা? রূপসী উত্তেজনা ধরে রাখতে পারে না। জান, বাবা আজ আমি একা বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাব। কই, দেখি সর সর, রুচিরা ত্রস্ত পায়ে মেয়ের ঘরে ঢোকে।

দাঁড়া তোকে একটা লিপস্টিক দিয়ে টিপ এঁকে দেই। আমি কি এসব পারি? তোর সহেলী আন্টি থাকলে নিশ্চই কোন না কোন একটা ব্যবস্থা করত ঠিক। তুমি নাকি মেয়েটাকে একা বেরুবার পারমিশন দিয়েছ? রুচিরা চকিতে তাকায়, রাসেলের মুখের দিকে। মেঘ জমে আছে সে মুখে। মেয়ের সামনে কথা বাড়ায় না, গম্ভীর মুখে নিজের ঘরে চলে যায়।

রুচিরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। যাক যুদ্ধটা এড়ানো গেল---- আজ ও সঙ্গীতে ডুবে আছে। কোন গ্লানিকেই নিজেকে ছুঁতে দেবে না পণ করেছে সে। এ জীবনের গ্লানি তো আর কম নয়। কত তুচ্ছতা, সংকীর্ণতা সব সময়ই ধুলোর মত জমতে থাকে।

মেয়ের কপালে টিপ আঁকতে আঁকতে মনে মনে প্রার্থনা করে- "মেয়ে তুমি স্বপ্নবতী হও- জীবনে স্বপ্নটাকে হাতছাড়া করো না। স্বপ্নহীন মানুষ বড় দরিদ্র হয়। " রাসেল আবার এগিয়ে আসে, চল চল কোথায় যাবি। রূপসীকে তাড়া দেয়। বাবা তুমি যাবে আমার সঙ্গে? রূপসী ভারী অবাক হয়।

মা যাবে না? না, তোর মায়ের এটাই শাস্তি। তোর সঙ্গে গেলেই তো পারতো। খামোখা আমাকে সাত সকালে এসব হাঙ্গামার মধ্যে জড়ালো। এখন তোর মা বাসায় থাকবে। আর আমরা বাপ-মেয়েতে বেড়াবো।

রুচিরার কি একটু কষ্ট হয়? না, সে তার সব কষ্টকে বাক্সবন্দী করে রেখেছে। তার মনের ঘরে এক ম্যাজিশিয়ানকে বসিয়ে রেখেছে। যখন মন খারাপ হয়, তখন রুচিরা ধ্যানস্থ হয়ে ম্যাজিশিয়ান এর শরণাপন্ন হয়----"ও গান ওয়ালা আর একটা গান গাও-- আমার কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই। " সেই ম্যাজিশিয়ান ওকে এই সুন্দর পৃথিবীর নানান সুরে নিয়ে যায়। কত সামান্যতে ও চমকিত হয়! এই যেমন আজ সঙ্গীত ওর ওপর ভর করেছে।

রুচিরা চমকিত হয়। বাবা- মেয়ে চলে যাবার পর, দরোজা লাগিয়ে রুচিরা আবার ডুব দেয় তার প্রিয় বইটিতে। আজ তার কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না। ইচ্ছেগুলোর পায়ে শেকল দিয়ে রেখেছে। তার চেয়ে এই ভালো-----চুপচাপ বসে থাকা।

খুট করে শব্দ হয় দরোজায়--রুচিরা উৎকর্ণ। না, রাসেল ঢুকেছে। ওর কাছেও একটা চাবি আছে। কি হল, ফিরে এলে যে? মানি ব্যাগটা ফেলে গেছি। ও আচ্ছা! রুচিরা কি একটু হতাশ হয়? না ও ক্লান্ত।

রাসেলের কাছ থেকে কোন কিছু কি প্রত্যাশা করেছিল--- তবে হতাশ কেন? হঠাৎই ওকে চমকে দিয়ে রাসেল ওর স্টাডি রুমে ঢোকে। রূপসী যেম্নি কিছুক্ষণ আগে হাঁটু মুড়ে ওর পায়ের কাছে বসেছিল, তেম্নি আচমকা রাসেল ও অমন করে বসে ওর হাঁটুতে থুতনী রেখে বলে--তোমাকে এই যে এত যে তুচ্ছ করি, এত উপেক্ষা করি-- কেন কিছু বলো না? তোমার এই নীরবতা আমাকে দিন দিন আরও নিষ্ঠুর করে তুলছে, তুমি কি সেটা টের পাও? রুচিরা বুঝতে পারে না কি বলবে? ও কি আসলেই রাসেল না ওর বুকের ভেতর বসে থাকা ম্যাজিশিয়ান--- ও কেমন বিভ্রান্ত বোধ করে। ওর কানের কাছে মান্নাদে বলে ওঠেন--"শুধু একদিন ভালোবাসা / মৃত্যু যে তারপর/ তাও যদি হয়/ আমি তাই চাই/ চাইনা বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর" এম্নি একটা সময়ের জন্য দিন রাত প্রার্থনা করেছে সে। আজ তা পূর্ণ হল। এমন ম্যাজিক সে জীবনে দেখেনি।

বাহ! শাড়িটাতে তো তোমাকে দারুণ মানিয়েছে। কি হল, যাও ওঠো। হাত ধরে রুচিরাকে দাঁড় করিয়ে দেয়। তারপর রুচিরার কপালে একটা চুম্বন এঁকে বলে, ঠিক এই জায়গায় সূর্যের মত লাল একটা টিপ পরে আসবে যাও। তোমার ড্রয়ারে আমি কাল টিপ এনে রেখেছি।

কথাগুলো বলেই রাসেল আবার নিজের খোলসে ফিরে যায়। নিরাবেগ কণ্ঠে বলে- তোমাকে আমি পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও। আমি রূপসীকে রাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছি। হতভম্ব রুচিরা দুচোখ মুছতে মুছতে টিপ খুঁজতে যায়।

এমন বৈশাখ তার জীবনে আগে কখনও আসেনি।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।