আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম প্রণেতারা নাস্তিক ছিলেন!!!!!!!: আমরা কতটা বৃত্তবন্দী?

সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত...............।

ব্লগীয় হাওয়ায় ভেসে গিয়ে নাস্তিকতা নিয়ে একটা ব্লগীয় বিশ্লেষন করে ছিলাম ক'দিন আগে। নিকট ভবিষ্যতে আবার এ নিয়ে লিখবো ভাবিনি। এর কারন একটাই, ব্যতিক্রম বাদ দিলে মোটামুটি সবক্ষেত্রেই আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচাল (তর্ক বলছি না!) যতটা না সত্যের অনুসন্ধান তার চাইতে ও বেশী নিজেকে জাহির- এই রাস্তা ধরে চলতে থাকে। যাই হোক গতরাতে সনামধন্য ব্লগার বৃত্তবন্দীর করা একটি পোষ্ট পড়ে লিখতে বসতে হলো।

নিজেকে আমি সবসময়ই চরম আস্তিক দাবী করি এবং তা বেশ জোর গলাতেই করে থাকি। তাই বলে নাস্তিক বিদ্বেষ নেই আমার! যাই হোক, কথা হচ্ছিলো তারঁ মনে জেগে ওঠা প্রশ্নটা নিয়ে। /*সব ধর্মের প্রণেতারা কি নাস্তিক ছিলেন না?*/ /*প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসের বিরোধিতা বা কোনো ধর্মের ঈশ্বরের অস্তিত্ত স্বীকার না করা যদি নাস্তিকতা হয় তবে প্রত্যেকটা ধর্মের প্রণেতাকে কেনো নাস্তিক বলা হবে না?*/ এক্ষেত্রে তিনি বর্তমান পৃথিবীতে প্রচলিত প্রধান পাঁচটি ধর্ম- ইসলাম, খৃষ্টবাদ, ইহুদীবাদ, বৌদ্ধ এবং সনাতন (হিন্দু) ধর্মের প্রবক্তাদের উদাহরণ টেনেছেন। বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে আমার কিছু বলার নেই, কারণ লেখক নিজেই একে ধর্ম বলে স্বীকার করেন নি। আর সনাতন ধর্মের তো সঠিক প্রণেতার হদিশ ঠিক পাওয়া যায় না।

যেটি পাওয়া যায়, তা হলো, ভল্গার তীর হতে যাত্রা শুরু যে যাযাবর আর্য জাতি হাজার বছরের পরিভ্রমনে গঙ্গার তীর পর্যন্ত এসে বসতি গড়েছিলো, তাদেরই সমাজ জীবনের নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মিথস্ক্রিয়ায় বিভিন্ন সংস্কারকের বাতলে দেয়া পথের মিলিত সংস্করণ আজকের সনাতন ধর্ম। এ প্রসঙ্গে রাহুল সংকৃত্যায়নের "ভল্গা থেকে গঙ্গা" বইটি পড়ে দেখা যেতে পারে। ধর্ম হিসেবে ইসলাম, খৃষ্টবাদ ও ইহুদীবাদ অনেকটা তুতো ভাই (cousin) এবং এদের ধর্ম প্রণেতাদের নির্দিষ্ট করে পরিচয় পাওয়া যায়। তাই, এদের নিয়েই কথা বলি। বেশী দুরে না গিয়ে এ টুকু বলাই যায় যে, এ তিনটি ধর্মই ইব্রাহিম (আ) (বাইবেলের আব্রাহাম/ Abraham) এর প্রচারিত ধর্মমত থেকে উৎসারিত।

ইব্রাহিমের (আ) পুত্র ইসহাক (আ) ও তাঁর পুত্র ইয়াকুব (আ) (ইস্রাঈল নামে ও পরিচিত) এর বংশধরদের মধ্য থেকেই খৃষ্টবাদ ও ইহুদীবাদের জন্ম। আর ইব্রাহিমের (আ) অপর পুত্র ইসমাঈলের (আ) বংশে জন্ম মুহাম্মাদের (স)। ফারাও রাজবংশের শাসনামলে মুসা (আ) (মোজেজ/ Moses) আবির্ভূত হন, বনী ইসরাঈলের জন্য মুক্তির দিশা দিতে। ফারাওরা নাস্তিক ছিলো না, শুধু মাত্র নিজেদের স্রষ্টার অংশীদার দাবী করতো। একজন পরম স্রষ্টার অস্তিত্বকে তারা অস্বীকার করে নি কখনো, সংঘাত বেঁধেছিলো যখন মূসার (আ) প্রচারিত ধর্মমত তাদের মিথ্যা অংশীদারিত্বের দাবীর অসারতা প্রমান করে দিয়েছিলো।

একেই কি আমরা নাস্তিকতা বলি? মুসার (আ) তিরোধানের বার দ্বাদশ শতাব্দী পার হয়ে গেলো। নিপীড়িত বনী ইসরাঈলের মাঝে নৈতিকতার আলো জ্বালাতে এবার আসেন ঈসা (আ) (যীশু/ Jesus)। ইহুদীবাদ ততদিনে প্রতিষ্ঠিত ধর্মমত। ধর্মের যাবতীয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষন শাসনকর্তা আর পুরোহিতদের কুক্ষিগত। ঈসা (আ) এ অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করলেন।

সে সময়ের ইহুদীগণ ও নাস্তিক ছিলো না। জাগতিক স্বার্থের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মানবতার আলোর প্রবেশ ঠেকাতেই তারা বিরুদ্ধাচরণ করে এই সংসার বিরাগীর। অথচ, তাদের বিশ্বাসের খোদা আর ঈসার প্রচারিত মতের খোদার পরিচয় একই ছিলো। নাস্তিকতা প্রচারের অবকাশ কোথায় এখানে? সবশেষে, আরবের বুকে নিকষ অন্ধকারের পর্দা ছিঁড়ে আবির্ভূত হন মুহাম্মাদ (স)। সে সময়ের আরবে প্রচলিত পৌত্তলিকতা এক জন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতো না; বরং বাকী দেবতাদের ঐ সৃষ্টিকর্তার বিভিন্ন কার্যকলাপে অংশীদার বলে বিশ্বাস করতো।

কাবার ভেতরে ৩৬০ টি মূর্তি ছিলো এবং আরবের পৌত্তলিকেরা এদের উপাসনা ঠিকই কিন্তু কাবা তাওয়াফ কালে তারা এক সৃষ্টিকর্তাকে আরাধনা করতো। আর সে সময়ের আরবের ইহুদী গোত্রসমূহ ও সেই খোদার কথাই বলতো যার কথা মুহাম্মাদ (স) বলছিলেন। সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করা নাস্তিকতার কোন সংজ্ঞাতে পড়ে? একেবারে শেষে এসে বলতে চাই, নাস্তিকতা একটি ধর্ম কীনা তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। যৌক্তিক মানদন্ডে যারা নাস্তিকতাকে জীবনের পাথেয় হিসেবে নিয়েছেন, তাঁদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা আমার। কিন্তু এঁদেরকে বাদ দিলেও একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ অন্যান্য নানামুখী কারনে নাস্তিকতায় প্রবেশ করেছে আম্র মনে হয়।

সংক্ষিপ্ত আকারে বলতে গেলে, এক. ধর্ম বা আস্তিকতার গন্ডীতে আবদ্ধ মানুষের ক্ষেত্রে কিছু প্রবৃত্তিগত বিধিনিষেধ রয়েছে, যা সকলে মেনে নিতে পারে না। ফলে তারা নাস্তিকতার দিকে পা বাড়ায়। দুই. পরিচিত গন্ডীর আস্তিকতার ধ্বজাধারী ব্যক্তিবর্গের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে বিতৃষ্ণ হয়ে ও কেউ কেউ নাস্তিকতায় প্রবেশ করে। তিন. অন্তরের অহংবোধ ও কোন ব্যক্তিকে নাস্তিকতায় দৃঢ় অবস্থান নিতে সাহায্য করে। নাস্তিকতা বিষয়ক এবং এমনকি আস্তিকতা ও ধর্মীয় বিষয়ে ন্যূণতম জ্ঞান না রেখেও তারা ঘন্টার পর ঘন্টা বিতর্ক জারি রাখেন! নিজের পথের ভুল বোঝার পর ও সে পথ অবলম্বন করা, 'আমি চলছি বলেই পথটি সঠিক' এ মতেরই নির্লজ্জ্য বহিঃপ্রকাশ।

অথচ, সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তি মাত্রই 'পথটি সঠিক মনে করছি বলেই আমি চলছি'- এ মতের অনুসারী হবেন। জনাব, বৃত্তবন্দী কোন গোত্রের বুঝতে পারছি না! উইকিপিডিয়াতে নাস্তিকতা বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে যা পেলাম তা হলো, " নাস্তিকতা এমন একটি দার্শনিক অবস্থান যা দেবত্বকে অস্বীকার করে কিংবা আস্তিকতা বিশ্বাসকে বাতিল করে দেয়। বৃহদার্থে, এটি পরমেশ্বরের অস্তিত্বের অনুপস্থিতি সংক্রান্ত বিশ্বাস। " বাকী টুকু পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিলাম। বিঃদ্রঃ ইসলাম নিজেকে নতুন কোন ধর্মমত দাবী করে না, বরং সৃষ্টির প্রথম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত একেশ্বরবাদ প্রচারকারী সকল ধর্মই ছিলো ইসলাম! সময় পরিক্রমায় এদেরকে স্বার্থবাদী মানুষ বিকৃত করেছিল।

এ ব্যাপারটি এখানে প্রাসঙ্গিক নয় বলে বিস্তারিত বললাম না। ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।