এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
কয়েকদিন হলো কোকড়াচুলওয়ালীর সামনে যাইনি ... ফোনে টুক টাক কথা বলে রেখে দেই ... কিন্তু সামনে যাওয়ার সাহস নেই ... আর থাকবেই বা কেমন করে, এমন একটা কাজ করার পরে ওর সামনে কি যাওয়া যায় ?
অঘটনটা ঘটেছে কয়েকদিন আগে ...
গিয়েছিলাম একটি আন্তঃবিভাগীয় ভলিবল টুর্নামেন্ট খেলতে ... জ্বরের কারনে শরীর বেশ দুর্বল ছিলো ... তবুও খেলাটা একটা নেশার মতো হওয়াতে যাবনা যাবনা করতে করতে চলেই গিয়েছিলাম প্র্যাকটিসে ... ২ দিন পরে মনে হলো যেন খেলতে পারবো ... যেমন ভাবা তেমন কাজ, চলে গেলাম টুর্নামেন্ট খেলতে ... শরীরটা সেদিন সকালে ভালই ছিল ... প্রথম আর দ্বিতীয় রাউন্ডে পর পর ৫ টা ম্যাচ খেলে সেমিফাইনালে উঠার পরে লান্চ ব্রেক .... লান্চের সময়ে কেমন জানি মাথা ব্যাথা করছিল ... সেমিফাইনালের আধঘন্টা আগে একটা পেইন কিলার খেয়ে একটু ভালো অনুভূত হওয়ায় সেটা খেললাম, ফাইনালে গিয়ে আর পারলাম না .... হেরে গেলাম .... এর পরে পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানের আগে ভলিবল কোর্টের পাশে দাড়িয়ে কথা বলছিলাম আমাদের টিম ম্যানেজারের সাথে .... আর কিছু উৎসাহী দর্শক তখন ম্যানেজমেন্টের অনুমতি নিয়ে খেলছিল নিজেরা নিজেরা .... এমন সময় একজন এমনই সার্ভিস করে বসলো যে , বলটি বিপক্ষের কোর্টে না গিয়ে ছুটে আসলো কোর্টের পাশে দাড়ানো আমার দিকে ... আর লাগবি তো লাগ একেবারে আমার চশমার ডাটির উপরে
ফলাফল যা হওয়ার তাই ... চশমার ভেঙ্গে নাকে গেথে গেল মোটামুটি গভীর ভাবে ... আর সেই সাথে রক্তপাত ...সাইড থেকে লাগার কারনে কাচ ভেঙ্গে চোখে লাগেনি ... আর কি করা ... এই টুর্নামেন্টের একমাত্র ইনজুরি তাও আবার খেলার বাইরে ... আর হবি তো হ, আমার সাথেই ? ... নাকে ব্যান্ডেজ নিয়ে ফিরলাম বাসায় ... এই অবস্হায় কোঁকড়া চুলওয়ালীর সামনে যাওয়া মানে হলো নগদে বকা খাওয়া ... তাই এটা সেটা কারন দেখিয়ে ওর সামনে যাইনি ... ব্যান্ডেজ খোলার পরেও নাকের উপরে যে কালো দাগ হয়েছে সেটার কারনে আরো ওর থেকে পালিয়ে চলছিলাম ... একে তো জানে না আমি নাকে ব্যাথা পেয়েছিলাম ... তার উপরে যদি দেখে এমন দাগ, নির্ঘাত আমার খবর আছে ...
কিন্তু কথায় বলে না, যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয় ? ঠিক তেমনি ওর আম্মু সেদিন একটা কাজ দিয়ে বললো ওটা ওদের বাসায় পৌছে দিতে ... একটু এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম বলে এমন এক বকা দিলো যে অন্য কিছু বলার সাহস ই পেলাম না ... সুবোধ বালকের মতো কাজের জিনিসগুলো নিয়ে এমন সময় ওদের বাসায় গেলাম যখন কোঁকড়া চুলওয়ালীর স্কুলে থাকার কথা ... বাইরে থেকে বেল দিতেই দেখি দরজা খুলে দিলো আমার পুসকি কোঁকড়া চুলওয়ালী ... আমি তো থ ! ... আসকাইলাম তুমি আজকে স্কুলে যাওনি ? ও বললো -- আজকে ওদের স্কুলের টিচাররা কোন একটা মিটিং এ বসবে , এ জন্য নাকি স্কুল ছুটি ... এই বলেই দু হাত উপরে করে এক লাফে চড়ে বসলো আমার কোলে .... এর পরে শুরু হলো তার নানা কীর্তি কলাপের কাহিনী, আজকাল নাকি ইচ্ছে করেই আম্মুকে বেশ রাগিয়ে দেয় আর ওর আম্মু নাকি ওকে আজকাল নতুন নতুন কত দিয়ে বকা দিচ্ছে ... সেটা নাকি শুনতে ভাল লাগে এ জন্য আরো ইচ্ছা করেই সে বেশী দুষ্টুমি করে ..... আমি শুনি আর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেই ....
যত হাসি তত কান্না ... কথাটার ফলতে আমার খুব বেশী দেরী হলো না ... হঠাৎ কোঁকড়া চুলওয়ালী লক্ষ্য করলো আমার চোখে নতুন ফ্রেমের চশমা ... হাত বাড়িয়ে বললো ... দেখি দেখি , তোমার নতুন চশমা ... করে কিনলা ? খুব সুন্দর হইছে ... বলতে বলতে চশমা খুলতে গিয়ে চোখে পড়লো নাকের ডান পাশে বেশ খানিকটা জায়গার কাটা দাগগুলোতে
ব্যাস .... আর কৈ যাবো ... যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে কঠিনভাবে আমার ইন্টারোগেশন শুরু হলো ... এটা কবে হলো .... কেমনে হলো ... অসুস্হ শরীর নিয়ে কেন খেলতে গেলাম ... গেলাম ভাল কথা চোখে চশমা পরে কেন খেল্লাম ... চোখে চশমা পরে খেলার সময় লাগেনি ভাল কথা, খেলার পরে লাগলো ক্যান ? ... কোর্টের পাশে না দাড়িয়ে অন্য জায়গাতে কেন দাড়াইনি ... ওখানে দাড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে কেন কথা বলছিলাম ... আরো সাবধানে কেন থাকলাম না ..... এমন সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৫ সেকেন্ড সময় দেয়া হচ্ছিলো ... আর যে উত্তরগুলো তার পছন্দ হচ্ছিলো না পরের প্রশ্নটা আরো ঝাঁঝের সাথে করা হচ্ছিলো
মাথা নিচু করে উত্তর দিতে দিতে একসময় দেখি কোকড়াচুলওয়ালীর প্রশ্নবান থেমে গেল ...আমি ওর দিকে তাকাতেই, সে কয়েকমূহুর্ত চুপ থেকে নিজের ঘরের দিকে দৌড়ে যাবার সময় একবার আমার দিকে ফিরে টলটল চোখে চিৎকার দিয়ে বললো -- তুম এট্টা দুত্তুমির পতিবা ...
ছবি কৃতজ্ঞতায় - চিকনা জেডা
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।