তার বিস্ময়কর উত্থান যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। এই ছবিটি তার জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একজন সাধারণ সৈনিক ছিলেন তিনি। হাজারও মানুষের ভিড়ে দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খলনায়ক হিটলারকে। তখনো কী কেউ ভাবতে পেরেছিল এই হিটলারই একদিন সারা পৃথিবীর অধিকর্তা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়ে দেবেন?
সারা পৃথিবীজুড়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দুঃস্বপ্নে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন তিনি।
আর সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে বাজিয়ে তোলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। কিন্তু মানুষ চাইলেই তার সব স্বপ্ন ছুঁতে পারে না। পারেননি হিটলারও। ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল জার্মানির বার্লিন শহরের এক গোপন বাঙ্কারে আত্দহত্যা করেন। আর সেই সঙ্গে পৃথিবী মুক্তি পায় হিটলার নামক ভয়ঙ্কর এক অভিশাপের কবল থেকে।
অস্ট্রিয়ার ব্রাউনাউ শহরে ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল অ্যাডলফ হিটলারের জন্ম। জন্ম সূত্রে অস্ট্রিয়ান ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যতা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। এর পরও উচ্চাভিলাষ আর সৌভাগ্যের পিঠে চড়ে ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সে দেশের ফিউরার হিসেবে দেশ শাসন করেন।
পৃথিবী জয়ের স্বপ্ন দেখতে পারে এমন কোনো পরিস্থিতি হিটলারের জীবনে কখনোই ছিল না।
হিটলারের বাবার কোনো জাত ছিল না। সোজা বাংলায় বললে বলা যায় হিটলার ছিলেন একজন জারজ সন্তান। তিনি জীবনের অনেকটা সময় শেষ নাম হিসেবে তার মায়ের নাম ব্যবহার করেছিলেন। ১৮৭৬ সালেই প্রথম হিটলার নামটি গ্রহণ করেন। সৎ বাবা সরকারি কাস্টমস থেকে অবসর গ্রহণের পর সপরিবারে অস্ট্রিয়ার লিনৎসে শহরে চলে আসেন।
এখানেই হিটলারের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। এ কারণে সারাজীবন তিনি লিনৎসকে ভালোবেসে গেছেন, কোনো শহরকে এর ওপরে স্থান দিতে পারেননি। বাবাকে তিনি পছন্দ করতেন না বরং ভয় করতেন। কিন্তু মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। ১৯০৩ সালে বাবা মারা যান।
বাবার রেখে যাওয়া পেনশন ও সঞ্চয়ের অর্থ দিয়েই তাদের সংসার কোনোমতে চলতে থাকে। অনেক ভোগান্তির পর ১৯০৭ সালে মাও মারা যান। হিটলার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। পড়াশোনায় সুবিধা করতে না পেরে ভিয়েনায় গিয়ে চিত্রশিল্পী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন নিজের পুরনো শহরে।
পরবর্তী বেশ কয়েক বছর কেটেছে হতাশা আর গ্লানিতে। ১৯১৩ সালে হিটলার চলে আসেন মিউনিখ শহরে। তখনো চলছিল তার এলোমেলো জীবন। এখানে আসার পরের বছর ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অস্ট্রিয়ান মিলিটারি সার্ভিসে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেও শারীরিক অযোগ্যতায় ব্যর্থই হচ্ছিলেন বলা চলে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে জার্মান সেনাবাহিনী এত কিছু আর যাচাই-বাছাই করেনি।
জার্মানির ১৬তম ব্যারাভিয়ান রিজার্ভ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্টের ভলান্টিয়ার সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ১৯১৬ সালের অক্টোবর মাসে যুদ্ধে গুরুতর আহত হন হিটলার। দুই বছর পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যখন সমাপ্তি ঘটে তিনি তখন পর্যন্ত হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। যুদ্ধে বীরত্ব দেখানোর জন্য তাকে বিভিন্ন পদক ও সম্মাননা দেওয়া হয়। কিন্তু যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় হিটলার মেনে নিতে পারেননি।
এর মধ্যেই হিটলারের জীবন অন্যদিকে মোড় নেয়। ১৯১৯ সালে হিটলার মিউনিখের ছোটখাটো একটি ডানপন্থি দলে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই দলটি হিটলারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এর মধ্যেই পার্টির নাম পাল্টে রাখা হয় নাৎসি। পার্টি জয়েন করার মাত্র দুই বছরের মধ্যেই হিটলার হয়ে উঠলেন পার্টির অবিসংবাদিত নেতা।
জার্মান ভাষায় যাকে বলা হতো ফুয়েরার। ১৯২৩ সালের নভেম্বরে নাৎসিরা একটি অভ্যুত্থান চালিয়ে ব্যর্থ হলে হিটলারকে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু এক বছরেরও কম সময় জেল খাটার পর মুক্তি পেয়ে যান হিটলার। ইতোমধ্যে জার্মানির পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জার্মানির সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ১৯৩৩ সালের জানুয়ারি মাসেই জার্মানির শাসন ক্ষমতায় চলে আসে নাৎসিরা।
আর হিটলার হয়ে যান জার্মানির চ্যান্সেলর। তার বয়স তখন ৪৪ বছর। চ্যান্সেলর হয়েই হিটলার খুব দ্রুত একনায়কত্ব কায়েম করতে শুরু করেন। তার প্রথম নীতিই ছিল বিরোধী এবং ইহুদি নিধন। হিটলার যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নকশা অাঁকতে শুরু করেছিলেন তখন কারও পক্ষেই তাকে বাধা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
হিটলার যখন ভার্সাই চুক্তি অমান্য করেন তখন ব্রিটেন কিংবা ফ্রান্স কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সময় পায়নি। এর পরের ঘটনা সবারই জানা। একে একে অনেকগুলো দেশ জড়িয়ে গেল একটি ভয়াবহ যুদ্ধে। আর সেই যুদ্ধই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সমগ্র বিশ্বে নিজের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যে যুদ্ধের নীল নকশা এঁকেছিলেন হিটলার নিজে, শেষ পর্যন্ত তার সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।
ব্যাপক গণহত্যা আর যুদ্ধের ভয়াবহতা যখন চরমে তখন নিজের পরাজয় টের পেয়ে নিজের প্রেমিকা ইভাকে সঙ্গে নিয়ে আত্দহত্যা করেন হিটলার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।