আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ পর্যন্ত কিনলই... ালা একটা মিথ্যেবাদী

কোন একদিন.. এদেশের আকাশে... কালেমার পতাকা দুলবে, সেদিন সবাই ... খোদায়ী বিধান পেয়ে দু:খ বেদনা ভুলবে..

কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে একটা গাড়ি মেলা হয়েছিল। সেখানে আমাদের প্রিয় যোগাযোগ মন্ত্রী সপরিবারে হাজির হয়েছিলেন। তাঁকে দামী গাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছিল। সাংবাদিকগন তাহাদের শিকারী চক্ষু দিয়া তাঁহার অন্তর্চক্ষু বুঝিয়া ফেলেছিল। তাই তারা খোঁজ খবর নিয়া জানতে পারলেন, মন্ত্রীজী তাঁহার মন্ত্রনালয়ের জন্য গাড়ি টেন্ডার দিয়াছেন।

সেই গাড়িটি মন্ত্রীজী বিভিন্ন স্থান ভ্রমন করতে ব্যবহার করবেন। তখন যে গাড়িটি ছিল তা নাকি পনের বছরের পুরোনো, তাতে চড়ে তিনি তাঁর শিরদাঁড়া ভাঙতে চাননা। সে যা হোক, তিনি গাড়ির টেন্ডার দিয়ে আবার নিজেই কষ্ট করে এসেছেন গাড়ি পছন্দ করতে। গাড়ি পছন্দ হলো কিন্তু তার দাম সামান্য বেশি। মাত্র এক কোটির মত।

পরদিনই কয়েকটা পত্রিকায় ঘটনাটি প্রকাশিত হলো। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর সরকারী উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া চ্যালাদের দিয়ে এর প্রতিবাদ প্রকাশ করলেন। বুঝিয়ে দিলেন জনগনকে যে, এটা একটা মিথ্যে কথা। কিন্তু তিনি ঠিকই এ গাড়িটি বাগিয়ে ছেড়েছেন... তবে একে খারাপভাবে দেখাটা আমাদের নিশ্চয়ই ঠিক হচ্ছে না। ঘটনাটি একটু বিশ্লেষন করে দেখা যাক।

মাননীয় মন্ত্রী গাড়ি মেলায় গেলেন সপরিবারে। ইচ্ছা মন্ত্রনালয়ে তাঁর জন্য যে গাড়িটি কেনা হবে তা পছন্দ করা। বিরাট গাড়িবহর নিয়ে তিনি হাজির হলেন। সাথে সাথে লোকজন তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে রিসিভ করে নিলেন। মেলা কমিটি তাঁদের যথাযথ সম্মানের এবং আপ‌্যায়নের ব্যবস্থা করলেন।

তারপর কমিটির প্রধান নিজেই মেলা ঘুরিয়ে দেখালেন মন্ত্রীজী ও তাঁর পরিবারকে। মন্ত্রীজী একটা একটা করে গাড়ি দেখতে লাগলেন। বেশ কয়েকটা দৃষ্টিনন্দন গাড়ির দামও জিজ্ঞেস করলেন নির্ভয়ে কিন্তু জবাব শুনে ভয় পেয়ে গেলেন। তবে ভয় ভীতি তাঁর চেহারায় ফুটে উঠেনি তক্ষুনি। গন্ডারের চামড়াতো! তবে রাত নাগাদ কিছুটা প্রবল বেগেই হয়তো অনুভুত হয়েছিল।

যাই হোক, তিনি মনে মনে ভাবলেন "এই গাড়ি যখন মেলায় উঠেছে তখন বিক্রিও হবে নিশ্চয়। আমি এদেশের মন্ত্রী, চড়ব সামান্য ৩৯ লাখ টাকা দামের সেডানে আর আমার দেশের নাগরিক (আমাদের প্রজা) চড়বে কোটি টাকার গাড়িতে? এটা বেমানান! না হতেই পারেনা। " প্রেস্টিজের কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত চরম দৃষ্টিনন্দন গাড়িগুলো পাশ কাটিয়ে মোটামুটি ধরনের একটা দারুন গাড়ি তিনি পছন্দ করেই ফেললেন। গাড়ির ডান বাম উপর নিচ আর সামনে পেছনটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেন। তারপর স্মীত ভাষ্যে স্টলের মালিককে জিজ্ঞেস করলেন গাড়ির দাম কত।

বিক্রেতা জানালেন, "জনাব, আপনার জন্য দাম রাখব এক কোটি টাকা। " মন্ত্রীজী দামের চমক কাটাইয়া সহাস্যে ঘোসনা দিলেন "আমনের গাড়ি আমি কিনমু। " ঐ সময় মন্ত্রীজীর অজান্তেই এক সাংবাদিক নামে উচ্ছৃংখল প্রজা ঘটনাটি দেখে ফেলে। সে মন্ত্রীজীর এই মহতী উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পরেরদিনই পত্রিকায় প্রকাশ করে দেয়। মন্ত্রীজী সকালে প্রতিদিন পত্রিকা শুনেন।

পড়তে তাঁর নাকি একটু সমস্য হয়। চোখে ঠিক মত ঠাউরাতে পারেননা। তাই একটা কর্মচারী নিয়োগ করেছেন যে কিনা তাকে প্রতিদিন পত্রিকা পড়ে শোনায়। তাকে তিনি বেশ অংকের বেতন দেন। আগে নিজের থেকে দিতেন এখন তা সরকারীকরন করে নিয়েছেন।

তো ঘটনার পরেরদিন পত্রিকা শুনতে শুনতে হঠাৎ তার কানে একটা রিপোর্ট আটকে যায়। আটকানো রিপোর্টটি টেনে হেচড়ে ছুটিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখে বুঝলেন, এটি তাঁরই গতকালের ঘটনা। প্রথমে কিছু বুঝে না উঠেই গর্বভরে বউকে ডেকে বললেন "দেখ্ আজও আমার ছবি এবং নাম পত্রিকায় উঠেছে। " কিন্তু তাঁর প্রত্যুৎপন্নমতি বউ তাঁর মত খুশি হতে পারলেননা। তাঁকে বুঝিয়ে বললেন রিপোর্টটা তাঁর অনেকদিনের শখের দামী গাড়িতে চড়ায় বাধা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।

তাঁর (অ)সদুদ্দেশ্য সকলের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বুঝালেন মন্ত্রীজীকে "তুমি আজই তোমার চ্যালাদের দিয়া এর প্রতিবাদ লেখাইয়া পত্রিকায় ছেপাইয়া দেউ। নইলে তোমার খবর আছে। " মন্ত্রীজী ঘটনার জটিলতা বুঝিয়া সবসময়কার মত এবারও বউয়ের উপদেশ মত কাজ করিলেন। প্রতিবাদ ছাপানো হলো।

কিন্তু এদিক মন্ত্রীজী তার সাথে সাথে তাঁর বউয়েরও আর ঘুম হয়না। মেলার দোকানীদের এত লোকের কাছে তাদের প্রেস্টিজ শেষ। গাড়ি দামদর করে এখন কিনতে না পারাটা, চড়তে না পারাটা ভয়ংকর লজ্জার। ইতিমধ্য মন্ত্রী বধু তাঁহার নতুন প্রতিবেশীদের কাছে কত শখ করে বলে বেড়িয়েছিল নতুন গাড়ির কথা আর এতে চড়া সুবিধাগুলোর কথা। কিন্তু সব শেষ।

প্রেস্টিজ বলে কিছু রইল না। মেলার দামী দামী গাড়ির ক্রেতা বিক্রেতা সবাই কি ভাববে আল্লাই জানে। মন্ত্রী দম্পতি দুজনেই মর্মপীড়ায় ঘুমুতে পারছিলেননা। মাঝরাত নাগাদ মন্ত্রীজী মনস্থির করে ফেললেন। তিনি ভাবলেন সাধারন জনগনকে ধোঁকা দেওয়াটা একটা ধারাবাহিক রেওয়াজ।

কিন্তু তাই বলে গাড়ি বিক্রেতা এবং পারিপার্শ্বিক ঐ লোকগুলো যারা দামী গাড়ি কিন্তে মেলায় এসেছিল তাদের কাছে ছোট হওয়া যাবে না। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন গাড়ি কিনবেনই। এবং গাড়ি কিনলেনই। তাঁর প্রেস্টিজ রক্ষা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

তবে সাধারন জনগন এ ঘটনা নিয়ে একটু লাফঝাপ দেবেই, কেননা তারাতো আর এরকম গাড়িতে চড়াতো দুরের কথা দেখার জন্য মেলায় যাওয়ারও সাহস পায়না। তবে সেইদিন যারা মন্ত্রী পরিবারের গাড়িকেনার দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ পেয়েছিল তারা সকলেই উচ্চবিত্ত। তারা এ ধরনের গাড়িতে চড়ে অভ্যস্ত। তারা শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীর গাড়ি কেনা সফল হওয়াতে নিশ্চয় বাহ্বাই দিচ্ছে। তাই, এ ঘটনাটি আমাদের জাতির জন্য এক বিশাল পাওয়া।

....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।