আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রি-স্কুল



ছোটবেলায় পড়ার খুব আগ্রহ ছিল। (পরে আগ্রহ কোথায় ভাগল কে জানে)। সাড়ে তিন বছর বয়সেই বর্ণমালা শেষ করে আ-কার এ-কার পড়া শুরু করে দিয়েছিলাম। আর তখনই নিজে নিজে রিডিং পড়ার আগ্রহ চলে এসেছিল। এ-কারের ব্যবহার পড়ে আমি 'কেন' শব্দটাকে 'ক্যানো' উচ্চারণ না করে 'কেনো' বলতাম।

সেটা শুনে সবাই হাসত। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমার উচ্চারণই ঠিক। নিজে নিজে রিডিং পড়ার জন্য বেছে নিয়েছিলাম খবরের কাগজ। কিন্তু তাতে অনেক যুক্তাক্ষর থাকত যেগুলো আমি তখনও শিখিনি। পড়তে পড়তে যখনই কোন যুক্তাক্ষরে আটকে যেতাম দৌড়ে চলে যেতাম আব্বার কাছে।

উচ্চারণটা জেনে নিয়ে আবার আমার মত পড়তে থাকতাম। তখনও কেউ জানে না যে আমি রিডিং পড়তে পারি। একদিন আব্বাকে একটা যুক্তাক্ষর জিজ্ঞাসা করে নিয়ে একা একা পড়ছি, আব্বা পেছন দিয়ে আস্তে করে দেখতে আসলেন আমি কী করি। অবাক হয়ে গেলেন দেখে যে আমি স্পষ্ট উচ্চারণে বাংলা পড়ছি। বাসার সবাই সেদিন ব্যাপারটা জানল।

বড় দুবোন কে দেখতাম স্কুলে যেতে, মাঝে মধ্যে ওদের সাথে যেতামও। কি যে ইচ্ছা করত স্কুলে যেতে। একদিন সেই স্কুলের একজন শিক্ষক এলেন বাসায়, বড়আপাকে উনি খুবই স্নেহ করতেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে আম্মা আমার পড়তে পারার ইতিহাস শুনিয়ে দিলেন। স্যার বিশ্বাস করলেন না।

আমি তাকে সেইদিনের খবরের কাগজের হেডলাইন পড়ে শুনিয়ে দিলাম। স্যার হা হা করে হাসতে হাসতে আমার পিঠ চাপড়ে দিলেন। মনে হলো উনি আমার পড়া শুনে কৌতুক বোধ করছেন। প্রচন্ড অপমানিত বোধ করলাম, নিজেকে সার্কাসের সঙ মনে হচ্ছিল। ছুটে বের হয়ে গেলাম ও ঘর থেকে।

পরে মনে হল কাজটা ঠিক হয়নি। স্যার নিশ্চয়ই ভেবেছেন আমি লজ্জা পেয়ে পালিয়েছি। আমি যে আসলে রাগ করে চলে এসেছি সেটাতো স্যার বুঝলেন না। যা হোক আমার পড়ার আগ্রহ দেখে আম্মা আমাকে বাসার কাছে একটা কিন্ডার গার্টেনে ভর্তি করিয়ে দিলেন। শুরু হল স্কুল জীবন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।