বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
জ্বলে মোম, অনুক্ষণ ....
এই লেখার শিরোনাম যেমনই শোনাক না কেন-মোমের
আলোয় স্নান ব্যাপারটা আসলে -বিদ্যুৎ চলে গেলে বাথরুমের
ভিতরে মোমবাতি জ্বেলে গোছল। এই হল: মোমস্নান;
প্রতিদিন যে বাথরুমে গোছল করতে যেতে হয়-ঘিঞ্জি ফ্ল্যাটবাড়ি
বলেই-ভেন্টিলেটর কি ছোট জান্লা নেই।
কারেন্ট না-থাকলে বাথরুমের ভিতরে আঁধার নিকষ ।
‘তো, কারেন্ট না- থাকলে গোছল করতে যান কেন শুনি?’
দূর থেকে কাল্পনিক বান্ধবী সামান্য খোঁচা দিয়ে বলে। আমি মিনমিন
করে বলি: না। এই মানে, যৌথপরিবারে থাকি,তো...যাক।
তো, মোম আর ম্যাচের বাক্স-হাতের কাছেই রাখতে হয়।
শাওয়ারটা অল্প চিপায়-কাজেই মোমটা রাখি কমোডের ঢাকনা
ফেলে-তার ওপর- যাতে আলোটা পাই, আর যাই হোক-নিকষ আঁধারে
তো স্নান করা যায় না।
আমার ফোবিয়া (নাকি ম্যানিয়া?) আছে ...
তো কমোডের ঢাকনা ফেলে-তার ওপর মোমটা রেখে
দিয়াশলাই কাঠির খস স স স। বারুদের মৃদু গন্ধ টের পাই।
দিয়াশলাইয়ের বাক্সটা বাথরুমের ভিতরে রাখি না; ফিরে
এসে দরজা বন্ধ করি আস্তে-যেন বাতাসের ঢেউয়ে না নিভে
যায় মোম। দরজা বন্ধের পর বাথরুমে মৃদু অন্ধকার-কেননা, মোমটা
ভালো করে তখনও জ্বলে ওঠেনি। এবার আমার নগ্ন হওয়ার
পালা।
নগ্ন হওয়া মানে পরনের লুঙ্গিটা টান মেরে খুলে ফেলা।
তাই করলাম; নগ্ন হওয়ার পর নিজেকে তখন কেমন আদম-
আদম লাগে। যেনবা তখনও জন্ম হয় নাই ঈভের। একলা আমি -
আর,বাথরুমের টাইলসে প্রতিফলিত ম্লান হলুদ-শীতলতা –
পানির টুপটাপ গান। মোমস্নান আমাকে ক্রমশ নিয়ে যাবে অন্যজগতে।
শাওয়ারের দিকে যাই। ছায়া ছায়া ঈষৎ অন্ধকার; সাবানের মৃদু গন্ধ।
শাওয়ারের নবটা ধাতব শীতল। স্পর্শ করি। এখন শাওয়ারের
নবটা ডানদিকে ঘোরালেই নিমিষে এই মোমালোকিত স্নানঘরে
ঢুকে পড়বে বান্দরবানের শৈলপ্রপাত ।
১৯৯৪ সালে ওখানে
একবার গিয়েছিলাম। ...ইদানীং, কোহিনূর কোম্পানীর ‘আইস কুল’
সাবান ভীষনই প্রিয় হয়ে উঠেছে। আইস কুলের নরম সুগন্ধটা
আমার ভালো লাগে। ভেজা শরীরে ওই সাবান মাখার সময়
মিস্টি সুরভীতে ডুবে যাই; আমার তখন মনে হয় মুগল বাদশাও
গোছলের সময় এত সুখবিলাসিতা পেত কি না সন্দেহ। তাদের
সময়ে দিল্লিতে গরুর গাড়ি বোঝাই করে বরফ আসত কান্দাহার
থেকে।
গতকালই ওয়ালটন ফ্রিজ খুলে ফ্রুটিকার ঠান্ডা বোতল বার
করে ঢকঢক করে গিললাম আধ বোতল আমের রস। ভীষন গরম
লাগছিল। রসটুকু খেয়ে ভারি তৃপ্তি পেলাম। মুগল বাদশা? ধুরও ...
শাওয়ারের নবটা ধাতব শীতল। স্পর্শ করি -ডানদিকে ঘুরাই;
নিমিষেই ঝরঝর শব্দ -সেই সঙ্গে এই মোমালোকিত স্নানঘরে
ঢুকে পড়ে বান্দরবানের শৈলপ্রপাত ...ঝরঝর জল পড়ে ...অঝোর
ধারায় আমি ভিজতে থাকি।
এবং আমি বোধ করতে থাকি
গভীর সুখ। সেই সঙ্গে মনে পড়ে এক বালতি পানির জন্য
বিশ্বময় কত হাহাকার-এই ঢাকা শহরেই ক’দিন পর পানির
জন্য তুমুল বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে; আর আমি নব
ঘোরাতেই পেয়ে যাচ্ছি (কোন্ এক সৌভাগ্যবলে) শীতল পানির
ধারা। একে কী বলে? মোমের ম্লান হলুদ আলোয় আধো-অন্ধকারে
অঝোর ধারায় আমি ভিজতে থাকি। এবং আমি আইস কুল সাবানের
অদ্ভুত মিষ্টি সুগন্ধ পেতে পেতে বোধ করতে থাকি গভীর আনন্দ ও
সুখ। ফ্ল্যাটপ্রতি বরাদ্দ জলে ভিজে যেতে যেতে প্রাণপন নিজেকে
বোঝাচ্ছি এটা ঢাকার কোনও ঘিঞ্জি ফ্ল্যাটবাড়ি নয়- বান্দরবানের
জ্যোস্নামথিত নির্জন শৈলপ্রপাত ...এবং তুমি মুক্ত-তুমি মুক্ত
আদম; নগ্ন-অথচ নির্লজ্জ নও।
আমি আধো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে।
ভিজছি। বাথরুমের টাইলসে প্রতিফলিত ম্লান হলুদ-শীতলতা;
পানি ঝরার শব্দ। একটু পরে শাওয়ার বন্ধ করি। হাত বাড়িয়ে
আইস কুলটা তুলে নিই।
গন্ধটা দারুন- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
ফার্মেসী বিভাগের (নাকি অ্যাপ্লাইয়েড ক্যামিস্ট্রি) ছাত্রছাত্রীরা
বেশ রোম্যান্টিক হয়ে উঠেছে আজকাল। নইলে এত সুন্দর
গন্ধের উদ্ভাবন তারা করল কী করে? ভেজা শরীরে ওই সাবান
মাখার সময় মিষ্টি সুরভীতে ডুবে থেকে আমার মনে হয় আমার
এই স্নানসুখবিলাসিতার কাছে মুগল বাদশারা কোন্ ছাড়। সাবান
মেখে সাদা ভূত হয়ে যাবার পর আবার শাওয়ারের ধাতব শীতল
নবটা স্পর্শ করি -ধীরে ধীরে ডানদিকে ঘুরাই; নিমিষেই এই
মোমালোকিত স্নানঘরে ঢুকে পড়ে বান্দরবানের শৈলপ্রপাত ...
ঝরঝর জল পড়ে ...অঝোর ধারায় আমি ভিজতে থাকি।
তারপর এক সময় শেষ হয়ে যায় আমার মোমের আলোয় স্নান কিংবা মোমস্নান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।