এক দুই সেকেন্ড কিংবা
পাঁচ দশ মিনিট পরই চিরতরে
থেমে যাবে লোকটির হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া;
লোকটি নিজেও জানেন তা, কিন্তু
আমি আর আমার বন্ধুরা জানতাম না--
মুড়ির টিন মার্কা লক্কর ঝক্কড়
বক্কর চক্কর লোকাল বাসের
এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার
গন্তব্যহীন গন্তব্যের
সহযাত্রী ছিলাম আমরা।
সে এক দুঃসহ নরকযাত্রার অসহ অভিজ্ঞতা
মহাডাকাত মহামূর্খ চালকদের সে কী চালাকি!
কে কাকে হারাবে
কে কাকে তাড়াবে
কে কাকে আগে দেবে ফাঁকি!
ঠাসাঠাসি ভিড়---
রীতিমতো রতিরত শরীরের
হাড়-মাংসের চাপ;
ধর্ষকের অবাঞ্ছিত ঘৃণ্যঘনিষ্ঠ নিঃশ্বাস
দম বন্ধ করা দুঃসহ উত্তাপ;
ভয়াবহ মাত্রার কান কালানো ভেঁপু,
বিকৃত বিকট গা জ্বালানো হাসি কাশি
শিস, খিস্তি খেউড়, ঢেঁকুর, বমি,
পায়ুপথ ভেদ করে আসা
সশব্দ দুর্গন্ধময় খাসা বদ-বায়ু---
ধাক্কাধাক্কি ঠোক্কাঠোক্কি ধরাধরি
কাড়াকাড়ি মারামারি গড়াগড়ি...
এরইমাঝে থেকে থেকে চলছিলো নীল ছায়াছবি--
বিপরীত-যাত্রীর পাহাড়-পর্বত খাজ-ভাঁজ খানা-খন্দে
কাদা-ঘাটা হাঁসের ঠোঁটের মতো ব্যস্ত ছিল
লোমশ কালো অগণন হাত---
মাংসের ছুরি নিয়ে সহযাত্রীর বেশে
নীরবে বসেছিল আরো অসংখ্য ডাকাত।
পরস্পরশত্রুবেষ্টিত জান্তবতৃষ্ণায়তেষ্টিত
ওই নারকীয় পরিবেশে পরিবেষ্টিত হয়ে
ওইসব দৃশ্য-শব্দ-দুর্গন্ধ দেখে-শুনে-শুঁকে
ধুঁকে ধুঁকে যাচ্ছিলাম আমি ও আমার বন্ধুরা
আমাদের বুকের বাম পাশেই বসা ছিলেন তিনি
যন্ত্রণার প্রতিধ্বনির মতো অস্ফুট শব্দ করে বললেন,
‘দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছি আমি প্রেমে
পৃথিবীতে কোথাও কেউ নেই আমার
এই আমার প্রথম এবং শেষতম প্রিয়তম প্রিয়া।
এক দুই সেকেন্ড কিংবা
পাঁচ দশ মিনিট পরই চিরতরে
থেমে যাবে আমার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া;
আমি জানি তা, কিন্তু তোমরা জান না
অথচ আমরা একই গাড়ির যাত্রী!
আমাকে বাঁচাতে চাইলে তোমরা বাঁচবে
লাত্থি মারো ওই কুত্তার বাচ্চাদের পাছায়
লাত্থি মেরে ফেলে দাও চালকের আসন থেকে
লাত্থি মারো লাত্থি মারো লাত্থি মারো।’
আমি এবং আমার বন্ধুরা ভাবলাম
মরার আগে বিগড়ে গিয়েছে লোকটির মাথা
এসব প্রলাপ, ভিমরতিগ্রস্তের অসংলগ্ন কথা
কান দিয়ে কাজ নেই, গাড়ি যাক যথা ইচ্ছা তথা
আমরা এখন সমাধির সহযাত্রী।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।