আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুচ্ছ

শিরদাঁড়া নেই, বহু শরীরেই নিজেদের মানাতে মানাতে.......

ব্যস্ততা থাকলে পুরুষ মানুষ মাত্র দশমিনিটেই রেডি হয়ে যেতে পারে। জরুরী ফোন আসায় আমাকে দশমিনিটেই রেডি হতে হলো। প্রেমের চেয়ে জরুরী কোন বিষষ কি আর হতে পারে! দুপুরের আয়েশী ভাত ঘুমের আমেজে মোবাইলের আর্তনাদে মেজাজ খারাপ করতে গিয়েও সামলে নিলাম। ‘গ্লোডেন এ প্লাসের ফোন’। মেয়েটা পড়াশুনায় গ্লোডেন এ প্লাস।

চেহারা ছবিতে হয়তো এ প্লাস। কিন্তু মানুষ হিসাবে ডায়মন্ড এ প্লাস। মানুষ এত ভাল হয় কি করে! গ্লোডেন এ প্লাসের নৌবিহার উপল্েয ওর পুরো পরিবার খুলনা থেকে ঢাকায় চলে এসেছে। এবং আমি ওদের একজন নিকটাত্মীয় হতে পারি ভেবে কর্তব্যবোধে আমাকে জানিয়েছে। আজ সকালে ওরা যে বাসায় এসে উঠেছে সেখানে আমার যাওয়ার কথা থাকলেও নিজের ওজন না কমাতে ডাকার সাথে সাথে ‘জ্বি হুজুর’ বলে হাজির হয়নি।

বিকালে ‘সকালে আসেননি কেন? এখনই চলে আসেন, একটু পরেই আমরা ঘুরতে বেরুব’ আহবানে দশ মিনিটেই রেডি হয়ে নিলাম। শেভ তিন মিনিট, দাঁত ব্রাশ একমিনিট, চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হওয়া এক মিনিট, আফটারের শেভের সাথে শার্টে হাতা গলানো এক মিনিট, আয়নার সামনে দাড়িয়ে ইন ঠিক করা এক মিনিট, চুলটুল আঁচড়ানো একমিনিট, সু পায়ে গলিয়ে লেস বান্ধা এক মিনিট। বডি ¯েপ্র বা পারফিউমের ঝামেলা আমার নেই। পছন্দ করি না বলেই ব্যবহার করি না। পুরুষের গায়ে পুরুষালী গন্ধ থাকবে, পারফিউমের নয়।

মনের মধ্যে ব্যস্ততা কাজ করলে তা শরীরেও ফুটে ওঠে। রিস্ক নিয়ে চলন্ত গাড়ির ফাঁক গলিয়ে রাপা প্লাজার সামনের রাস্তা পার হয়ে সিগনালে দাঁড়ানো নয় নম্বর পেয়ে গেলাম। ভাড়া নিয়ে ঝামেলার মত তুচ্ছতায় গেলাম না। চলে এলাম সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হলদে রঙা কোয়ার্টার গুলোতে। কাঙ্খিত বাসায় কাঙ্খিত কলিংবেলে পরপর দুবার চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

দরজা খুলে মোহনীয় হাসি দিয়ে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে গ্লোডেন এ প্লাস। মানুষের জীবনে আনন্দময় মুহুর্ত কম হলেও তা তুচ্ছ নয়। কান্ত হয়ে বাসায় এসে যদি প্রিয়মানুষটি দরজা খুলে আন্তরিক ভঙ্গিতে আহবান করে তাহলে বোধ হয় কান্তি থাকে না। মানুষ বোধ হয় এক জীবনে খুব বেশি কিছু চায় না। দরজা খুলে প্রিয়মানুষটি দাঁড়াবে হাসিমুখে এই তো এক জীবনের চাওয়া।

ভেতরে ঢুকে রুটিন আলাপ। হোস্টের সাথে পরিচয়। আমার ডাক্তারি (ইন্টানীর) খবর। রুটিন আপ্যায়ন। বিস্কিট, চানাচুর, স্পাইট।

প্রিয় পানীয়। বিস্কিট স্পর্শ করলাম না। আমি বিস্কিট বিরোধী সংঘের সক্রিয় সদস্য। পরিবারের তিন মেয়ে, বাবা মা, হোস্ট এবং আমি একুনে সাতজন। বিশাল ব্যাটেলিয়ান।

দুটো ট্যাক্সিক্যাব। বসুন্ধরা সিটি। দণি এশিয়ার বৃহত্তম শপিংমল। আগে মানুষ ঢাকায় এলে কেউ চিড়িয়াখানা মিস করত না। এখন বসুন্ধরা সিটি।

মেটাল ডিক্টেটরের ঝামেলা পেরিয়ে কৃত্রিম খেজুর গাছ। গ্লোডেন এ প্লাস এই ফাঁকে জানাল তাদের নৌবিহারেও নাকি সব গ্লোডদের ব্যাগ পত্তর সহ শরীর চেক করিয়ে তবে জাহাজে উঠিয়েছে। সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ! দেশের সেরা সন্তানদেরও আমরা সন্দেহের উর্ধ্বে রাখিনি। কারণ ওই জাহাজে যে একজন দেশ মাতৃকার সেরা সন্তান(?) কোন এক হোমড়াচোমড়া মন্ত্রী উঠেছে। তার নিরাপত্তার ব্যাপারটা তো নিশ্চিত করতে হবে।

আছো কোন দেশে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস, রোকেয়া হলের প্রাক্তন আবাসিক ছাত্রী, বর্তমানে চাকরি নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উপজেলায় অবস্থানকারিণী পরিবারের বড় মেয়ে আমাদেরকে স্কর্ট করে নিয়ে যায় ক্যাপসুল লিফটে। বিশাল ব্যাটেলিয়ানেই ক্যাপসুলের ভেতরটা ভরে যায়। বড় মেয়ের পরিকল্পনা প্রথমেই লিফট চড়ে আটতলায় উঠে চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে এক তলা তলা করে নামবে আর সেই তলার দোকানপাট দেখবে। চিড়িয়াখানায় ঘোরার মত এক মাথা দিয়ে শুরু করে শেষ করতে হবে। আটতলাতেই খাওয়ার দোকান দেখে সবাই একটু যেন বিব্রত হয়।

প্রথমে খাওয়া দিয়ে নিশ্চয় শুরু করা যায় না। খাওয়া শেষে। চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে নামতেই বিপত্তি নাকি ঘনিষ্ঠতা। মফস্বল থেকে আসা এ প্লাসের মা চলন্ত সিঁড়ি দেখেই হা হা করে ঘোর আপত্তি জানায়। গ্লোডেন এ প্লাস নিজেও অবশ্য সিঁড়ির ব্যাপারে ভীত।

কিন্তু তার এই বয়সে ভয় পেলেও তা প্রকাশ করার সংবিধান নেই। সবাই মাকে কিভাবে চলন্ত সিঁড়িতে ওঠানো যায় তাই নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের পিছনে সিঁড়ি দিয়ে নামতে চাওয়া লোকের জ্যাম লেগে গেছে। তারা মফস্বলী মানুষের কান্ড দেখে বিরক্ত এবং বোধ হয় নিজেরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে বলে আধুনিক ভেবে সুখীও। মহিলা চলন্ত সিঁড়ির দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে বেড়ালের পানিতে পা দেয়ার মত এক পা উঁচিয়ে ধরে রেখেছে এবং একটু খানি পা দিয়েই পা টেনে তুলে ফেলছে।

শেষ মেষ বড় মেয়ে স্বামী সহ দুজনে এক প্রকার জোর করে ধরেই মহিলাকে নামিয়ে নেয়। গ্লোডেন এ প্লাসের অবস্থা সুবিধের নয় দেখে আমি তাকে টেনস বোঝানোর মত করে কিভাবে পা দিতে হবে, কিভাবে সটান দাঁড়িয়ে পাশের রেলিং ধরতে হবে, কিভাবে আবার পা তুলতে হবে এসব বোঝাচ্ছি। মেয়েটির মাথায় যে খুব বেশি কিছু ঢোকেনি বুঝতে পারলাম যখন সে সিঁড়িতে নেমে রেলিংটেলিং না ধরে প্রচন্ড জোরে আমার হাত আঁকড়ে ধরে রাখে। কি যে ভাল লাগতে থাকে আমার। স্বর্গে এর চেয়ে ভাললাগার কোন উপকরণ থাকবে আমার বিশ্বাস হয় না।

কোন নিদিষ্ট কিছু কেনার না থাকায় প্রতিটি ফোরে ঘোরাঘুরি বেশ তাড়াতাড়ি শেষ হতে থাকে। কেনার থাকলে বাছগোছ করতেই বেশ দ্রুত সময় চলে যায়। গ্রাউন্ড ফোরে নেমে আবার ক্যাপসুল লিফটে উঠে গেলাম আট তলায়। খাবারের ফোরে। আমাদের চাকরিজীবী হোস্ট কফি খাওয়াবে।

কুকারসএর সামনে চেয়ারটেবিলে গোল হয়ে বসলাম। শুধু কফি তো আর খাওয়ানো যায় না। পেটিসের অর্ডার হলো। জিনিসটা মুখে দিয়ে বুঝলাম এই অখাদ্য জিনিসটা আমরা মাঝে মধ্যে তিনটাকা করে মোড়ের দোকান থেকে কিনি। এবং সেটা এর চেয়ে আরো গরম থাকে এবং তা অন্তত মুখে তোলা যায়।

এখানে এসব জিনিস নামে কাটে। ছুটির দিনে লাইন ধরে কিনতে হয়। ঢাকা হচ্ছে নামের শহর। এখানে গুনে কাটে না নামে কাটে। জিনিস ভাল হোক আর না হোক নামী দোকান থেকে কিনলেই হলো।

সসের মধ্যে ডুবিয়ে ডুবিয়ে কোনমতে পেটিসটা গলাধঃকরণ করলাম। পেটিসের চেয়ে সসটা ভাল। কফি খেতে খারাপ না তবে পরিমাণটা পরিমাণে এত বেশি যে দেখে রুচি চলে যায়। বড় কোকের এক কাপ কফি। ভাল জিনিস পরিমাণে যত কম হয় তত ভাল।

পয়সা দিয়ে কেনা জিনিস গ্লাসের তলা না দেখে ফেলে দিতে পারিনা। যদিও পয়সাটা আমার না, তবুও পয়সা পয়সাই। বসে বসে আশেপাশের স্লিভলেস, টিশার্ট পরা মেয়েদের দেখার ফাঁকে ফাঁকে গল্প বা বলা যায় গল্পের ফাঁকে দেখতে থাকি। অন্য সময় হলে হয়তো ভাল করেই দেখতাম। কিন্তু প্রিয় মানুষটি পাশে থাকলে অন্য কেউ খুব একটা গুরুত্ব পায় না।

কোন একজন গাড়িওয়ালা লোক ওদের সাথে দেখা করতে আসবে বলে তার জন্য অপো করতে থাকলাম। পৃথিবীর যত বিরক্তিকর ব্যাপার আছে তার মধ্যে অপো একটি। এমনিতে হয়তো ভালভাবে বসে গল্পগুজুব করতে করতে বেশ সময় কোন দিক দিয়ে চলে যাচিছল বুঝতে পারছিলেন না। কিন্তু দেখবেন যেই একজন আসার কথা থাকবে পুরো গল্পের পরিবেশটা নষ্ট হয়ে যাবে। অপোয় থাকতে থাকতে বিরক্তি ধরে যাবে আপনার।

আমি অবশ্য তাকে চিনি না বলে আমার অপোর প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া গ্লোডেন এ প্লাসের সাথে গল্পের সুযোগের কারণে আমি চাচ্ছি অপো আরও দীর্ঘায়িত হোক। খারাপের একটা ভাল দিক থাকবেই। রাত বাড়তে থাকে। লোক কমতে থাকে।

অপো শেষ হয় না। গাড়ি নিয়ে আসা লোকের আসার কথা থাকলে হুট করে উঠে চলে যাওয়া যায় না। গাড়ি চড়া লোকদের আলাদা একটা ব্যাপারস্যাপার আছে। ওরা একটু দেরী করেই। টাইমলি আসল্ েআর নিজের গাড়িতে আসার মানেটা হলো কি? গাড়িওয়ালা আসতে, বসতে,হাল্কা নাস্তা করতে এবং বসুন্ধরা সিটি থেকে বেরুতে পৌনে দশটা বেজে যায়।

গাড়িওয়ালা দেরীর মাশুল দিতেই কিনা জানিনা গুলশানে নিয়ে চাইনিজ খাওয়ানোর প্রস্তাব দেয়। এমন প্রস্তাব বাতিল করার প্রশ্নই ওঠে না। যদিও ভদ্রতাসুচক না না করতেই হয়। ড্রাইভারের সাথে পুরো ফ্যামিলিটাকে পাঠিয়ে এবং চাইনিজ রেস্তোরা পাড়ায় থাকতে বলে আমাদের এবারের হোস্ট ট্রাক্সিক্যাব নেয়। চাইনিজ রেস্তোরা পাড়ায় এসে মজার ঘটনা ঘটে।

গাড়ি নিয়ে সরাসরি ফিস্ট নামের বুঁফে রেস্তোরায় ঢুকে যাই। এখানকার হাব ভাব আলাদা। লিফটে উঠে সোজা চার তলার ছাদে। খোলা আকাশের নিচে হাল্কা ঠান্ডার আবেশী হাওয়ায় ভালই লাগতে থাকে। তাছাড়া ভাল লাগার উপকরণ তো আমার বিপরীত চেয়ারেই।

রাজরাণীর মত বসেছে। অন্যরা গেছে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে। হোস্ট খাবারের খোজ খবর নিতে। খবর নিয়ে এসে যে খবর দিলো তাতেই সবার খবর হয়ে গেল। খাবারের মেনুতে আছে কাঁকড়ার ফ্রাইট্রাই কিছু হবে, বেকন (শুকরের মাংস-পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার-যদিও আমি খাইনি কখনও), মাছের মধ্যে সমুদ্রের হাঙর(আর খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না কেউ-খোঁজ নিলে হয়তো জানা যেত তিমিটিমিও আছে হয়তো)।

কত দ্রুত বেরুনো যায় এরকম প্রতিযোগীতা নিয়ে সবাই বের হয়ে পড়লাম। ফাঁকের দানে হাতমুখটা ধোঁয়া হয়ে গেছে অনেকের। চাইনিজে এর জন্য আলাদা বিলের ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল। ভুং ভাং না ভুং ওয়াং রেস্টুরেন্টে যেতেও ফিরে আসলাম। অদ্ভুত ব্যাপার! ওখানে নাকি পুরুষেরা স্যান্ডেল পরে ঢুকতে পারে না।

মেয়েদের বিধি নিষেধ নেই। থাকলে মাছিও বসতো না ওখানে। স্যান্ডেল ছাড়া মহিলা হয় নাকি! আমাদের প্রথম হোস্টের পায়ে স্যান্ডেল যদিও তা অনেক দামী তা দিয়ে নরমাল দোকানের তিনজোড়া সু হয়ে যায়। কি আর করা। পাশে ডিজ্যুর নামের আরেকটাতে ঢুকে গেলাম।

রাত বেড়ে চলেছে। খিদেয় পেট চো চো করছে। নন ম্মোকিং জোনের আটজনের ব্যবস্থা করা এক কামরায় ঢুকে পড়লাম। সার্ভেয়ার সবার জন্য একটা একটা মেনু লিস্টের বিশাল বই নিয়ে আসে। ওদিকে মনোযোগ দেয়ার কোনরকম চেষ্টা করলাম না।

যশ্মিন দেশে যদাচার। ওদের সাথে এসেছি। ওরা যা খাবে তাই খাব। পাশের জনের মেনুতে যতটুকু নজর যায় তাতে বুঝলাম একেকটা খাবারের পাশে যে দাম লেখা তা আমাদের দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে অধিক। চাইনিজ মানেই স্যুপ।

সাথে এই রেস্তোরার স্পেশাল একটা ফ্রাইড রাইস। প্রণ মানে কুচো চিংড়ি। নেয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা চিংড়ির দেশের মানুষ। সারাদেশের এবং বিদেশের চিংড়ির বড় একটা অংশ যায় আমাদের ওখান থেকে।

কোরাল ফিশ। চিকেন ফ্রাই। গোল্ডেন এ প্লাসের ইচ্ছে অনুযায়ী স্প্রাইট। মিলে গেল। আমিও ওই সাদা পানীয়টা পছন্দ করি।

শেষে স্ট্রবারি আইসক্রিম। এটাও ওর পছন্দের। আমারও। আধাঘন্টাটাক সময় লাগবে জানিয়ে যাওয়ায় সবাই গল্পে মেতে ওঠে। ফেরীতে ওঠার আগে ওর মায়ের হারিয়ে যাওয়া।

অন্য ফেরীতে করে এপারে আসা, আগের গাড়ির অপো করা, গাড়িতে ওঠা এসব নিয়ে মজাদার আলাপ চলতে থাকে। চলে তর্ক। মেয়েরা বাপের প নেয়। এটাই ফ্রয়েডীয় তত্ব। মেয়েরা বাপের, ছেলেরা মায়ের প নেবে।

মহিলার প নেয়ার মত কোন ছেলেই নেই। প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গাতরে আসতে সময় লাগে না। অন্য রুমে বসা তিনটে ক্যাটকেটে টাইপের স্লিভলেস শুটকো মেয়ে বুফের বিশাল খাওয়া নিয়ে জাকিয়ে বসেছে। সেদিকে তাকিয়ে মহিলা বলে ওঠেন ‘ওই মেয়েগুলো কি ওই খাওয়া শেষ করে উঠতে পারবে? সবই তো নষ্ট করবে। হোস্ট বলে ‘নষ্ট করার জন্যই ওরা এখানে আসে।

ওদের বাপেদের এত বেশী টাকা যে ভারসাম্য রাখতে কিছুটা ওদের নষ্ট করতেই হয়। মেয়েগুলো বেশ খেয়ে চলে দেখে আমি মন্তব্য করি ‘সরু পেটে গরু ধরে। ’ আমার কথাটাতে সবাই মজা পায় বিশেষ করে আমাদের মেয়েগুলো। মন্তব্যের কারণেই বোধ হয় আমার সম্পর্কটাও এবারে খোলাসা করে ওরা। এতণে ‘মামা মামা’ চালিয়ে গেলেও জানিয়ে দেয় যে আমি মেজোমেয়ের ‘হতে পারে’ সম্পর্কের মামাশশ্বুর।

‘স্যুপ দ্য ডিজ্যূর’ দিয়ে যায়। আটজনের বড় বড় তিন বাওয়েল। ডিজ্যুর সুপের কোন বিশেষত্ব খুঁজে পাই না। ফ্যাকাশে সাদা ফার্মের মুরগীর টুকরো,সাদা কুচো চিংড়ি ,গাজর কপি লেটুস পাতা টাতা দিয়ে লবন হলুদ মরিচবিহীন এক ধরনের আধা সাদা তরল পদার্থ। কাচামরিচের পানি ও সস দিয়ে কোনমতে স্যুপটাকে চালাই।

তাছাড়া খিদেও পেয়েছে। অভ্যস্ত দুতিনজন বাদে অন্যরা স্যুপে কোন আগ্রহই দেখ্য়া না। মেজো মেয়ে তো একবার নিচু স্বরে বলেই ফেলে ‘স্যুপ দিয়ে কেমন যেন বমি বমি গন্ধ বেরুচ্ছে। ’ তিন বাওয়েল থেকে অল্প অল্প নিলেও বেশির ভাগ টুকুই পাত্রে থেকে যায়। বাকী খাবার দিতে আরেকটু দেরী হবে বলে গার্জিয়ান দুজন জানতে চায় এই থেকে যাওয়া স্যুপ কি করা হবে।

আমাদের প্রথম হোস্ট বলে ‘এগুলো সব আমাদের কেনা। ওদের বললে পাকিং করে দিয়ে দেবে। নিয়ে যাওয়া যায়। ’ মেজো মেয়েটা আবার বিড় বিড় করে ‘ওই বমি বয়ে নিয়ে খাবে কে? কর্তা জিজ্ঞেস করেন ‘এগুলো এখানে রেখে গেলে কি ওরা পরে আবার এগুলো গরম করে অন্যদের দেবে? কথাটা বোধ হয় আত্মশ্লাঘায় লাগে গাড়িওয়ালা হোস্টের। কথাটা সত্যি হলে কথার অর্থ এরকম দাঁড়ায় যে আমাদের দেয়া স্যুপটাও কারো না কারো খেয়ে রেখে যাওয়া।

তিনি প্রতিবাদের সুরে বলেন ‘না না ওটা আবার সার্ভ করবে কেন? ধরা পড়লে রেস্তোরায় উঠে যাবে না। সব হোমড়া চোমড়ারা খেতে আসে এখানে?ওটা ফেলে দিয়ে প্রতিবারই নতুন করে তৈরী করে ওরা। মহিলাটি আঁতকে ওঠে ‘এত দামী এসব খাবার ফেলে দেবে? ‘তাতো অবশ্যই। ওগুলো তো ওরা বিক্রি করে ফেলেছে। ফেল্ েদিলেই বা কি? ওদের তো কোন লোকসান নেই।

ওগুলো আমাদের জিনিস। লোকসান আমাদের। মহিলাটি বিড় বিড় করে ‘কাড়ি কাড়ি টাকা পয়সা খরচ করে লোকজন কি যে ছাই পাশ অখাদ্য গেলে খোদায় জানেন। পরের খাবারের সময়ও অবস্থা নৈব নৈব চ। ছুরি কাচি কাটা চামচ দিয়ে কি আর খাওয়া যায়! খাবার পড়ে থাকে টেবিলের পরে।

¯প্রাইট এবং স্ট্রবেরী আইসক্রিম ওই দুটোই সবাই তারিয়ে তারিয়ে খায়। পরিচিত এই খাবার দুটোই বেশি পছন্দ হয়েছে সবার। গলাকাটা বিল আসবে জানা কথা। ক্রেডিট কার্ডধারীর কার্ড হতে একটা মধ্যমমানের মোবাইল সেটের দাম চলে যায়। ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি আমার বাসার পথ ধরি।

আমার বাসার গেট আবার এগারোটায় বন্ধ হয়ে যায়। আগেই ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি যাতে কোন একটা ব্যবস্থা করে রাখে। না হলে বাসায়ই ছেড়ে দিতে হবে। মানুষের সুবিধে অসুবিধে যদি না দেখে তো সে বাসায় থাকা যায় না। মহাখালী পযন্ত রিকশায়, তারপর ফার্মগেট পর্যন্ত লোকাল বাসে।

ফার্মগেট থেকে সোবহানবাগ কলোনীর কথা বলে রিকশা নেই। গলি তস্য গলির ভিতর দিয়ে রিকশা চলতে থাকে। ছিনতাই কারীর ভয়ে জামার হাতাটাতা গুটিয়ে একটা ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে রিকশায় বসে থাকি। এই রাত বারোটায় নির্জন এই গলিতে ছিনতাই কারী জামা প্যান্ট খুলে নিলেও কেউ দেখতে আসবে না। ভালো ভাবে এলেও বিপত্তি বাঁধে কলোনীতে ঢুকতে যেয়ে।

এই রাত বারোটায়ও কলোনী গেটে বেশ লোকজন। পুলিশের পোশাক পরা অনেককে ঘোরাফেরা করতে দেখছি। গেটে এক পুলিশের পোশাকের পাল্লায় পড়ি। ছিনতাই কারী ধরলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছাব্বিশ। ছিনতাই কারীর ঘা শুকিয়ে যায়, পুলিশের ঘায়ে পচন ধরে।

ঢুকতে দেবে না। বাসা এখানে জানালে এত রাত অবদি বাইরে কি করছি হরেক জেরা। সমস্ত শরীরে হাতিয়ে চেক আপ। বাসার ঠিকানা টুকে নেয়া এবং শেষমেষ পকেট থেকে আই ডি বের করে দেখালে তবে যাওয়ার অনুমতি। এই আই ডি কার্ড জিনিসটা ঢাকা শহরে বেশ কাজ দেয়।

পাসপোর্টের মত। নিজ দেশে পরবাসী আমরা। ছাড়া পেয়ে এবং দেরী হয়ে যাচ্ছে ভেবে বাসার দিকে পা চালাতে চাইলে কৌতুহল পায়ে পাথর বাঁধে। পুলিশের এত ভীড়। ঘটনা কি! ঘটনা সামান্যই! কলোনীর আবাসিক এক সম্ভ্রান্ত(?) মহিলা তার আট বছর বয়সী টিঙটিঙে ঢ্যাঙা রোগাপটকা কাজের মেয়েকে গলা টিপে মেরে ফেলেছে।

মানুষ যেভাবে টিপে টিপে উকুন বা ছারপোকা মারে। মেয়েটির অপরাধ গুরুতর! লোকজনের কথার মধ্যে ‘স্যুপ’ শব্দটা কানে যাওয়ায় একটু চমকে উঠলাম। একটু আগে স্যুপের হাত থেকে রেহাই নিয়ে এখানে আবার স্যুপ। ব্যাপার কি! ব্যাপার তেমন কিছুৃ না-মহিলাটি কাজের মেয়েটিকে একাকী বাসায় রেখে মার্কেটে গিয়েছিল। মার্কেটিং থেকে ফিরে এসে দেখে তার ছেলের জন্য রাখা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে আনা বাটি ভর্তি স্যুপ কাজের মেয়েটি চুরি করে খেয়ে সাবাড় করেছে।

পরের ঘটনা তো আগেই বললাম! ধীর পায়ে বাসার দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফ্যাকাশে সাদা রঙা সুপের বিশাল বিশাল সব পাত্র। তাতে ভাসছে মুরগী চিংড়ি লেটুস নয়-খন্ড খন্ড করে কেটে ডুবিয়ে দেয়া মানুষের, মানুষের ছোট ছোট কচি বাচ্চার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। মানুষের মৃতদেহ। হায় স্যুপ!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।