ক্যারিয়ারের শুরুতেই হোচট খাওয়ার মত ব্যাপার ... ক্লায়েন্ট নিজ থেকেই আমাকে প্রস্তাব করে "কিভাবে জায়গা চুরি করে স্পেস বাড়াতে হয়"; বিএনবিসি কিম্বা রাজউকের ইমারত নির্মান বিধিমালা"র বিধিসমূহের ফাকফোকর দিয়ে কিভাবে "স্ল্যাব ২ ইঞ্চি ক্যান্টিলিভার করে সরকারের বা পরের জমির উপর যাওয়া যায়", "প্লটের পেছনর দিক যেহেতু সচরাচর দেখার কেউ নাই, তাই সেখানে একটু বেশি বাড়িয়ে স্ল্যাব ফেললে ক্ষতি নেই", আবার "যেখানে পাঁচতলার বেশি নির্মান করা যাবে না সেখানে কিভাবে পিছন ফিরে সাড়ে পাঁচতলা বানানো যায়" সব নিয়ম ভাঙ্গার টেকনিকাল নিয়মগুলো আমাকেই মনে করিয়ে দেয় ।
ভেবে অবাক হই, এতসব একজন নন'টেকনিকালের জানার কথা নয় । জিজ্ঞেস করলে বলে, তার বন্ধু যিনি সম্প্রতি তার বাড়ির কাজে হাত দিয়েছেন তিনি তাকে এসব জানিয়েছেন । তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো বলবেন তিনি জেনেছেন তার কন্সাল্টেন্টের কাছ থেকে । সত্যি বলতে কি, এরকম নিয়মের ফাকফোকর দিয়ে ক্লায়েন্টদের এরকম ছ্যাচরামো' করাটা মোটামুটি একটা সাধারন নিয়মের মধ্যে পড়ে গেছে আর এই ছ্যাচরামো'টাকে প্রশ্রয় দিয়ে দিয়ে একটা ভয়ংকর অস্বাস্থ্যকর শহরে পরিনত করছে স্বয়ং আর্কিটেক্ট , ডিপ্লোমা আর্কিটেক্ট, পুর'কৌশলি, ডিপ্লোমা পুর'কৌশলিরা ।
দেখনে"য়ালা সরকারী বিভাগ সমুহ আর ক্লায়েন্টদের আমি দায়ী"দোষিদের দ্বিতীয় সারিতে রাখবো ।
ষাট দশকের শুরুতে দেশে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে স্থ্যপত্য সচেতনতা তৈরী হয় ... রবার্ট বুই, ডক্সিয়েডিস এর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন আর টিএসসি"র পর লুই আই কানের শেরেবাংলা নগর, মাজহারুল ইসলাম স্যারের কাজ তখন'কার শহুরে স্থাপত্য অনুশীলনে প্রচন্ডই প্রভাব ফেলেছিলো । পরবর্তি সত্তুরের দশকে সেটা আর'ও ব্যাপকতা লাভ করে ... এবং বেশ ভালো মতোই আগাচ্ছিলো সবকিছু । অবশ্য বলে রাখা ভালো, এ সময় পর্যন্ত "স্থাপত্য" পুরো ব্যাপারটাই "উচ্চবিত্তের বিলাসীতা" বলেই পরিচিত হতে থাকে । এবং অবশ্যই আমাদের সিনিয়র স্থপতি স্যার'রা ব্যর্থ হয়েছেন বিত্ত'প্রভাব থেকে বেড়িয়ে এসে আর্কিটেকচারকে মধ্যবিত্ত এবং অবশ্যই নিম্নবিত্তের ঘরে পৌছে দিতে ।
আর তাই এখন'ও আমাদের নতুন স্থপতিদের গালি খেতে হয় "আরকিট্যাক্চার মানে ফুটানি" শুনে ।
আশির দশকে কিভাবে জানি দেশের একশ্রেনীর মানুষের হাতে বেশ কাঁচা টাকা আসা শুরু হয় । একটু "ফূটানি" করতে তাদের'ও ইচ্ছে হয় । শিক্ষার সীমাবদ্ধতা , কাচা পয়সার উষ্ণতা, সদ্য প্রতিষ্ঠিত সামাজিক অবস্থানের উৎকট প্রকাশ, সব কিছু মিলিয়ে ষোলকলা পূর্ণ এই শ্রেনীর মানুষের যখন "আরকিট্যাক্চারের ফূটানি করার খায়েস" হল তখন থেকেই পরিস্থিতি দুষিত হওয়া শুরু করলো । আর্কিটেক্ট , সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, কন্সাল্টেন্ট নিয়োগে ভালোখারাপ বিচার"জ্ঞান তাদের না থাকারই কথা, তাদের ফূটানি হলেই হল ।
আর এই সুযোগে নিয়োগ পেতে থাকে বিত্তাবস্থানে তাদের'ই কাছাকাছি থাকা কতগুলো ধান্ধাবাজ কন্সাল্টেন্ট ফার্ম ... কি আর্কিটেক্ট কি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের শিক্ষাগত দৌড়াত্ব ডিপ্লোমার ঘরে ... তাদের প্রডাকশনের সাথে পাল্লা দিয়ে অপরাপর আর্কিটেক্ট, পুর'কৌশলি'রাও পরবর্তিতে নিজেদের দুষিত করা শুরু করে । প্রতিযোগিতায় চক্রবৃদ্ধিহারে শহর জুরে, দেশ জুরে চলতে থাকে কনক্রীট"দুষন । তালে তাল দিয়ে স্রেফ ব্যাবসায় নেমে পড়া ডেভেলপার, রিয়েলস্টেট ব্যাবসায়িরাও কুরুক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পরে এসময়'ই।
যাই হোক, এই কুরুক্ষেত্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলার কিছু নেই, স্রেফ তলানী'তে এসে ঠেকেছে বেচে থাকার জন্য আবশ্যক যাবতীয় আর্কিটেক্চারাল নিয়ামকগুলো ... পরিবর্তন আনবে যে নতুন'রা ... "নিয়ম" আর সনাতনি ক্লায়েন্টের চাহিদায় "বলি" হয়ে তারাও দিন'কে দিন জড়িয়ে পড়ছে সেই সনাতনি ছ্যাচরামী'তে ।
মুক্তি কোথায় ? কবে ? কে জানে ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।