কোথাও যদি হারিয়ে আমি যাইগো কোন দিন , যেও ভুলে , আমায় যেও ভুলে
ঘড়িটা খুব আস্তে আস্তে করে টিকটিক শব্দে এগিয়ে চলছে আর সময় গুলো একটু একটু করে ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাসান সাহেব ভাবছিলেন কথা গুলো। কিন্তু টেবিল ঘড়িটা শব্দ করছে কেন আজ? এটা তো সব সময় নিঃশব্দে চলে। ঘড়ির উপর হাতটা রেখে সময়টা দেখল, রাত ১টা ৩০ মিনিট ৫ ই এপ্রিল ২০২৫।
ঘড়িটা দেখতেই হাসান সাহেব অনেক পেছনের অতীতে চলে গেলেন।
কিন্তু তার কাছে এটা কখনো অতীত হয়নি। সব সময় তার সাথে বয়ে চলছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস, পাঁচ বছরের প্রবাস জীবনের প্রথম দেশে যাচ্ছে হাসান। মনের ভিতরে চাপা কষ্ট গুলো আজ সব ছুটি দিয়ে দিয়েছে দেখা হবে মায়ের সাথে, বোনের সাথে। আর , আর কার সাথে দেখা করবে হাসান? ওকি পারবে তিন বছর যাকে অপেক্ষার প্রহর গুণিয়েছে তার সামনে দাড়াতে? তিনটা বছর পরিবারের সবার মত অপেক্ষা করে হাসানের জন্য অপেক্ষা করেছিল জুই।
কিন্তু আর পারে তার বাবা মা কে অপেক্ষায় রাখতে। বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করে সজীবকে। আজ তার ঘরের বৌ সে, যার প্রতারণায় জুই নিজের জীবনকে বিপন্ন করতে চেয়েছিল । হাসান তাকে সেখান থেকে নতুন জীবন দান করেছে। আজ তার ক্যারিয়ার এর পেছনে হাসানের অদ্দোম উৎসাহ তাকে সাহস জুগিয়েছে।
তার ভালবাসা তাকে শক্তি দিয়েছিল।
ঢাকায় ফেরার তিন দিন পর জুইকে ফোন করে হাসান । হাসান ঢাকাতে একথা শোনার পর জুই যেন শূন্যে ভাসতে লাগল। অনেক ক্ষণ চুপ করে ছিল,হাসানের ডাকে উত্তর দিল। তোমার কি একটু সময় হবে? হাসান জানতে চাইল।
কেন ? না এমনি একটু সময় হলে বিকালে শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরির সামনে এস। আমি অপেক্ষায় থাকব। অপেক্ষায় থেক আমি আসবো।
ফোনটা রেখে চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করছিল জুইয়ের । চিৎকার করতে না পারলেও চোখের পানিকে বাধ মানাতে পারেনি।
আবারো সেই অপেক্ষা আর কত জীবন আমি অপেক্ষা করব হাসান। মনে মনে বলে জুই।
সিড়িতে বসে হাসান জুই এলে কি তার অনূভুতি হবে তার চিন্তা করছিল । সেই বিকাল চারটা থেকে বসে এখানে। যদিও জুই আসবে পাঁচটা বাজে।
কিন্তু সাড়ে পাচটা বাজে জুই এখনো এলো না। তবে কি জুই আসবে না? শাহবাগের মোড়ের দিকে মানুষের হৈইচই, ভিড় আর চারদিকের গাড়ি সব থেমে। হাসান মনে মনে ভাবল হয়তো কোন দূর্ঘটনা হয়েছে কেউ মারা গেছে? নাহ দেশটার কোন পরির্বতন হলো না। বসে বসে ভাবতে লাগলো হাসান। ভিড় বাড়ছে, পুলিশ এসেছে, এখনো গাড়ি গুলো সব থেমে।
রাস্তায় যেহেতু জ্যাম জুইয়ের আসতে দেরি হবে মনে হয় , দেখে আসি কি হলো। ভিড় ঢেলে আস্তে আস্তে সামনে আগায় হাসান। ঘটনাস্থলে এসে এসে তার চোখ দুটো তার সাথে একি প্রতারণা করছে।
এ্যার্লামের শব্দে সব ভাবনা গুলোয় ছেদ পড়ে হাসান সাহেবের। সকাল হয়ে গেছে, বিছানা ছাড়তে হবে কিন্তু অতীত ? অতীত কি তার পিছু ছাড়বে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।