আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুড়ো-বুড়ি ও শেয়ালের গল্প : একটি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী লোকগল্প

শিশুতোষ যে কোন রচনা।  

অনেকদিন আগের কথা। গ্রামের এক প্রান্তে এক বুড়োবুড়ি দম্পতি বাস করতো। তাদের কোন ছেলেমেয়ে ছিল না তাই নিজেরাই কৃষিকাজ করে যা পেতো তাই দিয়ে খেয়েপরে বাচঁতো। সামনে কচুমুখি লাগানোর সময়।

বুড়োবুড়ি ঠিক করলো বাড়ির পেছনের ছোট্ট জমিতে মুখির চাষ করবে। বুড়োবুড়ি দুজনে কোদাল নিয়ে কাজে লেগে গেল। পাশের জঙ্গলের এক দুষ্ট শেয়াল সেদিন বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। বুড়োবুড়ির কচু লাগানো দেখে শেয়ালের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল। সে বুড়োবুড়ির কাছে গিয়ে বলল, তোমরা করছো কি? এভাবে লাগালে তো বড়ো হতে মেলা সময় লাগবে।

কচুমুখি একদিনে বড় করার নিয়মটাও দেখি শেখোনি! বুড়োবুড়ি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল, নিয়মটা কি? শেয়াল বিজ্ঞের মতো জবাব দিল, নিয়মটা হলো প্রত্যেক বীজের সাথে একটা করে টাকি মাছের মাথা, এক মুঠো ভাত আর একটা করে চ্যাপাশুটকি লাগাতে হবে। এমনি করে লাগালে একদিনেই দেখবে কচু কেমন বড়ো হয়ে গেছে। বুড়োবুড়ি ছিল খুব সরল প্রকৃতির। তারা শেয়ালের কথা বিশ্বাস করে তার কথামতো বাড়ী থেকে ভাত, টাকিমাছ ও শুটকি যা ছিল সব এনে বীজের সাথে লাগিয়ে খুশীমনে বাড়ী ফিরে গেল। রাত গভীর হলে শেয়ালের দল জঙ্গল থেকে এসে কচুবীজের সাথে লাগানো সব খাবার চেটেপুটে খেয়ে নিল আর শিয়ালসর্দারের বুদ্ধির প্রশংসা করতে লাগলো।

এরপর তারা জঙ্গল থেকে বড় বড় বুনো কচু উপড়ে এনে জায়গামতো লাগিয়ে চলে গেল। পরদিন ভোরে কচুক্ষেতে গিয়ে বুড়ো তো অবাক। এত বড় বড় কচু, তাও একরাতের মধ্যেই! বুড়ো দৌড়ে ছুটে গিয়ে বুড়িকে জানালো। দুজনেই শেয়ালের তারিফ করতে লাগলো। বুড়ো কাস্তে দিয়ে কয়েকটা কচুশাক কেটে বুড়ির হাতে দিয়ে বলল, আজ নতুন কচুশাকের তরকারি রাধঁবে।

আমি শেয়ালদের নেমতন্ন করে আসি। বুড়ো শেয়ালদের নতুন কচুশাক খাবার নিমন্ত্রন করতে গেলে শেয়ালসর্দার বলল, আজ থাক। তোমরাই খেয়ে নিও। বুড়ো গোসল করে বাড়ী এসে দেখে বুড়ির রান্না শেষ। দুজনে আয়োজন করে খেতে বসলো।

বাড়ীতে পালিত বেড়াল এবং কুকুরকেও ভাগ দেয়া হলো। হঠাৎ কুকুর খেতে খেতে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠলো। বেড়ালও ম্যাঁও ম্যাঁও শুরু করে দিল। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করার আগেই বুড়োর গলায় বুনো কচুশাকের কেরামতি শুরু হয়ে গেছে। বুড়িও চুলকানিতে অস্থির হয়ে জোরে জোরে চিৎকার করা শুরু করলো, ও মাগো ও বাবাগো, গলা চুলকাতে চুলকাতে মরে গেলাম গো! বুড়োবুড়ি অবশেষে বুঝতে পারলো দুষ্ট শেয়াল তাদেরকে ঠকিয়েছে ।

সবাই মিলে ঠিক করলো এর একটা বিহিত করতে হবে। দুষ্ট শেয়ালের দলকে সমুচিৎ শিক্ষা দিতে হবে। পরের রাতে বুনো কচুশাক খেয়ে বুড়োবুড়ির কি দশা হলো দেখার জন্য শেয়ালের দল বাড়ির পাশে জড়ো হলো। টের পাওয়া মাত্র আগে থেকে করা পরিকল্পনা অনুসারে বুড়ো বাড়ির উঠোনের কোণে তুলসীতলায় মরার মতো শুয়ে পড়ে থাকলো আর বুড়ি, বেড়াল ও কুকুর তিনজনে মিলে বিকট স্বরে কান্না শুরু জুড়ে দিল। শেয়ালের দল প্রথম প্রথম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও পরে কৌতুহলী হয়ে কি হয়েছে কি হয়েছে বলে উঠোনে জড়ো হলো।

বুড়োকে মরার মতো পড়ে থাকতে দেখে শেয়ালের সর্দার ভারিক্কি গলায় বলে উঠলো, হা করে দেখছিস কি? যা একটু সেবাযত্ন কর। শিয়ালের দল কাছে যেতেই হাতের কাছে লুকোনো লাঠি দিয়ে বুড়ো উঠে দাঁড়িয়ে হুংকার ছাড়লো, আমার যথেষ্ঠ সেবাযত্ন করেছো বাছারা, এবার তোমাদের একটু সেবাযত্ন করতে দাও! এই তোরা কে কোথায় আছিস? ...সংগে সংগে বুড়ি মগুর নিয়ে, বেড়াল আর কুকুর তাদের নোখ থাবা নিয়ে শেয়ালদের উপর ঝাপিয়ে পড়লো... চতুর্মুখী আক্রমন চললো, - ডুপ ডাপ! ধাম ধুম! ঠুস ঠকাস! ঘেউ ঘেউ! শেয়ালের দল কি আর সেখানে দাড়াঁয়? ঠ্যাং ভেঙে, ঘাড় ভেঙে যে যেদিকে পারে ছুট লাগালো। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা শেয়ালসর্দারের। তার লেজ ছিঁড়ে গেছে আর লেজ ছিড়ে যাওয়া মানেতো শেয়ালসমাজে ভীষন লজ্জার কথা। অপমানে দুঃখে শেয়ালসর্দার দশগ্রাম পার হয়ে বিরাট এক গর্তে সেই যে ঢুকলো, আর বেরোয়নি।

* গল্পটি ছোটদের সামহোয়্যার ইন গ্রুপের জন্য ____________________________________________ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী বাংলাদেশের প্রায় ষাট হাজার মানুষের মাতৃভাষা। এ ভাষায় যারা কথা বলে তাদের কাছে ভাষাটি ‘ইমার ঠার’ নামে পরিচিত যার অর্থ হলো ‘আমার মায়ের ভাষা’। ভাষাটির সমৃদ্ধ প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্য রয়েছে। মুলত শিশুদের বিনোদনের জন্য লোকমুখে রচিত লোকগল্পগুলো বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী প্রাচীন সাহিত্যের গুরুত্তপুর্ণ দিক। গল্পগুলো থেকে মণিপুরীদের প্রাচীন সমাজব্যবস্থা ও জীবনধারার পরিচয় পাওয়া যায়।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।