আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাপ ও পাপের সাজা



বয়স অল্প বলে কোন অশ্র আমি পাইনি,৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্বে আমি ছিলাম বার্তা বাহক। একটি সাইকেল ছিল কিন্তু গ্রামের পথে সাইকেল চালানো ছিল কষ্টসাদ্ধ তাই পায়ে হেটে কিংবা দৌড়ে বার্তা বাহনের কাজ করতাম। ক্রিকেটে পেস বলার ছিলাম তাই গ্রেনেড ছুড়বার কাজটা আমিই করতাম সবার চাইতে ভাল। যুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে, আমরা মুক্তি যোদ্ধারা বুঝতে পারছিলাম দেশ অল্প কয়দিনের মধ্যে স্বাধীন হবে। আর রাজাকারদের তৎপরতা এই সময়টাতে ছিলো ভয়াবহ,পাকিস্তানি সেনাদের ডেকে আনত আর স্বার্থ আদায়ের জন্য আঙুল দেখিয়ে লেলিয়ে দিত একে ওকে হত্যা করার জন্য।

ঠিক এমটি ঘটল আমাদের ক্যাম্পের পাশের গ্রামে। ক্ষুব ভোরে কন্না-চিৎকারের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো,আমাদের কমান্ডার পজিশন নিতে বলল। চারিদিকে আগুন আর কান্না,থেমে থেমে গুলির শব্দ,আমরা পজিশন নিলাম, সংক্ষায় ছিলাম ১৭ জন। সংক্ষায় অল্প বলে আমরা অপেক্ষা করতে থাকি অন্য আরেকটি মুক্তি দল কখন যোগ দয়, আমাদের কাছে খবর ছিল আরেকটি মুক্তি দলের ক্যাম্প আমাদের পাশের গ্রামে। আমি দৌড়াতে থাকি তারা কোথায় পজিশন নিল।

পেয়ে গেলাম তারা সংক্ষায় ৩৩। আমার কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা ফায়ার শুরু করল , আমাদের দলও ফায়ার শুরো করল,দেখি আরেকটি দল ফায়ার করছে, বুঝলাম আরেকটি দলও পজিশনে ছিলো। পাকিস্তানি সেনারা ৩ দিক থেকে আক্রমনের মুখে। ২ ঘন্টা যুদ্ব,পাকিস্তানী সেনারা গুলি থামায়,বুঝলাম তারা পরাস্থ,মুক্তি সেনাদের কেউ জখম হ্য় নি,আমি দৌরাতে থাকি পাকিস্তানি সেনারা কোন দিকে পালায় তার খবর আনার জন্য। দেখি কেউ নেই বুজলাম সব পালাচ্ছে , আমি দৌরাতে থাকি, সামনেই মোল্লার বারি , মোল্লা আমাদের যুদ্বের সময় অনেক সাহায্য সহযোগিতা করে।

তাই তার বারিতে উকি দেই, যদি কোন খবর থাকে। দেখি তার বারির সামনে পাকিস্তানি ট্রাক, ট্রাকের ভিতর লাশের স্তুপ। পাকিস্তানি সেনারা বিশ্রামের জন্য এখানে আশ্রয় নেয়। আমি পিছন দিয়ে বারিতে ঢুকি,১৭-১৮ জন হবে পকিস্তানি সেনা। আমি মোল্লাকে ডেকে বলি বারি খালি করার জন্য ,আমার কাছে দুটো গ্রেনেড আছে,তা দিয়েই সবাই কে উড়ানো যাবে।

মোল্লা আমার পায়ের উপর পরে,দোহাই তুই এ কাজ করিস না,আর পাকিস্তানি সেনারা জানতে পারলে আমার ঘর,ব্যবসা জ্বালিয়ে দিবে। আমি অবাক হই,দেশের নিরাপত্তার চইতে নিজের ব্যবসা গুরুত্বপুর্ন। মোল্লা কি পাকিস্তানি সেনাদের এলাই নাকি মুক্তি বাহিনির এলাই ? নাকি দুমুখো সাপ। নিজের স্বার্থের জন্য মোল্লা সবই করতে পারে। আজকের হত্যাকান্ড কি তারই পরিকল্পনা? মোল্লার কান্না দেখে আমার ময়া হল।

ভাবলাম দেশ তো প্রায় স্বাধীন,এই বুড়ো মোল্লা আর কি করবে?আমি ভ্য়াভয় পাপ করলাম,আর পাপের সাস্তি আজও পেয়ে যাচ্ছি। মোল্লা এখন সমাজের উচু মানুষ, তার বংশধররা আজও স্বাধীনতা বিরধী চিন্তা চেতনা লালন করে। ক্ষমাই জেন ভ্য়াবহ পাপ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।