আমার অসম্পূর্ণ জগৎ
প্রথম পর্ব
(প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কারণ প্রথম পর্বের অনেক দিন পর দ্বিতীয় পর্ব লিখছি! এতদিন এমবিএ ফাইনাল চলছিল বলে লিখতে পারি নাই)
তো কি আর করা ! আজকের রাতটা তাহলে রুমা বাজারেই কাটাতে হবে! এবার তাহলে বাসস্থান ম্যানেজের পালা। রুমা বাজারের যে কয়টা হোটেল আছে তার সবগুলোই চষে ফেললাম, কিন্তু আমাদের থাকার মত কোন রুম পেলাম না। এদিকে বিকেল হয়ে যাচ্ছে। একটা কিছু তো করতেই হবে ! শেষমেশ খুঁজে পেলাম সরকারি রেস্টহাউজ।
অনেক আশায় বুক বেঁধে গেলাম সেখানে, যদি কোন ব্যবস্থা হয় ! ওখানকার কেয়ারটেকারকে আমাদের অবস্থা বুঝিয়ে বললাম। কিন্তু উনি জানালেন যে এটা শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ। আমরা তাকে কথার মারপ্যাঁচে বুঝালাম, দেখেন আমরাও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছেলেমেয়ে, আর তাছাড়া আমরাই তো কদিন বাদে সরকারি কর্মকর্তা হব ! এভাবে অনেক সাত-পাঁচ বুঝ দিয়ে আমরা একাবারে ভিআইপি রুমটাই ম্যানেজ করে ফেললাম ! কিন্তু বিকেলের এই সময়টা কি করা যায়? আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম রিজুক ঝর্ণা দেখতে যাব। যদিও রিজুক বেশ দূরে, নৌকায় যেতে হয় তাও আমরা ডিসিশন নিলাম, যাব। ১৩০০ টাকায় রফা করে দুটো নৌকা নিয়ে আমরা সাঙ্গুর বুকে নেমে পরলাম।
রওনা দিতেই আমাদের বিকেল গড়িয়ে গেল। যেতে যেতে হারিয়ে গেলাম সাঙ্গুর দুধারের অপরুপ সৌন্দর্য্যে। আহ ! প্রকৃতি এতটা সুন্দর হতে পারে ! মাঝ পথেই সূর্্য্য হেলে পরল, আর ঠান্ডা লাগতে শুরু করল। এদিকে আমরা সব পরে আছি হাফপ্যান্ট ! কি যে একটা অবস্থা ! যা হোক প্রায় দুঘন্টা পর আমরা রিজুকে পৌছলাম (এখানে একটা কথা বলে রাখি, এখানকার মানুষের সময়জ্ঞান মাসাল্লাহ খুব ভাল ! তাদের ১০ মিনিট মানে আমাদের ১ ঘন্টা !)। কিন্তু ততোক্ষনে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
আর সে কি যে থান্ডা বাতাস ! আমাদের প্লান ছিল রিজুকে গিয়ে গোসল করব, কিন্তু ঠান্ডা দেখে আর গোসল ! জান নিয়ে ফিরতে পারলেই বাঁচি ! অবশ্য এর পরেও আমাদের দুঃসাহসী তিন অভিযাত্রী টপাটপ গোসল করে ফেললেন (একজনের জ্বরও এসেছিল) ! কিন্তু রিজুক ঝর্ণাটা এক কথায় অসাধারণ ! অনেক উপর থেকে এখানে পানি পরে আর বেশ বড়সড় বিস্তৃতিও আছে। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় বেশি মজা করতে পারিনি।
রিজুক ছেড়ে আসতে আসতে অন্ধকার হয়ে গেল, রাতের নদী, চাড়িদিকে অন্ধকার, শুনশান নীরবতা। গা ছমছম অনুভূতির সাথে ভীষন মজাও পেলাম। খুব থান্ডা লাগছিল, তাই আমরা সবাই নৌকার ভেতরে বসে চুটিয়ে আড্ডা দিলাম।
এর মাঝে আবার মাঝি ভাই পথ হারিয়ে ফেললেন! বোঝেন অবস্থা ! চারিদিকে ঘুটঘুট্টে অন্ধকার, কিন্তু আকাশ ভরা তারার মেলা ! উফ ! সে কি যে এক মহাজাগতিক অনুভূতি! তা লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব ! আকাশের বেশ কয়টি ছায়াপথ সেদিন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। সপ্তর্ষীমন্ডল, কালপুরুষ সবই সেদিন পরিষ্কার দেখতে পেলাম। আমরা যখন রুমা বাজার ঘাটে পৌছলাম, তখন রাত সাড়ে আটটা পেরিয়ে গেছে। অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা হল। সেদিন যদি বগা লেক চলে যেতাম তাহলে তো আর এ মজাটা পেতাম না ! যা হোক, রাতের খাবার খেয়ে আবার গেলাম চান্দের গাড়ি ঠিক করতে, কাল সকালে আবার ছুটতে হবে বগা লেকের উদ্দেশ্যে।
অনেক মুলামুলি শেষে গাড়ি ঠিক করার পর রুমে ফিরে বাকি রাতটা মজা করেই কাটিয়ে দিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।