আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যাকটাস...(২)



আগের পর্বের জন্য... Click This Link পাপ!...এখলাসুদ্দিন ভাবে! কত পাপ তার! আজীবনের পাপ, প্রতিদিনের নতুন নতুন পাপ, আজকে-কালকে বয়ে চলা পাপ! এখলাসুদ্দিনের জীবনটা পাপে ভর্তি, সারাদিনের শুরুতে বারান্দায় কাটানো প্রতিদিনের এই সময়টা ছাড়া। তার আত্মা পরিশুদ্ধ হয়, আবার পাপীষ্ঠ হয়, আবার শুদ্ধ হয়...আবার পাপ করে। পথের ভিক্ষুককে ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়, রিকশাওয়ালা ভাড়া একটু বেশি চাইলে তাকে স্যান্ডেল খুলে পেটায়, অফিসের সামনের পিচ্চি রফিকের চায়ের দোকানে বিনা পয়সায় সকালে দুইটা রুটি আর দুই কাপ চা দিয়ে নাস্তা করেন প্রতিদিন, লাঞ্চ আওয়ারে পাশের টেবিলের সরওয়ার সাহেবের পত্নীর রেঁধে দেয়া তরকারির প্রায় পুরোটা দিয়েই তিনি দুপুরের খাবার সারেন। ৫ টাকার ভাত আনার খরচটা তার হয় কেবল। [সরওয়ার সাহেব ভালোমানুষ, তাই আজকাল এখলাসুদ্দিনের জন্য আলাদা একবাটি তরকারি নিয়েই আসেন।

বিকেলের নাস্তা এখলাসুদ্দিন খান না, সে সময়টা এক কাপ চা দিয়ে কাটিয়ে দেন। ]...তিনি আরো পাপ করেন। অফিসের অ্যাকাউন্টে যে প্রতিমাসে বিশাল অঙ্কের টাকার হিসেবে গড়মিল হয়, এবং তা আপ্যায়ন ও বিবিধ খরচ হিসেবে দেখানো হয়, সেই টাকাটা এখলাসুদ্দিনের পকেটেই যায়। কাজটা তিনিই করছেন, সেটা বুঝতে পারার পরও তাকে কেউ জোর দিয়ে কিছু বলতে পারে না, কারণ তিনি স্বয়ং অ্যাকাউন্টেন্ট। ...প্রায় প্রতিদিন তিনি তার অর্ধেক বয়সী স্ত্রীকে শারীরিক [ এবং মানসিক!]নির্যাতন করেন।

তার তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও তার সাথে মিলিত হন। এটাও একটা পাপ, এটাকে সমাজ ধর্ষণ বলে। তিনি সন্তান ধারণে অক্ষম, কিন্তু এই অপবাদ তিনি চাপিয়েছেন তার স্ত্রীর ঘাড়ে, সমাজকে জানিয়েছেন ‘তার স্ত্রী বন্ধ্যা’, এটাও কি পাপ নয়? প্রতিদিন সকালে অফিসের যাবার জন্য তৈরি হবার সময় যে কাজের মহিলাটা ঘর ঝাড়ু দিতে আসে, তাকে দেখে যে তার সদ্য পবিত্রতা প্রাপ্ত আত্মা কামনায় কাতর হয়, সেটা কি তার দিনের প্রথম পাপ নয়? কিংবা অফিসের এক্সিকিউটিভ অফিসার মহিলাটি যখন গায়ের সাথে সেঁটে যাওয়া কামিজ পরে, ওড়না গলায় দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসেন, তখন সেই সেঁটে যাওয়া কামিজ ফেটে বের হওয়া উন্নত বক্ষযুগল দেখে যখন তার হৃদয় দারুন বেগে ‘ধুকপুক’ করতে করতে যৌনাঙ্গের ভারি ভাবটার দিকে মনোযোগী হয়, সেটাও কি পাপ নয়? কিংবা সেই মেয়েটা, যার কাছে এখলাসুদ্দিন প্রায়ই যায়, যেই বেশ্যা মেয়েটা সিনেমায় দেখে শেখা বিভিন্ন নতুন স্টাইলে তাকে রতিসুখ দিতে চায়, যেই মেয়েটা তাকে শিখিয়েছে, ‘কনডম’ ব্যবহার করতে হবে যাতে যৌনরোগ না হয়, যেই মেয়েটার কাছ থেকে শিখে আসে নতুন ‘ইসটাইল’ সে তার স্ত্রীকে দিয়ে অনুশীলন করে, সে মেয়েটি...এটাও কি পাপ নয়? চোখ বন্ধ করে আযান শুনতে শুনতে এসব ভাবেন এখলাসুদ্দিন। আযান শেষ হবার পরও কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখেন। পরিশুদ্ধির জায়গা থেকে তার ফিরে আস্তে ইচ্ছে হয় না ‘পাপ’ এর জায়গায়।

ধীরে ধীরে তিনি চোখ খোলেন। সদ্য পাপ থেকে পরিশুদ্ধি পাওয়া এখলাসুদ্দিন বারান্দায় রাখা একটা টবে আপনমনে বেড়ে ওঠা ক্যাকটাসটার দিকে তাকান। এই ক্যাকটাসের তিনি নাম জানেন না, প্রজাতি জানেন না। কোনো প্রকার ভালো লাগা থেকেও কেনেননি। একদিন রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ মনে হওয়াতে কিনে ফেলেছেন।

তাকে সরওয়ার সাহেব বলেছেন ক্যাকটাসে পানি দেবার দরকার নেই। মরুভূমির গাছ, পানি ছাড়াই তো থাকে সেখানে! তবুও এখলাসুদ্দিন মাঝে মাঝেই গাছটায় পানি দেয়। ছোট ছোট গোলাপি ফুলও হয় গাছটায়। এখলাসুদ্দিন ভাবে গাছের জন্য না হলেও ফুলের জন্য পানি দরকার! তাই তিনি ফুলকে পানি দেন। সারাদিনের পাপের যাত্রায় এটাই একমাত্র ভালো কাজ বলে তিনি ভাবেন।

তবে আজকাল এই ক্যাকটাস গাছটার প্রতি তার একটা অন্যরকম আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। তিনি এখন খুব মনোযোগ দিয়ে ক্যাকটাসটাকে পর্যবেক্ষণ করেন। আর সেই পর্যবেক্ষনের পেছনে প্রধান প্রভাবক বারান্দার বিপরীতের বাসাটার জানালায় টবে রাখা একই গাছটা! এখলাসুদ্দিনের মনে হচ্ছে ওই গাছটা আসার পর থেকে তার গাছটার একটা পরিবর্তন এসেছে। গাছটা বেশ দ্রুত বাড়ছে। এমনকি এই সপ্তাহে গাছে ফুলও ধরেছে! এক মাস আগেও গাছটার এমন জেল্লা ছিলো না।

সবচেয়ে বড় কথা, এখলাসুদ্দিনের মনে হচ্ছে গাছটার ক্রমবর্ধমান একটা ডাল যেন একটু একটু করে ওই গাছটার দিকেই এগুচ্ছে! ওই গাছের একটা ডালও যেন তাই! এখলাসুদ্দিন খুব ভালো করে খেয়াল করছেন গত সপ্তাহ থেকেই! এখলাসুদ্দিন ভাবেন, গাছের কি তবে সত্যিই জীবন আছে? এই গাছ দু’টো কি পরস্পরের অস্তিত্ব টের পেয়েছে? তারা কি একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট? পরস্পরকে কাছে পেতে চায়? চুমু খেতে চায়? মিলন চায়? এখলাসুদ্দিনের মনে হয়, একদিন সকালে উঠে তিনি দেখবেন, ক্রমবর্ধমান ডাল দু’টো একে অপরকে জড়িয়ে আছে। তাদের মিলন সম্পন্ন হয়েছে! (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।