আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলে গেলেন রবিউল হোসেন কচি...



কবে পরিচয় মনে নেই, বছর দশেক হতে পারে। কালের আবর্তে খুব বেশী নয় সময়টা, কিন্তু কিছু মানুষ পারে কাউকে খুব আপন করে নিতে। রবিউল হোসেন কচি ছিলেন সেইরকম একজন মানুষ। কিভাবে যেন খুব কাছের একজন মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। আমার অফিসে আড্ডা জমত ঘন্টার পর ঘন্টা।

কখনো দুজনেই আবার কখনো সঙ্গী জুটত। চায়ের নেশা ছিল ভীষণ। আমার দেখা অসম্ভব ভালো মানুষদের একজন ছিলেন। অমায়িক, ভদ্র একজন সজ্জন। কখনো রাস্তায় দেখা হলে দাড়িয়ে দুটো কথা না বলে যেতেন না, যত ব্যস্ততাই থাকুক।

আমাকে নামের সাথে ভাই বলে ডাকতেন। বয়সে আমার চেয়ে ২০ বছরের বড় হবেন, কিন্তু ভাই ছাড়া কোনদিন সম্বোধন করেননি। গত বছর তার প্রকাশনা স্বরাজ থেকে বের হওয়া উনিশটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হলো। আমাকে বললেন আলোচক হতে। আমি কথা বলায় নিতান্তই অপটু, তবু রাজি হয়েছিলাম তার অনুরোধে।

রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ছিলেন একজন দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা। আওয়ামীলীগের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন, কিন্তু সেই সাথে দলের ভুলের ছিলেন সমালোচকও। নোয়াখালি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি লোকমুখে শুনেছি তার মত সফল সৎ চেয়ারম্যান এযাবৎকালে আর আসেনি।

জীবন শুরু করেছিলেন বিজ্ঞাপন সংস্থায় চাকরির মাধ্যমে। একদিন অভিমাণ করে চাকরি ছেড়েছিলেন আর ওমুখো হননি। প্রেস করেছিলেন। সেটা দেখতেন। তারপর মাথায় ঢুকেছিল প্রকাশনার নেশা।

গড়ে তুলেছিলেন স্বরাজ প্রকাশনী। আজিজ মার্কেটে অফিস নিয়ে নিজের মতো কাজ করতেন। আর ছিল পর্যটন নিয়ে ভাবনা। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ নিয়ে ভাবতেন। কাজ করতেন।

শেখ হাসিনা যেদিন গ্রেফতার হলেন ১/১১ এর পর একটি চিঠি লিখে গিয়েছিলেন জাতির উদ্দেশ্যে। সেই চিঠি নিয়ে এসে কচি ভাই বললেন এই চিঠি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি কম্পিউটারে স্ক্যান করে ট্রেসিং বের করে দিলাম। উনি পরদিন ছেপে তা সারা দেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করলেন। আমরা গতবছর কয়েকজন মিলে উদ্যোগ নিলাম হেমন্তের বইমেলা করার।

কচি ভাই শুনেই তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। তার সর্বাত্মক সহায়তায় আমরা সফল ভাবে পাবলিক লাইব্রেরিতে করলাম বাংলাদেশের প্রথম হেমন্তর বইমেলা। কত স্মৃতি... কত্তো স্মৃতি... সকালে যখন শুনলাম মানুষটার মৃত্যুসংবাদ, বিশ্বাস হচ্ছিল না। বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল সদা হাস্য মুখটা। শেষ দেখা দেখে আসলাম ইন্দিরা রোড থেকে।

জানাজা পড়ে চলে গেলেন তার জন্মস্থান নোয়াখালির উদ্দেশ্যে... বড় অসময়ে চলে গেলেন রবিউল হোসেন কচি। আমাদের বড় দরকার ছিল ওনাকে এ সময়ে। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন বন্ধু...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।