শাকির হোসাইন, সুনামগঞ্জ:
এক পশলা বৃষ্টির প্রতীক্ষায় সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের প্রায় ২০লাখ কৃষক। কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে বোরো ফসলের উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন তারা। বৃষ্টির জন্য কৃষকরা হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনাও করেছেন ।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৫ অক্টোবর হতে ১৫ মার্চ পর্যন্ত বোরো চাষাবাদের সময়সীমা নির্ধারিত। চলতি অর্থবছরে জেলায় বোরো আবাদের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে।
এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় হাইব্রিড ২৮০০হেক্টর, উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ৯০০০হেক্টর, স্থানীয়জাতের ৪০০০ হেক্টর, মোট ১৫,৮০০ হেক্টর।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় হাইব্রীড ১৮০০হেক্টর, উফশী ৪৬০০ হেক্টর, স্থানীয়জাতের ৩৯০০ হেক্টর মোট ১০,৩০০ হেক্টর; তাহিরপুর উপজেলায় হাইব্রিড ২০১০ হেক্টর, উফশী ৫০০০ হেক্টর, স্থানীয়জাতের ৫০০০ হেক্টর, মোট ১২,০১০ হেক্টর।
জামালগঞ্জ উপজেলায় হাইব্রীড ২৫০০ হেক্টর, উফশী ১০,৫০০ হেক্টর, স্থানীয়জাতের ৪০০০ হেক্টর, মোট ১৭,০০০ হেক্টর।
শাল্লা উপজেলায় হাইব্রিড ২৮৯০ হেক্টর, উফশী ১৩,৯৩০ হেক্টর, স্থানীয়জাতের ২৬০০ হেক্টর, মোট ১৯,৪১০ হেক্টর।
দিরাই উপজেলায় হাইব্রিড ৩৫০০ হেক্টর, উফশী ১৭,৯৮০ হেক্টর স্থানীয়জাতের ৪০০০ হেক্টর, মোট ২৫,৪৮০ হেক্টর।
ধর্মপাশা উপজেলায় হাইব্রিড ২১০০ হেক্টর উফশী ২০,৩৫০ হেক্টর, স্থানীয়জাতের ৫৮০০ হেক্টর, মোট ২৮,২৫০ হেক্টর।
ছাতক উপজেলায় হাইব্রিড ২০০০ হেক্টর, উফশী ৬০০০ হেক্টর, স্থানীয়জাতের ৩২০০ হেক্টর, মোট ১১,২০০ হেক্টর।
দোয়ারাবাজার উপজেলায় হাইব্রিড ১৮০০ হেক্টর উফশী ৬৫০০ হেক্টর, স্থানীয়জাতের ৩২০০ হেক্টর, মোট ১১,৫০০ হেক্টর।
দনি সুনামগঞ্জ উপজেলায় হাইব্রিড ২১০০ হেক্টর, উফশী ৭৫০০ হেক্টর স্থানীয়জাতের ৪০০০ হেক্টর, মোট ১৩৬০০ হেক্টর।
জগন্নাথপুর উপজেলায় হাইব্রিড ২৫০০ হেক্টর, উফশী ৯২০০ হেক্টর স্থানীয়জাতের ৫৩০০ হেক্টর মোট ১৭০০০ হেক্টর।
জেলার মোট ১১টি উপজেলায় হাইব্রিড ২৬০০০ হেক্টর, উফশী ১লাখ ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর স্থানীয় জাতের ৪৫ হাজার হেক্টর সর্বমোট ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ফসল চাষাবাদের ল্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়েছে। ল্যমাত্রা অনুযায়ী ফসল উৎপাদন হলে ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে বলে জানায় জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি গ্রামের আব্দুল মতিন (৫৬) বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে তার ৬ কেয়ার ধানী জমিতে মৃদু ফাঁটল দেখা দিয়েছে। তিনি আর বলেন, যাদের জমির অবস্থান একটু উচুঁ হাওরে তাদের বৃষ্টি জনিত কারণে তির পরিমাণ বেশী হবে।
কারণ উঁচু জমির পানি ধারন মতা এমনিতেই কম। প্রাচীনকাল থেকেই প্রকৃতির দয়ার উপর নির্ভরশীল বৃহত্তর হাওর পাড়ের কৃষকের ভাগ্য। দূর্গম হাওরাঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত কৃষকের কাছে ব্যাপক আকারে পৌঁছেনি বিদ্যুৎ চালিত সেচ যন্ত্রের সুবিধা। হাওরের মধ্যভাগে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে স্থাপিত পল্লী বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের লম্বা লম্বা খুঁটির আকাবাঁকা লাইন রয়েছে। কিন্তু তাতে বিদ্যুত নেই।
নেই বিদ্যুত সঞ্চালনের তার।
মধন্যগর থানার বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের মীর্জাপুর গ্রামের আক্কল মিয়া (২৭) বলেন, এখন ধানের থোর বাঁধার এসময় বৃষ্টি না হলে জমির ধানে চুচা (চিটা) হবে। হাওরাঞ্চলে কর্মরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক সবুজ মিয়া বলেন, বোরো ধান পরিপতা অর্জনের সময় জমিতে প্রয়োজনীয় পানি সেচ দিতে না পারলে ফসলের ১২ টা বাজবে। ধর্মপাশা উপজেলার মধুপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, তিনি চলতি বছর ৩ হাল জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে ক্রমশ ধান গাছ লাল রং ধারন করছে।
অনেক টাকা খরচ করে কৃষকরা জমিতে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু বৃষ্টির জন্য বোরোফসল মারাত্মক তির মধ্যে পড়ে যাবে। বৃষ্টি ই কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারে।
দেশের অন্যান্য এলাকার থেকে হাওর এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ ভিন্ন। এখানে একটি মাত্র বোরো ফসল হয়।
তা কেবল প্রকৃতির অশেষ দয়ায় কৃষকের ঘরে ওঠে। হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ জমিতেই পানি সেচের পর্যাপ্ত পরিমাণ সুিবধৃা নেই। কারণ সেখানে গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যেমে সেলো মেশিন (ডিজেল চালিত ইঞ্জিন) দিয়ে জমিতে পানি সেচ দেয়া হয়ে থাকে। গভীর নলকূপ স্থাপন করা সব কৃষকের সম্ভব নয়। তাই তারা প্রকৃতির উপর নির্ভর করে জমিতে ধান রোপন করে থাকেন।
বছরের পর বছর বোরো ফসলের বীজ রোপন থেকে ফসল কেটে ঘরে তোলার সময় পর্যন্ত প্রকৃতির উপরে নির্ভর করে থাকেন কৃষক।
বৃহত্তর হাওর এলাকার কৃষকের কাছ আগাম বন্যা, খরা, , শিলাবৃষ্টি, পশ্চিমা বাঁও ( পশ্চিম দিকের বাতাস) ঝড়ো-বাতাস ইত্যাদি খুবই পরিচিত শব্দ। এদের কোন একটিও যদি তাদের কষ্টারোপিত বোরো ফসলে আঘাত করে তাহলে তাদের সুখের পায়রা দূরাকাশে হারিয়ে যায়।
শাল্লা উপজেলা সদরের সংবাদকর্মী জনি তালুকদার বলেন, শাল্লার ছায়ার হাওরে অধিকাংশ বোরো জমিতে বৃষ্টির অভাবে বড় বড় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। ধানের চারা লাল হয়ে যাচ্ছে।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এ জন্য চাষাবাদের সকল কৃষি উপকরণ নিশ্চিত ও সহজলভ্য করার দাবী জানান সরকারের কাছে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি-স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুল জলীল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বোরো ফসল উৎপাদনের ল্যমাত্রা ব্যহত হচ্ছে। অনাবৃষ্টির প্রভাব ইতিমধ্যে ফসলী জমিতে পড়েছে। পানির অভাবে বোরো ফসলের মারাত্নক ক্ষতি হবে।
বোরা মওসুমের শুরুতে কৃষক সার, বীজ, ডিজেল, কীটনাশক ফসল রাবাঁধ, কৃষিঋণ ইত্যাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটিয়েছেন এখন বৃষ্টির জন্য উৎকন্ঠিত হয়ে আছেন।
কখন তার ধানী জমি একফোঁটা বৃষ্টির স্পর্শে শীতল হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।