জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব
হ্যাঁ, সহ্য করা যায় না; কিন্তু এরপরও আমরা সহ্য করেছি। বাঙালি সহ্য করেছে। স্বাধীনতার জন্য তারা সবকিছু সহ্য করতে প্রস্তুত ছিল। আমি যদি ১৯৭১ সালে তরুণ থাকতাম, আমি পারতাম এগুলো সহ্য করতে? ভাবতেই আমার গাঁ শিউরে উঠছে।
এটিএন বাংলায় প্রচারিত "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" নামক প্রামাণ্য চিত্রটি দেখলাম।
বিদ্যুত না থাকার জন্য প্রথম থেকে দেখতে পারিনি। সত্তরের নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে দেখা শুরু করলাম। দেখছিলাম চরম কৌতুহল নিয়ে। কারণ, এ ধরনের দুর্লভ ভিডিওচিত্র-তথ্যসমৃদ্ধ কোন প্রামাণ্যচিত্র আমি আগে দেখিনি।
কিন্তু বাঙালি উদ্বাস্তুদের দৃশ্য দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছিলাম না।
এও কি সম্ভব! কি অবর্ণনীয় কষ্ট! মানুষ এভাবে ধুকে ধুকে মরেছে! পুষ্টির অভাব! খাদ্যের অভাব! বাসস্থানের অভাব! মায়ের বুকের দুধ খাবে বাচ্চা; কিন্তু মায়ের বুকে দুধ নেই। একটি কিশোরীকে দেখানো হল। যাকে উপুর্যপরি ধর্ষণের পর মাথায় গুলি করা হয়। তারপরও মেয়েটি বেচেঁ ছিল। কিন্তু চিকিৎসা গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীরা এখনো বলে থাকে যে, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয় নি। অথচ প্রামাণ্য চিত্রটিতে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক "সেভ দ্য চিলড্রেন"-এর একজন ডাক্তার '৭১-এর অক্টোবরে বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে বলেন, এ যাবৎ প্রায় ২ লাখ শিশু পুষ্টির অভাবে মারা গেছে। সেভ দ্য চিলড্রেন-এর মতে, ভারতে যে এক কোটি বাঙালি উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছিল, তার মধ্যে ৮ লাখ শিশু মারা যায় এই নয় মাসের মধ্যেই। উল্লেখ্য, "সেভ দ্য চিলড্রেন" তখন পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি উদ্বাস্তুদের সেবায় নিয়োজিত ছিল। মাদার তেরেসাও বিস্মিত হয়েছেন উদ্বাস্তু বাঙালির অসহায়ত্ব দেখে।
তিনি বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের পাশে দাড়াতে। বিশ্ব বিবেক নাড়া দিয়েছিল। কিন্তু বিবেক নাড়া দেয়নি আমাদের মুসলিম দেশগুলোর মানুষের। আমেরিকার সরকার আমাদের সমর্থন না দিলেও আমেরিকার মানুষ আমাদের পক্ষে ছিল। তারা বাঙালির জন্য টাকাও তুলেছিল।
কিন্তু মুসলিম বিশ্বের কোন সরকার তো দূরের কথা- কোন মানুষও আমাদের পাশে এসে দাড়ায়নি। এর চেয়ে কষ্টকর কথা আর কি থাকতে পারে!
ভারত-রাশিয়াকে শুধু কৃতজ্ঞতা আর কৃতজ্ঞতা। তারা না হলে আমাদের স্বাধীনতা এতটা তাড়াতাড়ি আসত না।
এটিএনকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি চমৎকার দুর্লভ ভিডিও চিত্রসম্বলিত প্রামাণ্য চিত্র আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে এই প্রামাণ্যচিত্রটি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।