আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আঁধার-কৃষ্ণ-ভ্রমর

শুকরেরও অধম....... আমি নরকের কীট

আমার বড়বোন, আমাদের পরিবারের প্রথম সন্তান, ও যখন পৃথিবীতে এল তখন ওকে প্রথম দেখায় সবাই বলল,"এত সুন্দর বাচ্চা! এতো সাক্ষাত মা দূর্গারে!"। আবার আমার ভাই যখন এল, তখন সবাই ওকে কার্তিক হয়তো বলেনি কিন্তু সবার মুখে কলধ্বনি উঠেছিল, "দেখেছিস বাচ্চাটা একদম পুতুলের মত হয়েছে, কী বড় বড় চোখ, এই ছেলে বড় হলে রমনীমোহন হবে!" আমার জন্মের সময় এতটা উচ্ছ্বাস কোন দূর্গে, কোন মহলেই হয়নি, শুধু আমার বড়বোন প্রথমবারের মতো মা দূর্গতিনাশিনী হয়ে আমাকে সত্যিকার ভালবাসাটুকু দিয়েছিল। আমাদের দেবশিশু পরিবারে আমি যেন অসুর কিংবা মূষিক হয়ে জন্মেছিলাম। কেউ আমার সাথে আমার মা-বাবার চেহারার কোন মিল খুঁজে পায়না। তাতে অবশ্য সমস্যা খুব একটা হয়নি বরং আমি খুব আদরে আদরে মানুষ হয়েছি, কিন্তু আমার ছোট্টবেলার এই জাতীয় অভিজ্ঞতাগুলো মাঝে মাঝেই মনে পড়ে।

ঐদিন ক্লাসে স্যার কি এক কারণে বলছিলেন যাদের শরীরে মেলানিন বেশি থাকে তাদের স্কিন ডিজিজ কম হয়...... আমি তখন দাঁত বের করে পাশের জনকে বলেছিলাম," সে হিসেবে আমার চর্মরোগ সবচেয়ে কম হবার কথা!" আরেকজন, যে কথাটা শুনেছিল, সে চারদিকে তাকিয়ে আবিষ্কার করে ফেলে যে আমাদের গ্রুপে আমিই হলাম সবচাইতে কালো! আসলে আজ সাদা-কালো,হলুদ-নীল কিংবা এসবের জন্য পারিবারিক বৈষম্য নিয়ে বকবক করতে বসিনি। আজ আমি নিজেকে নিয়ে গর্ব করতে বসেছি, আমার প্রেয়সী শশীকে ভালবাসার কিছু কথা বলতে বসেছি। লেখার প্ল্যানটা আসলেই এভাবে ছিলনা.....কীভাবে ছিল, ঠিক সেটাও বলতে পারব না। আমি শুধু বলতে চেয়েছি_ শশী, তুমি জানতো শচীন কর্তা কি বলেছিলেন? বলেছিলেন, "নিশীথে যাইও ফুলবনে রে ভ্রমরা নিশীথে যাইও ফুলবনে..... জ্বালাইয়া চান্দেরও বাতি, জেগে রব সারা রাতি গো, আমি কব কথা, আমি কব কথা শিশিরেরও সনে রে ভ্রমরা" বুঝলে তো গানটা? না বোঝার কিছু নেই অবশ্য, তোমার-আমার বহুদিনের দেখা হাজারো স্বপ্নের একটা রূপ এটা। ভালবাসার নন্দন কাননে আমি আমার চন্দ্রসখীর মুখ দেখে দেখে, সারা রাত্রি জেগে আমার শারদ শিশিরের সাথে কথা বলব... আর ভ্রমরা? তোর ভ্রমরাটা যে আমি সেটা বোঝাতেই তো শুরুতে গায়ের রং নিয়ে এত ক্যাচাল! আমার ধর্ম যেটাই হোক বর্ণ যে ঘোরতর কৃষ্ণ বর্ণ, তা বলতে আমার ঠিকুজি দেখতে হয় না, আমার দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

তাই আমি যে তোর কৃষ্ণ হব, এটা আর বিচিত্র কি? আমি বাঁশি বাজিয়ে তোকে উতলা করে ঘর থেকে তুলে নিয়ে আসব, আমার সাথে যতক্ষণ থাকবি ততক্ষণ তোকে ভালবাসার আগুনে জ্বালাবো, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে আবার যাবার সময় তোর শরীরে শিরায় শিরায় ঢুকিয়ে দিয়ে যাব বিরহের বিষ! তুই তখন গাইতে বাধ্য হবি: "ভ্রমর কইও গিয়া.... শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে.... অঙ্গ যায় জ্বলিয়া রে...." আবার সেই ভ্রমরকেই ডাকতে হবে তোর! আমি ভ্রমর হয়ে তোর হৃদয়ে হুল ফোটাবো,তাই আমার প্রেমে পাগল হতে তোর জন্য লাগবে না আর কোন কিউপিড... ভ্রমর হব আমি, কৃষ্ণ হব আমি; তোর জগৎ হবে আমিময়। তোমাকে ফোন করেছিলাম, বললে ফোনে চার্জ নেই। চার্জ দিতে বলায় বললে লোডশেডিং। আমি তখন বুঝি তোমার চারদিকে আঁধার ঘিরে আছে। তোমার চোখের পাতায় আঁধার, তোমার চিবুক ছুঁয়ে আঁধার, তোমার চুলের গোড়ায় আঁধার, তোমার পায়ের পাতা,হাতের চুড়ি,হাসির ঠোঁট, গালের তিল সবখানে শুধু আঁধারই আঁধার...... এবারও কি বলে দিতে হবে এই আঁধার কে? মনে হয় না, আমার চেহারার দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়..... বুঝলে বালিকা, আমি কালো বলেই তোমার কৃষ্ণ হতে পারি, ভোমরা হতে পারি, হতে পারি তোমাকে নিত্য ছুঁয়ে থাকা অথৈ আঁধার! এটাই আমার অহম যে আমি কালো, আমি তাই একত্রে হতে পারি তোমার আঁধার-কৃষ্ণ-ভ্রমর!!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।