আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অথ: প্রাইভেট কবি সমাচার

একলা হতে চাইছে আকাশ মেঘগুলোকে সরিয়ে দিয়ে ভাবনা আমার একলা হতে চাইছে একা আকাশ নিয়ে...

অতপর ঢালাও প্রাইভেটাইজেশনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তিন তরুণ স্বঘোষিত কবি। সুতরাং বিশ্ববিদ্যলয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের অতি শীঘ্রইএকটি ব্যতিক্রম ধারার একটি পোস্টার দৃষ্টিগোচর হলো। যার উপরে বড় বড় করে লেখা “প্রাইভেট কবি”। ভেতরে তাদের বক্তব্য পয়েন্ট আকারে দেয়া আছে - ১. অর্ডার অনুযায়ী রোমান্টিক, প্যাথিটিক, ড্রামাটিক, এ্যাকশনধর্মী, দুর্দান্ত ও দুর্ধষ কবিতা লেখা হয়। ২. অর্ডার অনুযায়ী প্রেম পত্র লেখা হয়।

৩. সকল ক্ষেত্রে প্রতি শব্দ দশ টাকা। পোস্টার পড়ে জন সাধারণের ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হচ্ছে। রিয়েল কবিদের হার্ট এ্যাটার্ক হবার উপক্রম। অবশ্য এসব দেখে-শুনে একদল তরুন উদ্যোক্তা একটি প্রাইভেট হার্টের হাসপাতাল আয়োজন করছে। আর এক কবি পোস্টারের নিচে লাল কালি দিয়ে লিখে দিয়ে গেল - হাজার কাকের ভিড়ে এরাও কবি, তাও খারাপ কি? মানুষ তো? প্রাইভেট কবির দল এসব দেখে শুনে মোটেও দমবার পাত্র নয়।

তারা বিশ্বায়নের স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে কাব্য সমুদ্রে বিশাল কাব্য জাহাজ নামিয়ে দিয়েছে। তাদের অগ্রযাত্রা ঠেকায় কে? ইতোমধ্যেই তারা অর্ডার পেতে শুরু করেছে । তাদের প্রথম কাস্টমার হলো তাদেরই বন্ধু শাহেদ। শাহেদ এসে “প্রাইভেট কবি”র প্রতিষ্ঠাতা কবি কামাল হোসেনকে অগ্রিম পর্যন্ত দিয়ে গিয়েছে। সে তার ছ্যাকা দেয়া প্রেমিকাকে সর্বশেষ একটি চিঠি দিতে চায়।

কামাল অর্ডার অনুযায়ী চার লাইনের একটি কবিতা লিখে দিল - আমায় তুমি বাসলেনা ভালো কারন মানিব্যাগ চিকনা রোজ রোজ চাইনিজ খাওয়া আসলেই একদম ঠিক না। শাহেদের অবশ্য আরও বড় কবিতা দেবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পকেটে টাকা না থাকায় দিতে পারল না । এদিকে প্রাইভেট কবিরাও বাকীতে কবিতা লিখতে নারাজ। সপ্তাহখানেক পার হতে না হতেই তাদের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে গেল।

এখন তাদের কলম মিনিটে মিনিটে কবিতা প্রসব করেও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এদিকে আবার কিছু সেকেলে কবি কবিতার এহেন পণ্যরূপ দেখে মন্ত্রীর কাছে গিয়ে এর প্রতিকার চেয়ে এসেছেন। মন্ত্রী তাদেরকে বলে দিয়েছেন বাজারের উপরে তো সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না; তবে তিনি দৃঢ় আশ্বাস দিয়েছেন যে - আগামী বাজেটে কবিদের উপর থেকে উচ্চহারে আয়কর আদায়ের ব্যবস্থা রাখবেন। তাতে এসব কবির সংখ্যা আপনা আপনি কমে যাবে। প্রাইভেট কবির দল এসব নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়।

তারা সবাই মার্কেটিং এর ছাত্র। তারা ডিমান্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কবিতা সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছে। মার্কেটিং এর খেলায় তাদের কাছে যে সত্যিকারের পোড় খাওয়া কবিরা পাত্তাই পাবে না, তারা তা জানে। ইতোমধ্যেই ‘অসন্তুষ্ট প্রকাশনী’র মালিক মোবারক ভাই তাদের বই প্রকাশ করে নিজেদের ধন্য করতে চায় বলে জানিয়েছেন। প্রাইভেট কবিরা ঘন্টাখানেকের ভেতরেই একটি অতিকায় বই লিখে দিল।

বই এর নাম দিল “ভালোবাসা টু দ্যা পাওয়ার ভালোবাসা”। এ ধরণের নাম দেবার একটি কারন আছে। কারণ, তারা মার্কেট সার্চ করে দেখেছে এধরনের উদ্ভট নামওয়ালা বইয়ের পাবলিক ডিমান্ড ব্যাপক। উল্লেখ্য, বইটির মার্কেট পেতে সময় লাগল না। অসন্তুষ্ট প্রকাশনী আবার তাদের বই প্রকাশ করতে চায়।

প্রাইভেট কবিরা মার্কেট রিসার্চ করে দেখেছে- মানুষ কম্পিউটার বা তথ্য প্রযুক্তির কথা শুনলে পাগলের মত ছুটে আসে। তাই এবার তারা ঠিক করেছে কম্পিউটার সম্পর্কিত ইংরেজী কবিতার বই লিখবে। বইয়ের নাম হবে “লাভ ইন্সটল এন্ড মেইনটেনেন্স”। আর কবিতা? উইন্ডোজ ইন্সটলিং ফাইলটাই একটু এদিক ওদিক করে কবিতা বলে চালিয়ে দিতে অসুবিধা হবে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।