সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত...............।
মনে করুন, আপনার তলপেটে মাত্র আধা কেজী ওজনের একটি পাথর বেঁধে দিয়ে বলা হলো, দু'দিন এটাকে এভাবেই রাখতে হবে। পারবেন? আমি অন্তত পারবো না।
অথচ, একদিন-দু'দিন নয় বরং মাসের পর মাস এই রকম ভারী একটি মাংসপিন্ডকে নিজের ভেতরে লালন করে চলেন একজন নারী! তাও কোন নিথর কোন পাথর নয়, একটি জীবন্ত সত্ত্বা, যে কীনা প্রতি মূহুর্তে সদ্য গজানো হাত-পা ছুঁড়ে জানান্ দিয়ে যায় আপন অস্তিত্ব। আপন দেহের রক্ত মাংসে বেড়ে উঠতে থাকে আরেকটা জীবন! এক প্রানের মাঝে হয় আরেকটি প্রানের সঞ্চার! কী অদ্ভুত!
হ্যাঁ, আমি একজন মা'য়ের কথা বলছি।
প্রসব বেদনায় কাতরাতে থাকা একজন নারীর পাশে কিছুক্ষন থাকলেই বোঝা যায়, কষ্ট কী জিনিস! অসহণীয় সে ব্যাথা! অথচ, অসহ্য সে বেদনা সয়ে সদ্য প্রসূত সন্তানের মুখটা এক পলক দেখে সব কিছু ভুলে যান তিনি। সাধারন নারী হতে হয়ে ওঠেন সর্বসহিষ্ণু অসাধারণ এক মা! অবিশ্বাস্য রূপান্তর!
আমার পরিচিত এক মা'কে দেখেছি আমি। চার বছর আগে একটি অসম্ভব সুন্দর সন্তানের জন্ম দেন তিনি। সুখেই কাটছিলো সময়। কিন্তু মাত্র সাত মাস পরেই সে সন্তানের বোন্ ক্যান্সার ধরা পড়ে।
দেশের নামকরা একটি শিল্পপতি পরিবারের সদস্য তিনি। সামর্থ্যের শেষ বিন্দু পর্যন্ত যুদ্ধ করার অঙ্গীকার করলেন। দেশের বাইরে নিয়ে গেলেন। ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড- কোথায় যান নি! কিছুই হলো না। সারাক্ষন ছেলের পাশে থাকার জন্য তিনি সব ধরণের অনুষ্ঠান, এমনকি পারিবারিক অনুষ্ঠানেও যাওয়া বাদ দিয়ে দিলেন।
অসহ্য বেদনায় সে নিষ্পাপ ছেলেটি বিছানায় শুতে পারতো না। মা' তাকে কোলে করে নিয়ে সারারাত সোফায় বসে থাকতেন। একটি একটি করে সাড়ে তিন বছর! গত সপ্তাহেই ছেলেটি সব ভালোবাসার বন্ধন ছিঁড়ে চলে গিয়েছে চির অজানার দেশে। সে মা’য়ের হাহাকার আমি শুনেছি। বেশীক্ষন থাকতে পারি নি।
সইতে পারিনি। তাই, চলে এসেছি।
আজকের প্রথম আলোতে এ রকম আরেকটি খবর পড়লাম। এবার, কিন্তু মা-বাবা মিলে সন্তানকে বাঁচিয়ে তুলতে পেরেছেন। একজন দিয়েছেন কিডনী, অন্যজন যকৃতের কিছু অংশ!
Click This Link
মূল খবরঃ
Click This Link
আমি বুঝতে পারি না, এতো ভালোবাসা কোথা হতে আসে? প্রথম যৌবনে আমরা যাকে হৃদয় দিয়ে বসি, যার প্রতি ভালোবাসা আমাদেরকে পরিবার-পরিজন ত্যাগে বাধ্য পর্যন্ত করে, সে ভালোবাসা ও কি কখনো মা'য়ের মমতাকে ছাপিয়ে উঠতে পারে?
আমারই এক পরিচিতা ভালোবাসার টানে ঘর ছেড়েছিলো।
আবেগের মোহে যাচাই করে নি ছেলেটি কেমন? কেন পরিবার থেকে বাধা দেয়া হচ্ছিলো তাকে? পরিবারের অসম্মান ডেকে এনে, সবাইকে ছেড়ে দিয়ে সুখি হতে চেয়েছিলো। পারেনি। আবার যখন ফিরতে চাইলো স্বাভাবিকভাবেই কেউ মেনে নিলো না। কিন্তু মা'? তিনি কিন্তু পারেন নি। ঠিকই বুকে টেনে নিয়েছিলেন।
আমি আবারো বলছি, এতো ভালোবাসা, এতো মমতা কোথা হতে আসে, আমি জানি না! নিজের শরীরের এক টুকরো অংশ বলেই কি এতো ভালবাসা?
পৃথিবীর প্রায় সব ভাষাতেই মা' ডাকটি একই রকম।
Click This Link
কেন আমি জানি না। ভাষাবিজ্ঞানীরা হয়তো ভালো বলতে পারবেন। হয়তো 'প'-বর্গের ধ্বনি শিশু আগে বলতে শিখে সে জন্যে। কিন্তু, আমি বলি, ভালোবাসার কোন দেশ-ধর্ম নেই।
আর মা' ডাকের চেয়ে আবেগ-ভালোবাসা পূর্ণ কোন শব্দ কি পৃথিবীর বুকে আজো আবিষ্কার হয়েছে? তাই বোধহয় মা' ডাকেও কোন হেরফের হয় না।
অবাধ বানিজ্যিকীকরণের এই যুগে অন্যান্য কিছুর মত ‘মা দিবস’এর ও প্রচলন শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দিনে পালন করে এই দিন।
Click This Link
কিন্তু, এতে মা'য়েদের কীবা এসে যায়। মা'য়েদের মমতা কমে না, বেড়েই চলে।
সারা বছর ধরে অতীব ব্যস্ত ছেলে-মেয়েরা কিছু ন্যাকামি-আদিখ্যেতা করে । কিছু কার্ড কিনে উপহার দেয়া হয়। তারপর সারা বছর যেই কে সেই!
আমি ভালো লিখি না। যথাযথ মাত্রায় আবেগ আমি এখানে দেখাতে পারিনি। শুধু কতকগুলো এলোমেলো বাক্যের সমাহার! কী করবো- যার সামর্থ্য যতদুর!
শেষ করছি আরেকটা গল্প দিয়ে।
অনেক আগে শুনেছিলাম। বৃদ্ধা মা’ তাঁর সন্তানের কাছে একটি জিনিসের নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন। সন্তানের দেয়া উত্তর তিনি বুঝতে না পারায় আবার জিজ্ঞেস করলেন। তৃতীয়বারে সন্তান বিরক্ত হয়ে উঠলে মা’ বললেন, “তুমি যখন এইটুকুন ছিলে, একটু একটু কথা বলতে শিখেছো, তখন দিনের দিনের পর দিন তুমি আমায় এটা ওটার নাম জিজ্ঞেস করতে। একই কথার উত্তর আমি কয়েকশত বার পর্যন্ত দিয়েছি।
প্রশ্ন নয়, বরং তোমার মুখের বুলিই আমাকে আনন্দিত করে তুলতো। আর আজ তুমি তিনবারেই বিরক্ত হয়ে গেলে?” সন্তান তখন কী বলেছিল আমি জানি না। তবে আমার কাছে কোন উত্তর ছিলো না।
শুধু মনে হয়েছিলো, 'মানুষ এতো অকৃতজ্ঞ কেন?'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।