নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
বিশ্বাস হয় না? তাহলে আসুন বুঝিয়ে বলি-
HSC পরবর্তি ভর্তি পরীক্ষার মধ্যদিয়েই বর্তমানে বিদ্যমান সিস্টেমে ছাত্রজীবনের একধরনের অবসান ঘটে। হাতে গোনা কিছু 'বোকা' ছাড়া সারাবছর কেউই টেবিলে বসেনা। যেহেতু মেধা রয়েছেই, ফাইনাল পরীক্ষার আগে একটু ঝালাই আর দেদারসে চাপা ঝাড়লে সেকেন্ড ক্লাস ঠেকায় কে? কিছু 'তুকতাক' জানলে ফাস্টক্লাশ ও আহামরি কঠিন কিছু না। ভিন্নতা আছে, তবে মোটা দাগে এ হচ্চে আমাদের Tertiary level এর শিক্ষার হাল। কলা, আইন ও সমাজ বিজ্ঞান ফ্যাকাল্টি তে অবস্থা এই, বাণিজ্য, বি্জ্ঞান বা প্রকৌশলে আরেকটু বেটার।
মেডিক্যালের দু' বছরান্তে পরীক্ষা নেয়ার রীতি সেটাকেও দর্শন বিভাগ বানিয়েছে!
ফলে ক্লাশ, বই, এসাইনমেন্ট, কুইজ, টার্ম পেপার, মিড, ফাইনাল ইত্যাদির অহর্নিশি যাতনা নয় বরং মাথার মধ্যে বাসা বাধেঁ সিট, ভালো সিট, চা দোকান, টিভি রুম, আড্ডা, টিউশনি, একটি যেন তেন হলেও প্রেম, সংস্কৃতি ইত্যাদির ঢাল বেয়ে মিছিল, মিটিং, রাংগা চোখ, চাপাতি এবং সিকি, আধুলি বা পুরুপুরি রাজাধিরাজ। এ বনের। এ হলের। এ কাহিনী আমাদের এতটাই সুপরিচিত যে ভাব সম্প্রসারন অবান্তর।
'৭৫% ক্লাশে হাজির না হলে জরিমানা ও ৬০% এর নীচে নামলে পরীক্ষা দেয়ার অযোগ্য' এ ধরনের একটি ভোতা আইন, তদস্থিত নানাবিধ ফাঁকফোকর ও নেহায়েৎ বলদ কিছিমের টিচারের বোরিং লেকচার শিক্ষার্থীকে ক্লাশে না আনার সব ব্যবস্থাই পাকাপোক্ত করে রেখেছে! পোলাপাইন যে আসে, তা তাদের দয়া বা আড্ডা মারার রাইট ভেন্যু- এটাই হয়ত কারন।
আসুন এসেসমেন্ট নিয়ে কথা বলি। এক কি বড়জোর দুটি এক্সামে কারবার ফিনিশ। সারাবছর টাংকি মেরেও ঐগুলোতে পার পাওয়া কোন ব্যাপার না। কারন প্রশ্ন ঘুরে ফিরে একই এবং একই ফরম্যাটের। এবং পরীক্ষার আগে অদ্ভুৎ একটি পি এল দেয়া হয়।
ইন কোর্স বা এসাইনমেন্ট নামে কিছু মধ্যর্বতী মুল্যায়ন চালু হলেও সামগ্রিক 'পচন' কে রক্ষার জন্য তা যথেস্ট নয়। তবে রেসপন্স ভাল। সুতরাং 'হোল সেল' কন্টিনিউয়াস বা আমেরিকান বা IBA style follow করলে যে ধবংসপ্রায় ক্যাম্পাস গুলো আবার জেগে উঠবে, একদা এখানে খুন খারাবি হইত বলে ইতিহাস চর্চা করা হবে তা হলপ করে বলা যায়।
এবার বলি- IBA র সিস্টেম টা কি? ১৯৬৬ সাল থেকে দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে সামান্যও দাগ ছাড়া কেমনে এইটা রান করছে? কি এমন যাদু? আসলে বড় কোন যাদু নাই। সিস্টেমটাও পুরানো।
ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে কপি করা। টিচারগুলাও যথারীতি.....।
BBA/MBA program এ যথাক্রমে ৪০/২০ টি কোর্স। প্রতি টার্মএ ৫টি। কতৃপক্ষ ৫টি কোর্স ও ৫ জন শিক্ষকের নাম নোটিশবোর্ডে ঝুলিয়ে খালাস।
সিলেবাস, ক্লাশ, পরীক্ষা, মুল্যায়নের দায়দায়িত্ব উক্ত টিচারের। টার্ম শেষে তিনি ছাত্রের নাম ও প্রাপ্ত লেটার গ্রেড (A, B+, B, C+, C, D+, D, F, I stands for grade point 4, 3.5, 3, 2.5, 2.0, 1.5, 1.0, Fail, Incomplete) আবার একই ভাবে বোর্ডে ঝুলিয়ে দিবেন। গড়ে ছাত্রটিকে ২.৫ পেতে হবে (২.০ হলে প্রবেশনারী আউট যাহা পরবতী টার্ম এ স্থায়ী হবে যদি না ইতোমধ্যে তা ২.৫ এর জিরো লাইন পার না হয়), নচেৎ আউট। আবার কোন একটি কোর্সে পরপর দুবার F পেলে ও আউট। সবগুলো কোর্স শেষে একটি Comprehensive exam (major arena) and Internship।
মামলা খুব সিম্পল। শুধু টিচারকে ম্যানেজ করলেই হল! আসুন 'ম্যানেজ' নিয়ে একটু আলাপ করি।
প্রথম ক্লাশেই আপনি বুঝে যাবেন 'কি করিলে কি হইবে। ' ১-৪ পাতার একটা 'কর্মপদ্বতি" প্রায় সবাঈ দেন। এতে পাঠ্যবই, লেকচার টাইটেল, মুল্যায়ন নিয়ে মোটামুটি ধারনা দেয়া থাকে।
তবে বিষয়টা অহি জাতীয় কিছু নয়। যেকোন সময় শিক্ষক পরিবর্তন করতে পারেন। মূল্যায়ন ভাগটা সবচেয়ে ফ্যানটাস্টিক! বিরাট আকারের কোন ফাইনাল পরীক্ষা গোছের কিছু সেখানে নেই। বরং প্রতিদিনই আমলনামা ভারী হতে থাকে। ফলে 'এখন বটতলায় থাকি, ফাইনালের আগে ডোরলক টান দিমুনে' জাতীয় চিন্তা করার কোন স্কোপ নেই।
সাধারনত: Quiz (noticed and surprised) 10-20%, Assignment 10-20%, Term paper 10-25%, Mid Term 20-25%, Final 20-25% ধরনের বিন্যাসই কমনলি দেখা যায়। আর প্রাপ্ত স্কোরে ফিক্সড কততে এ গ্রেড হবে সেটাও আপেক্ষিক। এভাবে ৫ জন ফ্যাকাল্টি সমানতালে ছাত্রদের ধাওয়া করতে থাকে। মাঝখানে দু একজন ফ্যাকল্টির আবার মস্তিস্কের গঠনপ্রনালী ভিন্ণ থাকা বিচিত্র কিছু না। পেন্সিলে লিখে উত্তরদান, অন্যদের এসাইনমেন্ট স্ক্রুটনী করে দেয়া, একরাতে 'জল গামছার' মার্কেটিং প্লান বানানোসহ জগতের নানান অপরিচিত পাংগা।
পরীক্ষাগুলির প্রশ্নের কোন ট্রাডিশন নেই। রচনামুলক, বইখোলা, শুন্যস্থান, টিক চিহ্ন- যেকোনটিই হতে পারে।
যাহোক ৫টি বিষয়ের কোনএকটিতেও সি বা ডি পাইলে যে ক্যারিয়ার শেষ
এটা ক্লিয়ার। বাচাঁর উপায়- লাইনে চলা। বই, ডিসকাস, রিপোর্ট, লাইব্ররী, নীলক্ষেত, ক্লাস, কুইজ- এটাই মগজের টোটাল ইস্যু।
আজ কারো কুইজ তো কারো ফাইনাল। কাল কারো প্রেজেনটেশান। বাঁচতে হলে, জানতে হবে। শিবিরের যুদ্ধ, লীগের প্রগতি, দলের ২১দফা, সমাজতন্ত্রের কাস্তের আওয়াজ কানে ঢুকেনা। আর বলা বাহুল্য, আওয়াজ টা দিবে কে? চাচা আপন প্রান বাচা!
এভাবে দিন, টার্ম, বছর শেষে গ্রাজুয়েশন ও ক্যাম্পাস ত্যাগ।
নতুন ব্যাচের আগমন। একই চক্র। পুরনো, শান্ত, সুনসান কিন্তু ব্যস্ত IBA. পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন হতে পারে, সবকটি মেডিক্যাল, সবকটি ভার্সিটি এমন হতে পারে। খুবই সম্ভব। ইচ্ছাটা করলেই হল।
গুড লাক বাংলাদেশ
পাদটিকা: কেহ ভাইবেননা যে IBA র পোলাপাইন খুব কাটখোট্টা। বরং আয়েস করে শিক্ষকদের গীবত, বিভিন্ন কোম্পানীর গুস্টি উদ্ধার মূলক টক শো, গান, বিতর্ক, পিকনিক, ইন্টারনেট, ক্যান্টিন টাইম, টিউশনি, প্রেম, বয়স্ক চলচ্চিত্র দর্শন সহ নানান কাজে সারাবছরই তারা ব্যস্ত!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।