আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন কিলোমিটার, জব্বার ভাই ও আমাদের এমপি এবং সেই দিন. . .

একমুখাপেক্ষি না হয়ে যা কিছু ভাল তা গ্রহন করা উচিৎ...

জব্বার ভাই। খুব ভালো লোক এবং বেশ মজার ও. . . মাঝেই মাঝেই আমাকে ফোন করে নানান ধরনের কথাবার্তা বলেন। মাঝে মাঝে একটু বিরক্ত হই। কিন্তু তা প্রকাশ করি না। আমি থাকি হাজারীবাগ।

২৬ শে ফেব্রুয়ারী নিরস্ত্র হাতে যখন যুদ্ধের ময়দানের আশেপাশে থেকে পালানোর জন্য প্রস্তুত, তখন হঠাৎ মোবাইলটা বেঁজে উঠলো। একি এই সময়ে জব্বার সাহেব! ফোন করার আর সময় পেলেন না! ভ্রঁ“ কুচকে যখন ফোনটা ধরলাম তখন ওপাশ থেকে জব্বার সাহেবের স্ত্রীর গলা শুনতে পেলাম। তিনি আমাকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছেন ওকে আর বাঁচানো যাবে না মনে হয়! আমি বললাম কেনো কি হয়েছে। উনি বললেন জব্বার সাহেব নাকি একটা ফিতা নিয়ে পিলখানার দিকে আসছেন। আমি বললাম, কি আশ্চর্য! সবাই পিলখানার আশেপাশের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আর জব্বার ভাই ফিতা নিয়ে. . . জব্বার সাহেবের স্ত্রী আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, সব দোষতো তোমাদের এলাকার এম. পি’র।

আমি সমস্যাটা বুঝতে পারলাম। আমাদের এলাকার এমপি (ব্যরিস্টার ফজলে নুর তাপস, ভালো লোক. . )। তিনি পিলখানার আশেপাশে তিন কিলোমিটারের মধ্যে যারা আছেন তাদেরকে স্থান ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। জব্বার সাহেবের কান্ড শুনে এবং কল্পনা করে আমার কিছুটা হাসি পেল। কল্পনা করলাম জব্বার সাহেবকে।

একটা লোক রাস্তায় ফিতা নিয়ে দৌড়াচ্ছে, দৌড়াচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে. . . ফিতা দিয়ে রাস্তা মাপছে. . . মাপার শেষে হয়তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলছে, ’ওহ্!, আর এক গজের জন্য তিন কি. মি.’ এর ভেতরে পরিনি!’ ---------------------------------------------------------------------------------- ---------------------------- -------------------------- ---------------------------------------------------------------------------------- ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৯, বেলা তিনটার পর রাস্তায় পিপড়ের মতো মানুষের ভিড় ছিলো। অনেকেই বলছিলো এই বুঝি আবার যুদ্ধ লাগলো। মানুষ ছুঁটছে জানা-অজানা গন্তব্যে। আমার বন্ধু তৌহিদের সাথে কথা হয়েছিলো মিনিট দশেক আগে। আমাদের বাসার নিচে আমরা দাড়িয়ে কথা বলছিলাম।

আরও অনেক মানুষ ছিলো। তাদের চোখে মুখে নানান ধরনের প্রশ্ন। বেলা বারোটা থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলোনা। তাই কেউই সঠিকভাবে কোনো তথ্য জানেন না। সত্যিই কি আমাদের এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে? একজন উত্তর দিলো, ”ধুর! ভূয়া খবর!” কিছুক্ষন আগে আমার ফুপাতো ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছিলো।

তিনি বলেছেন, সত্যিই আমাদের এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় মাইকিং ও করা হচ্ছে। তাই আমি বলেছিলাম কি দরকার রিক্স নেয়া! পরিস্থিতি সুবিধার না হলে আর্মিরা এটাক করতেই পারে। তৌহিদ বলছিলো কোথায় যাবো? ঢাকায়তো আমাদের কেউ-ই নেই। এলাকা ছাড়ার সময় তৌহিদের সাথে আমার আর দেখা হয়নি।

যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে ছবি তোলার চেষ্টা করছিলাম। দুটো মোবাইলে ছবি তুলেছিলাম। দুটোরই চার্জ শেষের দিকে ছিলো। আজ চেক্ করতে গিয়ে বড় বোন বলল, তার মোবাইলের সব ছবি আমার ছোটো ফুপাতো ভাইটা ডিলিট করে দিয়েছে আর আমার মেমোরি কার্ডটা হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেছে। খুব খারাপ লাগলো. . .!!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।