বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... ''এক টানে তে যেমন তেমন, দুই টানে তে প্রজা,
তিন টানে তে উজির-নাজির, চার টানে তে রাজা;''
কহেন সেই সাধুজন, যাহার সত্যিকার পরিচয় এখনো জানা যায় নাই। ধারণা করা হয় লুই পাস্তুর মহাশয় গাঁঞ্জা টানিতেন। প্রাচীন ভারতীয় সাধু-সন্যাসীরা গাঁঞ্জা সেবন করিতেন। হিমালয়ের মহামুতী বৌদ্ধ যাজকরা গাঁঞ্জা সেবন করিতেন বলিয়াও ইতিহাস রহিয়াছে। আপনারে জানিবার জন্য হয়তো সক্রেটিস মহাশয় গাঁঞ্জা সেবন করিতেন।
তাহা না হইলে কি করিয়া তিনি উচ্চারণ করিলেন "know thyself"। স্বামীজি জীবনানন্দ মহাশয় বলিয়াছেন, মানুষের আত্মা অনেকটা ক্রিস্টালের মত। আশে পাশে যাহা কিছু তাহারা দেখিতে পায়, তাহা হইতে কেবল রঙ আস্বাদন করিবার চায়। আত্মা যাহা কিছু স্পর্শ করিবে বস্তুঃত সে তাহার কেবল রঙই ধারণ করিবে মাত্র। কারণ, রঙ বড়ই শক্তিশালী, আর ক্রিস্টাল কেবল সেই রঙটাই আন্দাজ করিতে সক্ষম হয়।
রঙের আসল মাজেজা উদ্ধার করিতে পারে না। লালের নিকটবর্তী হইলে সে লালের প্রেমে পড়িবে, আর নিজেকে ভুলিয়া যাইবে। আমরা কেবল আমাদের শরীরের রঙ ধারণ করিয়াছি মাত্র আর আমাদের আত্মার অস্তিত্বের কথা বেজায় ভুলিয়া গিয়াছি। কেবল মৃতদেহ হইতে আত্মার উধাও হইবার পরে আমরা স্বীকার করিয়া লই, তাহা হইলে আত্মা'র অস্তিত্ব ছিল বলিয়া শরীরে এতো সংশয়, ভয়, তাড়না, রাগ, ক্ষোভ, হাসি-খুশি, ক্লেদ, প্রেম, প্রেরণা, উৎসাহ, আনন্দ দুলিয়া বেড়াইয়াছে। তাই আত্মা'র অস্তিত্বের কথা স্বীকার করিয়া আমাদের একটাই প্রার্থণা হইতে পারে- 'জীবে দয়া করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর'।
''
প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে ঋষি-মুনিদের গাঁজা সেবনের কথা জানিতে পাওয়া যায়। 'গাঁজা' একটি সংস্কৃত শব্দ। বাংলায় এটিকে বলা হয় গঞ্জিকা। কেউ বা বলেন সিদ্ধি। গাঁজার বৈজ্ঞানিক নাম হইল Cannabis sativa (ক্যানাবিস স্যাটিভা )।
পশ্চিমা দেশ গুলোতে ইহা মারিজুয়ানা বা মারিহুয়ানা নামেও পরিচিত। আমেরিকার রাস্তায় গাঁজা বিভিন্ন নামেই বিক্রয় হয়। গাঁজার অন্যান্য নামগুলোও বেশ মজার- পট, হার্ব, উইড, গ্রাস, উইডো, বুম, গাঁঞ্জা, হাস, মেরি-জেন, ক্যানাবিস, ব্যাবল-গাম, নরদার্ন-লাইটস,ফ্রুটি-জুইস, গ্যাং-স্টার, আফগানি, স্কাংক, ক্রোনি ইত্যাদি।
নিয়মিত এবং বেশী মাত্রায় গাঁজা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিলে গাঁজা সাইকোসিস (Ganja-psychosis) নামে একধরনের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। গাঁজা সেবনের কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেবনকারী ব্যক্তির হৃত্কম্পন বাড়িয়া যায়৷ কোমনালীগুলি(Bronchial Passages) শিথিল হইয়া বাড়িয়া যায়।
চোখের রক্ত প্রবাহের শিরাগুলি স্ফিত হইবার কারণে চোখ লাল হইয়া যায়৷ হৃত্স্পন্দন স্বাভাবিকের (মিনিটে ৭০-৮০বার) চাইতে বাড়িয়া যায়। তখন গাঁজা সেবনকারীর শরীরে এক ধরনের পুলক অনুভূত হয়। বর্তমানে অবশ্য গাঁজার তান্ত্রিক ব্যবহারের চাইতে মাদক হিসেবে ব্যবহারই বেশি জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বৃদ্ধি করিয়াছে।
গোটা আমেরিকার প্রায় এক তৃতীয়াশ মানুষ গাঁজা সেবন করিয়া থাকে। যদিও আমেরিকায় গাঁজা একটি অবৈধ মাদকদ্রব্য হিসেবে বিবেচিত।
কিন্তু আমেরিকার মানুষ এই নিষিদ্ধ জিনিসটির প্রেম হইতে কখনো দূরে সরিয়া যায় না। প্রতি বছর আমেরিকার কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বড় গাঁজা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁজা উৎসবে প্রায় ১০, ০০০ লোক জমা হইয়াছিল। আর ২০১১ সালে প্রায় ১৫,০০০ লোক ওই উৎসবে গাঁজা সেবন করিয়াছে। যদিও আমেরিকায় গাঁজা আইনগতভাবেই নিষিদ্ধ।
কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করিয়া আমেরিকায় বাৎসরিক গাঁজা উৎসব পালিত হইয়া আসিতেছে।
আমাদের বাংলাদেশেও সারা বছর বিভিন্ন মাজার বা সাধু-সন্তদের আখড়ায় গাঁজা উৎসব পালিত হয়। যদিও আইনগত ভাবে বাংলাদেশেও গাঁজা একটি নিষিদ্ধ মাদক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আইনের উর্ধ্বে উঠিয়া মাজার-আখড়ায় গাঁহা উৎসব পালিত হইতেছে। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শেষ শুক্রবার বাৎসরিক গাঁজা উৎসব পালিত হয় বগুড়ার মহাস্থানগড়ে।
ওই উৎসবে ৪০ মন পর্যন্ত গাঁজা খাওয়া হয় বলিয়া খবর রহিয়াছে। সিলেটের শাহ জালালের মাজারের বাৎসরিক ওরসে ভক্তদের প্রচুর গাঁজা সেবনের প্রচলন রহিয়াছে। কুস্টিয়ার লালন মেলায় বিশেষ করিয়া মহামুনি লালনের জন্ম ও মৃত্যু দিবস উপলক্ষে সাধুসন্ত ও ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনায় গাঁজা মেলা অনুষ্ঠানের রেওয়াজ রহিয়াছে। রাজশাহী শহরের অদুরে খেতুরের মেলাও গাঁজা সেবনের জন্য বিখ্যাত মেলা। জামালপুরের ইসলামপুরের কামালের মাজারে প্রতি বছর এক মাস ব্যাপী গাঁজা মেলা অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে।
সারা দেশ থেকে তখন সাধুসন্ত ও ভক্তরা গাঁজা সেবন করিতে কামালের মাজারে হাজির হয়। আমার বন্ধু মুকুল আর আমি একবার কামালের মেলায় অংশগ্রহন করিবার সুযোগ করিয়াছিলাম। সেখানে হাজার হাজার মানুষ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হইয়া গোল হইয়া বসিয়া ব্যাপক আমুদের সহিত গাঁজা সেবন করিয়া থাকে। আপনি যতো গাঁজা সেবন করিতে চান সবই বিনামূল্যে করিতে পারিবেন। শুধু সঙ্গে করিয়া আনিতে চাহিলে খরিদ করিবার নিয়ম।
কামালের মাজারের একপাশে কেহ সিজদা করিতেছে, কেহ গান গাহিতেছে, কেহ বা নাচিতেছে, পুরুষ-মহিলার কোনো বালাই নাই। কেবল কেহ যদি ছবি তুলিতে উদ্দত হয় তাহা হইলে সামান্য ব্যাঘাত ঘটিবার আশংকা থাকিবে। সেখানে একপাশে মহা ধুমধামের সঙ্গে রন্ধন প্রক্রিয়া চলিতেছে। খিচুরি রান্না হইতেছে। যাহার ক্ষুধা লাগিতেছে সে উহা ভক্ষণ করিয়া লইতেছে।
টাকা পয়সার কোনো ব্যাপার নাই। নাচা-গানা-গাঁজা সেবন-খিচুরি ভক্ষণ সবই বিনামূল্যে ঘটিতেছে। কেবল ভক্তরা যে যতোটুকু পারিতেছে মাজারের দানবক্সে উদার হস্তে দান করিতেছে। কামালের মাজারে মাস ব্যাপী গাঁজা মেলায় অন্তঃত কয়েক শো মণ গাঁজা সেবন করা হইয়া থাকে। অথচ বাংলাদেশে আইন মহাশয় বলিতেছে গাঁজা সেবন করা অবৈধ আর ইহা একটি মাদক।
যত্তোসব গাঁজাখুরি নিয়ম কানুন।
গাঁজার মূল নেশা উদ্রেককারী উপাদান হচ্ছে ডেল্টা-৯-ট্রেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (delta-9-tetrahydro cannabinol), যাহা সংক্ষেপে THC নামে পরিচিত৷ এই টিএইচসি'র পরিমাণই ব্যবহারকারীর নেশার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করিয়া থাকে। গাঁজা গাছের পাতা শুকিয়ে তৈরি করা হয় সিদ্ধি। সিদ্ধি হইতে অন্যান্য উপাদান মিশাইয়া ঔষধ তৈরি করা হয়। এছাড়া সিদ্ধি মুখে পুরিয়া চিবাইয়া অনেকে নেশা করিয়া থাকে।
গাছের আঠা থেকে চরস তৈরি হইয়া থাকে। অনেক সময় গাঁজার ফুল শুকানোর সময় যে গুঁড়া উৎপন্ন হয়, তাহা আঠার সাথে যুক্ত করিয়া চরস তৈরি করা হয়। হয়ে থাকে। অনেক সময় এই আঠা পাওয়ার জন্য গাঁজার গাছ কাটিয়া দেওয়া হয়।
গাঁজা শরীরের বিষ-ব্যথা সারায়।
ভারতবর্ষের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় চিকিৎসাশাস্ত্রেও এই কথার বর্ণনা রহিয়াছে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ও আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখিয়াছেন যে, ভাং ও গঞ্জিকা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি তামাক পাতায় প্রস্তুত সিগারেট পানের চাইতে কম। প্রাচীন কাল থেকে গাঁজা সারা দুনিয়ায় একটি বহুল ব্যবহৃত মাদক হিসেবে পরিচিত। কম মুল্য এবং সহজলভ্যতার কারনে নিম্ন আয়ের নেশাখোরদের মাঝে ইহা অত্যন্ত আদরনীয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মাদক হিসেবে গাঁজা নিষিদ্ধ৷ সম্প্রতি কানাডা, নেদারল্যান্ডস এবং ইসরায়েলসহ কিছু দেশে ওষুধ হিসেবে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যেও ওষুধ হিসেবে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷
মদ-নারী-গাঁঞ্জা, একসঙ্গে নিয়ে কোনো প্রজা, করেন যদি স্ফূতি মজা, আইনের চোখে সে, ধরা পড়িলে খাইবেন ভারী সাজা।
অপরাধের সঙ্গে নেশার একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রহিয়াছে। সে কারণে, অনেকে গাঁঞ্জাখোরদের সরাসরি অপরাধীদের দোষর হিসেবে একই কাতারে হিসেব করিয়া থাকেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হইল, গাঁঞ্জার ব্যবসায়ীক নিয়ন্ত্রণ অপরাধীদের হাতে চলিয়া যাইবার পর হইতেই সমাজের চোখে ইহা একটি খারাপ মাদক হিসেবে পরিচিতি পাইয়াছে। সমস্যা কিন্তু গাঁজায় নহেম, সমস্যা হইল আইন শৃঙ্খলায়। অপরাধী গাঁজার ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণভার কব্জা করিয়া সমাজের চোখে আইনের কাছে গাঁজাকে নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য হিসেবে বিবেচনার সুযোগ করিয়া দিয়াছে।
অপরাধী'র সঙ্গে গাঁজার একটি সরাসরি সম্পর্ক থেকেই এই ধারণার উৎপত্তি। কিন্তু সাধুসন্ত-সন্যাসীরা কি কেউ অপরাধী? তাঁহারা কি গাঁজা সেবন করেন না? তাহা হইলে গাঁজার সঙ্গে অপরাধ এবং নিষিদ্ধ ব্যবহার আসিল কেমন করিয়া? আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করিতে ব্যর্থ হইয়া রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের শাসককূল সম্মিলিত ভাবে যাহারা ওইসব অপরাধীদের প্রশ্রয় বা আশ্রয় দিয়া থাকে, তাহারা আবার সুযোগ মত অপরাধী হইতে সুযোগ সুবিধা আদায় করিয়া থাকে বা আড়ালে আবডালে অপরাধীকে লালান-পালন করিয়া থাকে, ভোট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, চুরি-ডাকাতি, খুন, গুম, রাহাজানি, ইত্যাদি অপকর্ম করিবার জন্য অপরাধী চক্র কোনো না কোনো ক্ষমতাবান ব্যক্তির আশ্রয়ে লালিত হইয়া থাকে। সেই সব অপরাধীরা গাঁজাকে মাদক হিসেবে অপব্যবহার করিয়া সমাজে চোখে ইহাকে নিষিদ্ধ মাদক হিসেবে পরিচয় করিয়াছে। সমস্যা গাঁজায় নহে, সমস্যা অপরাধী, তার আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ রাষ্ট্রের অপকর্মের ফসলে। সেই দোষ খামাখা গিয়া গাঁজায় আশ্রিত হইয়াছে।
ইহা যেনো যিনি পাপ করিলেন, তাহার কোনো অপরাধ নেই, যিনি পাপের সঙ্গে গাঁজাকে জড়াইলেন, তাহার নহে, সকল দোষ ওই গাঁজার। কি গাঁজখুরি যুক্তি। তাই গাঁজা একটি নিষিদ্ধ মাদক হইলেও বাংলাদেশের তথা বিশ্বের সর্বত্র ইহা অত্যন্ত সুলভে বা দুর্লভে পাওয়া যায়। টাকা হইলে সকল দুর্লভ সুলভ হইবার নিয়ম সমাজে। আহা সমাজ আমার, সব কিছু হজম করিবার শক্তি রহিয়াছে এই সো কলড সমাজের।
বাংলাদেশের নওঁগা জেলায় সমবায় সমিতির মাধ্যমে সরকারী নিয়ন্ত্রণেই এক সময় গাঁজার চাষ হইত। বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ওখান থেকে গাঁজা সংগ্রহ করিয়া পৌঁছে দিতেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গঞ্জিকাসেবীদের কাছে ৷ বাংলাদেশের কুস্টিয়া, যশোর, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁ, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষিরা, নরসিংদি, কুমিল্লা, ফেনি, নোয়াখালী ও তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক গাঁজার চাষ করা হয়। যদিও বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে গাঁজার উত্পাদন ও বিপণনের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়৷ কিন্তু দেশ গাঁজার চাষ বন্ধ হইয়াছে এবং বিপণনও বন্ধ রহিয়াছে এমন খবর সরকারি ভাবে কেহ অস্বীকার করিতে পারিবে না। তাছাড়া ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যাণ্ড, হংকং, সিঙ্গাপুর, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, কলাম্বিয়া, ব্রাজিল, ম্যাক্সিকো, চিলি, আর্জেন্টিনা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, পানামা, তুরস্ক, দুবাই ও মিডলিস্টের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে অবাধে গাঁজা প্রবেশ করছে। বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বডার সিকিউরিটি ফোর্স, পুলিশ এবং আনসারের শক্তিশালী নেটওয়ার্ককে ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত ক্রোস করে নৌপথে, স্থলপথে অথবা আকাশপথে বাংলাদেশে গাঁজা প্রবেশ করিতেছে।
কেহ কেহ বলিয়া থাকেন বাংলাদেশ নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্যের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। বাংলাদেশের বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা এবং অপরাধীরা এইসব চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় যাহারা নিয়োজিত তাহাদের খুশি করিয়া বা ভাগ দিয়াই তাহারা এই অপরাধ ব্যবসা করিতেছে। আর সকল দোষ গিয়ে নিক্ষিপ্ত হয় বেচারা নিরিহ গাঁজা সেবীর উপর। প্রকাশ্যে গাঁজা খাইলে আইনের চোখে কেবল সেই অপরাধী।
এখন দেশে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবনের দায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেবার বিধান রহিয়াছে। যে কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালত কোনো গাঁজা সেবনকারীকে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবনের দায়ে এই দণ্ড প্রদান করিতে পারেন। অতএব সাধু সাবধান।
গাঁজা সাধুসন্তদের জিনিস। গুরু-সন্যাসীদের আহার।
তাহার সঙ্গে অপরাধ জগতের সম্পর্ক গড়িয়া উঠয়াছে রাষ্ট্রের সকল আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়েই। আর সেই সুযোগে সুশীল সমাজ বলিয়া উঠিয়াছে গাঁজা একটি নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্য! তাহা হইলে বাংলাদেশে প্রতি বছর কয়েক শো মণ গাঁজা কিভাবে সবার চোখের সামনে সেবন হইয়া থাকে। গাঁঞ্জা উৎসব তো বন্ধ হয় নাই। গাঁঞ্জা সেবন তো বন্ধ হয় নাই। আইন শৃঙ্খলা তো দমন হয় নাই।
তাহা হইলে সকল দোষ গাঁজার উপর দেয়া কি ঠিক হইতেছে গুরু মহাশয়?
একথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে, বাংলাদেশেন তরুণ সমাজের একটি বিশাল অংশ নিষিদ্ধ মাদক সেবনের দিকে ঝুঁকে পরিয়াছে। কিন্তু তাহার জন্যে গাঁজাই একমাত্র দায়ী নহে। দায়ী আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতা, সমাজের চাহিদা পূরণে শাসকের ব্যর্থতা, কর্মসংস্থানের অভাব, সংরক্ষিত জোনে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদনের ঘাটতি, সর্বপরি আইনের শাসেনর অভাব। আমার ধারণা, সিগারেটের মত গাঁজা উন্মুক্ত করিয়া দিলে আমাদের দেশে অপরাধ আরো কমে যাবে। শুধু সংরক্ষিত জোনে গাঁজা সেবন করা যাবে রাষ্ট্র এমুন আইন করিয়া দিলে অন্তঃত সাধুসন্ত-সন্যাসীরা এই দায় থেকে মুক্তি পাইতে পারেন।
অপরাধী আর গাঁজা সেবী মোটেও একই ব্যক্তি নহে। এই কথা সবার আগে ভাবিয়া দেখার প্রয়োজন রহিয়াছে। নতুবা হুমকির মুখে নিপতিত হওয়া আমাদের তরুন সমাজকে বাঁচানো ভবিষ্যতে আরো কঠিন হইয়া যাইবে। তাই যতোই দিন যাইতেছে ততোই দুঃচিন্তায় ভূগিতেছেন আমাদের মহামান্য অভিভাবকগন। মাদকের কারনণ নষ্ঠ হইতেছে ছাত্র সমাজ।
নষ্ট হইতেছে রাষ্ট্র। মাদক আর গাঁজাকে, সাধুসন্ত-সন্যাসী আর অপরাধীকে এক করিয়া ফেলার মানসিকতা হইতে আমরা যতোদিন মুক্ত হইতে না পারিব ততোদিন সমাজে, রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অপরাধীরা নিরাপদে অপরাধ করিয়া অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাইয়া আরমসে ছড়ি ঘুরাইয়া ঘুরিয়া বেড়াইবেন। তাহাতে গাঁজা সেবন বন্ধ হইবে না। অপরাধও বন্ধ হইবে না। তরুণ সমাজকেও রক্ষা করা যাইবে না।
দিনে দিনে দেশ কেবল এক মহা অমানিশার ঘোর অন্ধকারে হুবডুবু খাইবে। আর আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নামে অপাত্রে যত্রতত্র দণ্ড বর্ষিত হইবে। সাধুসন্তদের গাঁজা সেবনের অমূল্য আত্মশুদ্ধি'র পথ তাহাতে কেবল বিঘ্নিতই হইবে বরং সমাজের কোনো উপকার হইবে না। অত্রএব সাধু সাবধান।
গাঁঞ্জানং স্মরনং গুচ্ছতি... অপরাধনং ঘরনং পুচ্ছতি...
দেশমার্তৃকানং সেবানং তুচ্ছতি...উষাতি সূর্য সন্ধ্যামি অস্তাগামি উচ্ছাদি ইচ্ছাদি..নমোঃ নমোঃ
!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।