ফুটফুটে সতেরো বছরের টিনএজ তানিয়া ঘরময় ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে। ভীষন দুরন্তপনা মেয়েটির, যেকোন তু্চ্ছ কারনেই বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে,-যেমন এই মুহূর্তে সে সবাইকে ব্যস্ত করে ফেলেছে ওর নীল ম্যাচিং ওড়নাটা খুঁজে দেবার জন্য।
'অন্য একটা পরলেই পারিস',ওর মায়ের এই যুক্তি হাওয়ায় উড়িয়ে দিলো সে।
-'উহু,আমার ওটাই লাগবে। '
'এই তাকে দেখেছিস ?'
'দেখেছি ,ওখানে নেই।
'
-'দাঁড়া,আমি যদি এবার পাই,তাহলে.....'কথা অসমাপ্ত রেখেই হাত চালায় তরু।
চরম অগোছালো মেয়েটার সবকিছু,গজগজ করতে করতে একরাশ কাপড়ের ভেতর থেকে শেষপর্যন্ত ঠিকই মেয়ের কাঙ্খিত বস্ত্রখন্ডটি আবিষ্কার করে সে,-'এবার?...'
মায়ের বক্রোক্তি থোরাই কেয়ার তানিয়ার। দোপাট্টা ঝুলিয়ে সে টেবিলে এসে বসে নিজাম সিরাজী সাহেবের পাশে। সিরাজী সাহেবের নয়নমনি তার এই একমাত্র নাতনীটি। তার যাবতীয় আবদার শোনার ও মেটাবার 'গুরুদায়িত্ব' এই পরিবারে একমাত্র তাঁরই।
চূড়ান্ত খেয়ালি যেসব আইডিয়া আর কারো কাছেই পাত্তা পায় না ,সেসব এই দাদু-নাতনী মিলিতভাবে বাস্তবায়ন করে।
আজ তাই গোপন কথাটা তাঁর কাছেই পাড়ল তানিয়া।
জান,দাদু আজ আমরা শাহবাগে যাচ্ছি। ওই যে রাজাকার কাদেরের বিচারের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে ওখানে। নাতনীর কথাই চাপা তীব্র অনুভূতি জাগে নিজাম সিরাজীর মনে
-'কেন?তুই ওখানে গিয়ে কি করবি?'
'আমরা সব ফ্রেন্ডরা মিলে আন্দোলনে যাচ্ছি,কসাই রাজাকারটার ফাঁসি চাই আমরা।
'কাদের মোল্লার প্রতি তীব্র ঘৃণা তানিয়ার চোখেমুখে।
জোরালোভাবে জীবনে প্রথমবারের মতো নাতনীকে বাধা দেন সিরাজী সাহেব।
ভীষন অবাক তানিয়া প্রশ্ন করে,'কেন দাদু,তুমি কি চাওনা সব শয়তান রাজাকারগুলোর বিচার হোক?'
নাতনী প্রশ্নবানে খুব অসহায় বোধ করেন এন . এস. গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টীজের চেয়ারম্যান সিরাজী সাহেব। তাঁর প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মী সিরাজী সাহেবের সামনে কোন ভুল করে ধরা পড়লেও এতটা অসহায়ত্ব বোধ করে না।
দ্বিপক্ষীয় গোপনীয়তা চুক্তির চরম লঙ্ঘন করে নিরুপায় সিরাজী সাহেব পুত্রবধূ তরুকে দিয়ে তানিয়াকে নিরস্ত করার চেষ্টা করলেন।
কিন্তু তরুর সস্নেহ প্রশ্রয়ে দাদু -তানিয়া উভয়েই যারপরনাই অবাক হলো।
'যাচ্ছে যাক,বদমাশগুলোর আসলেই বিচার হওয়া দরকার। '
'কিন্তু,এসব মিছিল মিটিং এ কতো বিপদআপদ হতে পারে.....। 'নানা যুক্তি দেন সিরাজী সাহেব।
'কিছু হবে না বাবা।
আপনি টেনশন করবেন না। কতমানুষই তো যাচ্ছে। ওরাবন্ধুরা মিলে যাচ্ছে ....যাক। '
তানিয়া সদলবলে প্রস্থান করলে বুকে অজানা চাপ অনুভব করেন সিরাজী সাহেব। পুরানো ইতিহাস ভেসে ওঠে তার সামনে।
শান্তিকমিটির দলের এক ধামাচাপা পড়া নাম সিরু রাজাকার থেকে গন্ডগোলের বছরের লুটপাটের টাকায় এখন সে ইন্ড্রাস্টিয়ালিস্ট নিজাম সিরাজী হয়েছে পিছনের সব স্মৃতিচিহ্ন নিঃশেষে মুছে ফেলে। এখন পালের গোদাগুলো সাথেসাথে যদি তাঁদের পুরানো কীর্তি সবার সামনে চলে আসে-তরুর -তানিয়ার?শীতের সকালেও ঘামের সরু ফোঁটার কপাল বেয়ে ঝরে পড়া টের পান সিরাজী সাহেব। কারো কাছেই এই অতীত প্রকাশ পাওয়া চলবে না কিছুতেই-কোনমতেই। নিজেরই ভুলে যাওনা পিছুস্মৃতি তানিয়ার তীব্রস্বরের সাথে সিরাজী সাহেবের কানে বাঁচতে থাকে,'দাদু,তুমি কি চাওনা সব শয়তান রাজাকারগুলোর বিচার হোক?'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।